ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টুটুলের আঙ্গুল আবারও ছোঁয়া পেল কী-বোর্ডের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ নভেম্বর ২০১৫

টুটুলের আঙ্গুল আবারও ছোঁয়া পেল কী-বোর্ডের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও মুক্তবুদ্ধির লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুরো বাংলাদেশকে নিজের পাশে চেয়েছেন প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল। উগ্র জঙ্গী মৌলবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত টুটুল শুক্রবার সকালে কী-বোর্ডে নিজের আঙুল রাখার অনুভূতিকে বন্ধুর সঙ্গে হাত মেলানোর আনন্দের সঙ্গে তুলনা করলেন। এই হত্যাচেষ্টার পরও মুক্তবুদ্ধির লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে প্রগতিশীল এ প্রকাশক লিখেছেন, ‘বুদ্ধির মুক্তির লড়াইয়ে, মুক্ত বুদ্ধির লড়াইয়ে আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব। সঙ্গে থেকো বাংলাদেশ।’ গত ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে টুটুল এবং তার সঙ্গে থাকা প্রগতিশীল ব্লগার লেখক তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে জখম করে তিন মৌলবাদী জঙ্গী। তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেনি জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপন। লালমাটিয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগে জাগৃতির কার্যালয়ে দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। মারাত্মক জখম হওয়ার পর থেকে টুটুল, রহিম ও রণদীপম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার সকাল ৮টা ৩১ মিনিটে ফেসবুকে টুটুল লেখেন, ‘শুভ সকাল বাংলাদেশ। শুভ সকাল মহাপৃথিবী। আবারও আঙ্গুল ছোঁয়া পেল কী-বোর্ডের। এ যেন ঠিক বন্ধুদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার আনন্দ। বুদ্ধির মুক্তির লড়াইয়ে, মুক্ত বুদ্ধির লড়াইয়ে আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব। সঙ্গে থেকো বাংলাদেশ।’ নিজের ভুবনে ফিরে আসায় টুটুলকে স্বাগত জানিয়ে, তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ওই পোস্টে মন্তব্য লিখেছেন প্রকাশকের ফেসবুক বন্ধুরা। ফেব্রুয়ারিতে একইভাবে খুন হওয়া লেখক অভিজিত রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমেদ লিখেছেন, ‘শুভ সকাল টুটুল, সংহতি এবং শুভকামনা। সঙ্গে আছি, থাকব শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ওরা এমনিও মারবে, তেমনিও মারবে চোরের মতো, দুর্বলতা ওদের অস্ত্র, আমাদের নয়!!! টুটুলের পোস্টে এক মন্তব্যে অঞ্জন কর লিখেছেন, ‘ভাইয়া আপনার স্ট্যাটাস দেখে ভাল লাগছে। আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’ মুজিব রহমান লিখেছেন, ‘শুভ কামনা থাকল। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন আপন ভুবনে। আপনার দৃঢ়তা আমাদের সাহস দিচ্ছে।’ কল্লোল লাহিড়ী লিখেছেন ‘শুভেচ্ছা রইল...তার সঙ্গে দ্রুত আরোগ্যের...। অনেক দূরে আছি। তবুও পাশে আছি, মননে... চিন্তায়...শুভবুদ্ধিতে।’ সাংবাদিক পুলক ঘটক লিখেছেন, ‘হাই টুটুল ভাই! অভিনন্দন! সুস্বাগতম! আপনাকে দেখে সকালটা আমার আনন্দে ভরে গেল। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে এভাবেই এগিয়ে যাব আমরা।’ হামলায় আহত হওয়ার আগে ফেসবুকে টুটুলের শেষ স্ট্যাটাস ছিল ৩০ অক্টোবর। ছয়দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আবার ফেসবুকে ফেরেন। রাত ১১টা ১ মিনিটে টুটুলের ফেসবুকে ‘হাসপাতাল সিরিজ: ২’ শিরোনামে একটি কবিতা তোলা হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন-‘সমবেত ঘাসফুল/ মন খারাপ করা হেমন্ত সন্ধ্যার শিশির/আজ বইমেলার পরিবর্তে/শব্দ বাক্য অক্ষরের পরিবর্তে/আমরা আমাদের কেটে ফেলা আঙ্গুল/দুভাগ হওয়া মাথার খুলি, চোয়াল/রাজিব অভিজিত অনন্ত নীল/মেঝেতে শুকিয়ে থাকা দীপনের রক্ত আজ/আপনাদের চক্ষু, অন্তর্চক্ষুর সমীপে/আপনাদের বেদনার মর্মমূলে/হেমন্তের বইমেলার পরিবর্তে/এই উদ্বোধনের মঞ্চে/এই শূন্য মাইক্রোফোনের সামনে/পাবলিক লাইব্রেরির দেয়ালে দেয়ালে/পাতার মর্মরে/রাজপথে শাহবাগে/দেখুন, দয়া করে আপনারা শুধু দেখুন।
×