ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে অনিয়ম ও দালালের দৌরাত্ম্য

পাসপোর্ট অফিসে চরম ভোগান্তি ॥ বগুড়া

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৭ নভেম্বর ২০১৫

পাসপোর্ট অফিসে চরম ভোগান্তি ॥ বগুড়া

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এতটাই অনিয়ম এবং দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে যে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমনকি সরকারী কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট করতে এসেও নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনও বাধ্য হয়ে তারা দালাল চক্রের ফাঁদে পড়েন। এদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সরকার অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে তা গ্রহণে অনেক সময় গড়িমসি করা হয়। মাস পাঁচেক আগেও বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে এতটা অনিয়ম ও অচলায়তন ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী সহকারী পরিচালকের পদমর্যাদার পাসপোর্ট অফিসার পাসপোর্ট অফিসের মূল দায়িত্বে থাকেন। তার অধীনে উচ্চমান সহকারী, হিসাব রক্ষণ সহকারী, ডাটা এন্টি সহকারী, অফিস সহকারী গার্ড ও এমএলএসএস নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। পাসপোর্টের আবেদন ঠিক আছে কি না তা দেখে জমা নেয়ার দায়িত্ব পাসপোর্ট অফিসারের। বগুড়া পাসোপর্ট অফিসে বেশিরভাগ সময়ই তা জমা নেন উচ্চমান সহকারী। সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পাসপোর্টের আবেদন জমা নেয়ার নিয়ম। এই অফিসে গিয়ে দেখা যায় সময়ের অনেক পরে উচ্চমান সহকারী আবেদন গ্রহণের উইনডোতে বসে মিনিট দশেক আবেদন জমা নেয়ার পর ওয়াসরুমে যাওয়ার নাম করে বের হন। লাইনে দাঁড়ানো আবেদনকারীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। ঘণ্টাখানেক পর উচ্চমান সহকারী ফের বসে কয়েকটি আবেদন গ্রহণ এবং বেশিরভাগ ঠিক হয়নি বলে ফেরত দিয়ে উইনডো বন্ধ করেন। তারপর দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে আবেদন জমা নেয়া শুরু হয় পেছনের দরোজা দিয়ে। কখনও অফিস সময়ের পরও চিহ্নিত দালালদের প্রকাশ্যে আবেদনপত্র নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে দেখা যায়। লাইনে দাঁড়ানো আবেদনকারীদের নানাভাবে জানানো হয় এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট মিলবে না। তারা বাধ্য হয় দালালচক্রের র‌্যাকেটে পড়তে। আবেদন জমা দেয়ার পর ছবি তোলার দিনক্ষণও ঠিক করে দেয় দালালরা। সেখানেও চরম অনিয়ম। দালাল ও উচ্চমান সহকারী যা বলে সেভাবেই কাজ হয়। পাসপোর্ট করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির ফেরে পড়া একজন মহিলা জানালেন (সঙ্গত কারণেই ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানা) তার শিশু সন্তানের দ্রুত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে জরুরী পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। নিয়ম মতো তিনি ব্যাংকে ৬ হাজার ৯শ’ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন দাখিল করার পরও ভোগান্তির ফেরে পড়েন। পাসপোর্ট অফিসারের কাছে সহযোগিতা চেয়েও তিনি পাননি। এ অবস্থায় নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে দালালদের কাছেই ধর্না দেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বললেন পাসপোর্ট অফিসারের সামনে অনেক দালালকে দেখেছেন। এই দালালরা আবেদন জমা দিলে তখন কোন অসুবিধা হয় না। সব কিছুই ঠিকঠাকমতো হয়ে যায়। সরকারী কলেজের একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক নো অবজেকশন সার্টিফিকেটসহ (এনওসি) আবেদন জমা দেয়ার পরও পাসপোর্ট অফিসের একজন উচ্চমান সহকারীর কাছে দুই দফায় হেনস্তার শিকার হন। বিষয়টি তার মর্যাদায় আঘাত করলে তিনি পাসপোর্ট অফিসারের কাছে গিয়েও কোন সহযোগিতা পাননি। সরকারী নিয়মে প্রথম শ্রেণীর কোন সরকারী কর্মকর্তার পাসপোর্টের প্রয়োজন হলে উর্ধতনের এনওসি নিয়ে আবেদন করলে তা সাধারণ পাসপোর্টের ফি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিলে জরুরী পাসপোর্ট বলেই বিবেচিত হয় এবং এক সপ্তাহের (কর্মদিবস) মধ্যেই সরবরাহ করা হয়। যেহেতু সরকারী কর্মকর্তার পুলিশ ভেরিফিকেশন করাই থাকে সেজন্য পাসপোর্টও দ্রুত হয়ে যায়। এই নিয়ম থাকার পরও বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে সরকারী কর্মকর্তাদের অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সহজেই অনুমান করা যায় তাহলে সাধারণের অবস্থাটি কি। গ্রামের এই সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট করে বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়ে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। যা দিয়ে সবল হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা। বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে এ ধরনের এন্তার অভিযোগ পাওয়া যায়। বর্তমানে দালালচক্রসহ যত অনিয়ম তার সব কিছুই ঘটছে বর্তমান পাসপোর্ট অফিসার খোরশেদ আলমের সামনেই। উচ্চমান সহকারী সামসউদ্দিন ম-লের টেবিলের সামনে সব সময় থাকেন দালালরা। বিষয়টি পাসপোর্ট অফিসারের নজর এড়ায় না। তারপরও অদৃশ্য কারণে তিনি নীরব থাকেন। খোঁজ খবর করে জানা যায় মাস পাঁচেক আগে নতুন পাসপোর্ট অফিসার ও উচ্চমান সহকারী একই সঙ্গে যোগদান করেছেন। এই বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসারের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অনিয়মের কথা অস্বীকার করে সাফ জানান, সরকারী নির্দেশ পালন করছেন। তবে এ কথাও বলেন কখনও কখনও কিছুটা অনিয়ম হলে তা জানতে পারেন না। উচ্চমান সহকারী আবেদন জমা নিতে পারেন কি না এই প্রসঙ্গে বলেন তিনি চেম্বারে ব্যস্ত থাকলে উচ্চমান সহকারীকে উইনডোতে বসান। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। দালাল প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না এই বিষয়ে কোন উত্তর দেননি। বলেছেন কোন পাসপোর্ট অফিসে কোন দালাল নেই।
×