ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াত বিএনপির স্বার্থ সরাসরি সম্পৃক্ত ॥ নির্মূল কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৫ নভেম্বর ২০১৫

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াত বিএনপির স্বার্থ সরাসরি সম্পৃক্ত ॥ নির্মূল কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ব্লগার-প্রকাশক হত্যাকা-ের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের স্বার্থ ও ফায়দার বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। এসবের পেছনে তাদের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করা অমূলক নয়। সন্দেহ প্রকাশের আইনগত ও বাস্তবভিত্তি রয়েছে। দল দুটির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য ও এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নতুন আন্তর্জাতিক মানদ-ের নজির সৃষ্টি করেছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা নামধারী কিছু ঘোষখোর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একাত্তরে যেভাবে তালিকা তৈরি করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল; বর্তমানেও সেভাবে তালিকা তৈরি করে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের হত্যা করা হচ্ছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে এই অপপ্রচার ও হত্যাকা- বন্ধ করা যাবে না। বুধবার ’৭২ এর সংবিধান : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদ সন্ত্রাস নির্মূলের ব্যবস্থাপত্র’ শীর্ষক আলাচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। ৪৪তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে ধানম-ির ডব্লুভিএ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকা- ঘিরে সন্দেহের যে তালিকা রয়েছে, তাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা শীর্ষে আছেন। এই সন্দেহের আইনগত ভিত্তি রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা চাইলে এসব ঘটনার সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কানেকশনের বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া যাবে। আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী ৮ নবেম্বর থেকে ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। টানা শুনানির মাধ্যমে এ হত্যাকা-ের বিচার কার্যক্রম চলতি মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক আরও বলেন, বর্তমান সরকার সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হবে বলে তিনি জানান। সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, চেতনাগত দিক থেকে ’৭২ এর সংবিধান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধানগুলোর একটি। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই এতে ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সংবিধান কাঁটাছেঁড়া করে জামায়াতের উত্থানের সুযোগ করে দেয়। জামায়াত হলো সন্ত্রাসের গডফাদার। জামায়াত আন্তর্জাতিক বিশ্বে লবিস্ট নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের অপচেষ্টা করছে। তাদের নিষিদ্ধ না করলে সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। তিনি ’৭২ এর সংবিধানের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ৪ নবেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবিধান দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানান। অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নতুন আন্তর্জাতিক মানদ- সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কাসহ অন্য কোন দেশ যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার করে তবে তারা বাংলাদেশকেই দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখবে। এ সময় তিনি দ্রুততম সময়ে মানবতাবিরোধীদের বিচারের দাবির মধ্যে দুটি থেকে একটি ট্রাইব্যুনাল করা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বর্তমান সংবিধানকে ‘গোঁজামিলের সংবিধান’ আখ্যায়িত করে ’৭২ এর মূল সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। সভাপতির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন জরুরী। এককভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় লাভ হবে না। সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, আইনজীবী ড. তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
×