ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্ব ছাড়

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৮ নভেম্বর ২০১৫

২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্ব ছাড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এলডিসি দেশগুলোর জন্য আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ আরও ১৭ বছর মেধাস্বত্বের জন্য কোন ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনা-বেচা করতে পারবে। শুক্রবার জেনেভায় ট্রিপস (ট্রেড-রিলেটেড আসপেক্টস অব ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) কাউন্সিলের বৈঠকে ‘অন্তত ২০৩৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত’ ওষুধ পণ্যের মেধাস্বত্ব কার্যকরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকের ফলাফল জানিয়ে এক বিবৃতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বলেছে, ওই তারিখের পরও মেধাস্বত্বে ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ উন্মুক্ত রাখতেও সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১৫-১৮ ডিসেম্বর নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে দ্বিতীয় মেয়াদে মেধাস্বত্ব ছাড়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। জানা গেছে, ডব্লিউটিও’র এই সিদ্ধান্তের ফলে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বড় ধরনের একটি ধাক্কা থেকে রক্ষা পেল। ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ছাড়ের ফলে মেধাস্বত্বের জন্য ব্যয় না হওয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলো দামী ওষুধগুলো নিজেদের বাজারে কম খরচে উৎপাদন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ১২ বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশের ওষুধের বাজার এখনও স্থানীয় উৎপাদকদের হাতেই রয়েছে। এর ফলে এই সুবিধা নিয়ে ওষুধ রফতানি করতে পারবেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। এদিকে, এই ঘোষণাকে ডব্লিউটিও’র যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আজ রবিবার এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। ওই সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক অভিহিত করে এলিডিসি গ্রুপের সমন্বয়ক বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামিম আহসান বলেন, এর ফলে জেনেরিক ওষুধ কেনা ও উৎপাদনের সুযোগ না থাকলেও স্বল্পোন্নত দেশগুলো তা ব্যবহারের আইনী বৈধতা পেল। এদিকে, চলতি বছরেই দরিদ্র দেশগুলোর জন্য উন্নত বিশ্বের দেয়া এই বিশেষ সুবিধার মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল রাখতে ডব্লি¦উটিওর কাছে আবেদন জানানো হয়। এদিকে, ট্রিপস কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা ভিত্তিক পার্টনারস ইন পপুলেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (পিপিডি) নির্বাহী পরিচালক জো থমাস। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত পিপিডির সদস্য দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুফল বয়ে আনবে। ২৬টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত পিপিডি উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার উন্নয়নে কাজ করে। এদেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ চূড়ান্ত দারিদ্র্যতায় রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের ফলে এদেশগুলোর লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্রতর হচ্ছে। থমাস আরও বলেন, পিপিডি সদস্য অনেক দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাদির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য জেনেরিক ওষুধের সুযোগ পাওয়া প্রয়োজন। এই দেশগুলোর রোগী বা সরকার- কারোর-ই দামী ওষুধের ব্রান্ডগুলো ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক রবার্তো এ্যাজেভেদো বলেন, ট্রিপস কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতীয়মান হলো যে, ডব্লিউটি সদস্যরা সংস্থার দরিদ্রতম দেশগুলোর সদস্যদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়। গত ২০০১ সালে ট্রিপস এ্যাগ্রিমেন্ট এ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিষয়ক দোহা ঘোষণা অনুযায়ী, ২০০২ সালে প্রথম মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুবিধা দেয়া হয়। ওই বছর ডব্লিওটিও সাধারণ অধিবেশনে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য এই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
×