ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী চিনিকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয়

ঋণের বোঝা ৩শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৮ নভেম্বর ২০১৫

ঋণের বোঝা ৩শ’ কোটি টাকা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ মৌসুমের সঠিক সময়েই এবার রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর ওপর বিগত বছরের প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা রয়েছে। ঋণের বিশাল বোঝা সামলানো আর আখের যোগান নিয়ে শুরুতেই চিন্তিত চিনিকল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী চিনিকল সূত্র জানায়, এ বছর চাষীরা মিল জোন এলাকায় ২০ হাজার একর জমিতে আখ চাষের টার্গেট নিলেও উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৫ একর জমিতে। আর আখের লক্ষমাত্রা ১ লাখ ২০ হাজার মে. টন। আর এবারের চিনি আহরণের অনুপাত ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মিলগেটে প্রতিমণ (৪০ কেজি) আখের দাম ১শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। তার পরেও আখের প্রাপ্যতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একদিকে আখের চাষ কম হওয়া, অন্যদিকে কৃষকদের আখ সরবরাহে অনীহার কারণে চিনিকল নির্ধারিত দিন পর্যন্ত চলবে কি না এ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা সন্দেহ। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি এ মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চেষ্টা চালানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখনও মিলে মজুত রয়েছে ৫ হাজার ১৫৫ মে. টন চিনি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। শুধু গত বছরই (২০১৪-২০১৫) মৌসুমে রাজশাহী চিনিকলে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। চিনিকল সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের আগে রাজশাহী চিনিকলের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মে. টন। তার আগে থেকেই বিভিন্ন কারণে আখ চাষের ক্ষেত কমতে থাকে। তখনই আখের অভাবে ১৫ মে. টন চিনি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর পরও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত এ মিলের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মে. টনে উন্নীত হয়। পাশাপাশি বেড়ে যায় জনবল। যার ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পর থেকেই রাজশাহী চিনিকল লোকসানের মধ্যে পড়ে এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। এদিকে বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা নিয়েই শুক্রবার বিকেলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন এফসিএমএ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিব বলেন, চিনিকলে লোকসান কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে নর্থবেঙ্গল চিনিকলকে ডিসটিলারিজের আওতায় হয়েছে। সেখান থেকে বিদ্যুত উৎপাদন, জৈবসার, জুস নানা ধরনের সামগ্রী উৎপাদন করা হবে। এতে করে লোকসান কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সাদা চিনির চেয়ে আমাদের এই চিনিতে মিষ্টতা অনেক বেশি। সাদা চিনিতে নানা রকমের কেমিক্যাল প্রডাক্ট থাকলেও আমাদের মিলের চিনিতে তা নেই। একই অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, দেশের অন্যান্য চিনিকলের পাশাপাশি রাজশাহী চিনিকলকেও আধুনিকায়ন করা দরকার। পুরাতন মেশিনারিজের জন্য লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে। দেশের এ শিল্পের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফেরাতে হলে অবশ্যই র-সুগার আমদানি রোধ করতে হবে। শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ব্যবসায়ীদের মুনাফার জন্যই র-সুগার আমদানি হচ্ছে এবং এ খাতে লোকসান বেড়ে চলেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ১৭ কেটি টাকার চিনি অবিক্রীত সংবাদদাতা, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড চিনিকলের ১৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। চিনিকলের গোডাউনে গত চার বছরের মজুত চিনি বিক্রির জন্য প্যাকেজিংসহ বিভিন্নভাবে বিক্রির চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও আশানুরূপ চিনি বিক্রি হচ্ছে না। ফলে গোডাউনের ১৭ হাজার মেট্রিক টন অবিক্রীত চিনি ক্রমেই গুণগত মান হারাচ্ছে। এ অবস্থায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ আসন্ন চলতি বছরের মাড়াই মৌসুম শুরুর প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি মিল জোন এলাকার আখচাষীদের আশঙ্কা, উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হলে মিলটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ আলী জনকণ্ঠকে জানান, আধুনিক প্যাকেজিং ও পত্রপত্রিকায় এবং বিভিন্ন টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে চিনি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরেও চিনি বিক্রির তেমন সাড়া মিলছে না। এদিকে গোডাউনে মজুতকৃত চিনির মান ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে। অচিরেই এই চিনি বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে মিলটি আর্থিকভাবে ক্ষতি হবে।
×