আশরাফুল আলম
বন্ধুদের দেখতাম ফেসবুক চালাতে। তখন অতটা বুঝতাম না। এর আকর্ষণ বা প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতাম না। আমার এক আত্মীয় ইতালি থেকে স্মার্টফোন পাঠান। তারপর আমি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলি। ফ্রেন্ড লিস্টে এখন আমার এক হাজার বন্ধু। এর আগে হাতেগোনা আট দশ জন বন্ধুর সাথে সম্পর্ক রাখতে কষ্ট হতো। এখন বন্ধুত্বে কোন ভাটা পড়ে না।
প্রযুক্তির ভাল-মন্দ দুটো দিক থাকে। এর ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। ভাল-মন্দ আসলে নিজের কাছে। তাহলে কি আমরা আধুনিকতা গ্রহণ করব না? নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়ে সভ্যতাকে এগিয়ে নেব না? অবশ্যই নেব। আমরা তো কোন কাজে পিছিয়ে থাকতে পারি না। ফেসবুক একটি বড় গ্রন্থাগার বলা চলে। বিশাল তথ্যভা-ারও বটে। এখানে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন তথ্য পেয়ে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারি। আমাদের চিন্তা চেতনার শেয়ার করতে পারি। অজানাকে জানতে পারি। সৃজনক্ষমতার বিকাশে সহায়তা পেতে পারি।
আমি যখন ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হই, তখন ফেসবুকে মেসেজ পেয়ে ফেসবুকের শত শত বন্ধু এসে হাসপাতালে জড়ো হয় আমাকে দেখতে। এ মেসেজ পাঠাতে আমার মাত্র দু’ এক টাকা খরচ হয়েছে। দু’ এক মিনিট সময় লাগে আমার সংবাদটি পৌঁছাতে। ফসবুক-বন্ধুরা আমার দিকে বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন মনে হয়, আমাকে বাঁচতে হবে, বেঁচে উঠতে হবে। বন্ধুদের জন্যেই এই সুন্দর পৃথিবীতে আমি বাঁচব, ভালভাবে বাঁচব। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। আমি ফেসবুকে আমার কবিতা, গল্প, বিভিন্ন কলাম, কোন চিন্তাশীল লেখা লিখে থাকি। বন্ধুরা লাইক দেয়, কমেন্ট করে। এই কমেন্ট জেনে আমার লেখার পথ খুঁজে পাই। লেখা সমৃদ্ধ হয়। আমার লেখা ‘রক্তাক্ত নারী’ বইটি বইমেলায় যেবার প্রকাশিত হয়; ফেসবুকে সংবাদটি জানালে মেলাতেই সবগুলো কপি শেষ হয়ে যায়। এসব আসলে ফেসবুকের কারণেই সম্ভব হয়। জরিপ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর শতকরা আশিভাগ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেট এবং ফেসবুক এখন এদেশে প্রায় সমার্থক শব্দ। হঠাৎ করে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে সাড়ে চার কোটি হয়ে গেছে। এটা শুভ সংবাদ।
তবে এটাও সত্য, জরুরী কাজ ফেলে আমি অযথা ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠি না। সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। ফেসবুকের ভাল দিকগুলো আমরা গ্রহণ করব, আর খারাপ দিকগুলো আমরা বর্জন করব। তাহলে আমরা উপকৃত হব ফেসবুক থেকে।
রামপুরা, ঢাকা থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: