ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে বিক্রমপুর

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৭ নভেম্বর ২০১৫

ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে বিক্রমপুর

মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের খ্যাতি জগত জোড়া। ইতিহাসসমৃদ্ধ এই জনপদ এখন দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। কালের সাক্ষী হয়ে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বহু প্রাচীন স্থাপনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই জনপদের জৌলুস ছড়ায়। পর্যটকদের হাতিছানি দিয়ে ডাকে। আসন্ন শীতে রাজধানীর কাছের পড়শী বিক্রমপুরে বেড়াতে পারেন। সঙ্গে শীতের খেজুর রস, পিঠা-পুলির স্বাদও নিতে পারেন। কী নেই এখানে। হাজার বছরের প্রাচীন পাল আমলের বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও মুঘল স্থাপত্য ইদ্রাকপুর কেল্লা, সুলতানী আমলের বাবা আদমের মসজিদ এবং ব্রিটিশ স্থাপত্য সোনারং জোড়া মঠকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের বিচরণ শুরু হয়ে গেছে। সদর উপজেলার রঘুরামপুরে হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বরে প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির স্তূপ তথা বৌদ্ধনগরী মাটির নিচে পাওয়া গেছে। এসব প্রাচীন অমূল্য নিদর্শন দেখতে এখানে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগেই আছে। এত কাছাকাছি চার শাসনামলের প্রাচীন নিদর্শন বিরল। শুধু প্রাচীন স্থাপত্যই নয়, রয়েছে প্রকৃতির নয়নাভিরাম পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, রজত রেখা ও কাজল রেখা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। মাওয়ার পদ্মার চর এখন আকর্ষণীয় স্থান। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈত্রিক ভিটা শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল পর্যটকদের অন্যতম বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এটি এখন দেশের অন্যতম পিকনিক স্পট। হেমন্তের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে এখন মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। শীত দরজায় কড়া নাড়ছে। সকালের ঘাসে দেখা মেলে শিশির বিন্দুর। পাল তোলা নৌকা, আর রাখালের গান, পিঠে পুলির দেখা মিলবে বিক্রমপুরে। বাংলার বারভূইয়াদের দমনের উদ্দেশ্যে মুন্সীগঞ্জে ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে মীর জুমলা ধলেশ্বরী নদীর তীরে দুর্গ নির্মাণ করেন। দুর্গের পূর্বদিকে ইংরেজীতে লেখা রয়েছে ‘দি ইদ্রাকপুর ফোর্ট’। বর্তমানে এটি মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই জেলা শহর মুন্সীগঞ্জে জনবসতি গড়ে ওঠে। সোনারং জোড়া মঠ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সত্যেন সেনের সোনারং গ্রামে অবস্থিত। এমন সুন্দর জোড়া মঠ ভারতীয় উপমহাদেশে বিরল। অনুমান করা হয় এখন থেকে সাড়ে তিনশ’ বছর আগে এই জোড়া মঠ নির্মিত হয়। মঠ তথা এই মন্দিরে কোন নামফলক নেই। উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ হর শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধিতে। সুবিশাল এই মঠের উচ্চতা ২৪২ ফুট। মঠের মূল দরজার ঠিক উপরে মার্বেল পাথরের নাম ফলকে লেখা রয়েছে ‘শম্ভুনাথে বাসাধর্দ মঠ’ শতাব্দ ১৭৫৮ সন ১২৪৩। শম্ভুনাথ মজুমদার মহাশয় এই মঠ নির্মাণ করেন। সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের কালীর আটপাড়ায় রয়েছে প্রাচীন সতীদাহ মন্দির। এটিও বিলুপ্তির পথে। একই উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের পানাম পোল ঘাটা গ্রামে রয়েছে দেড় হাজার বছরের পুরনো ইটের পুল। ইট দিয়ে তৈরি এই পুলটি অন্যতম আকর্ষণীয় পুরাকীর্তি। কমলাঘাট-টঙ্গীবাড়ি খালের উপর এটি স্থাপিত। দুনিয়া জুড়ে বিক্রমপুরের মুখ উজ্জ্বল করেছেন অতীশ দীপঙ্কর। তাঁর জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বজ্রযোগিনী গ্রামে। ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে অতীশ দীপঙ্কর মুন্সীগঞ্জের বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতীশ দীপঙ্কর বৌদ্ধ মহাতান্ত্রিক ছিলেন। Ñমীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল মুন্সীগঞ্জ থেকে
×