ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি জমা রাখার অভিযোগে সাত সিএনজির কাগজপত্র জব্দ

অধিকাংশ অটোরিক্সা মিটারে চলছে, তবে পছন্দের গন্তব্যে যেতে নারাজ

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৪ নভেম্বর ২০১৫

অধিকাংশ অটোরিক্সা মিটারে চলছে, তবে পছন্দের গন্তব্যে যেতে নারাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অটোরিক্সার মালিকের বিরুদ্ধে বাড়তি জমা রাখার অভিযোগ করেন চারজন গাড়িচালক। গ্যারেজে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মেলে। শুরু হয় অভিযান। অতঃপর গ্যারেজে রাখা সাতটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে। জব্দ করা হয় গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। মঙ্গলবার রাজধানীতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে রাজধানীর তেজগাঁও-বেগুনবাড়ি এলাকায় একাধিক গ্যারেজে প্রায় অর্ধশত অটোরিক্সা থেকে বাড়তি জমা নেয়ার অভিযোগ এসেছে টাস্কফোর্সের কাছে। এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলেছে, রাজধানীতে চলা অধিকাংশ অটোরিক্সা মিটারের চলাচল করলেও যাত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে নারাজ চালকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সংসদ ভবন এলাকার ন্যাম ফ্ল্যাট সংলগ্ন রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলম। বেলা ১১টার দিকে একে একে চারজন অটোরিক্সাচালক আদালতের কাছে মালিকের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত জমার বেশি অর্থ রাখার অভিযোগ করেন। তারা জানান, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৯০০ টাকা জমা নির্ধারণ করা হলেও মালিক দুই শিফটে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। প্রথম শিফটে এক হাজার ১০০ টাকা ও দ্বিতীয় শিফটে ৬০০ টাকা জমা রাখার কথা জানান। চালকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সবুজবাগ থানার বাসাবো মাঠ সংলগ্ন শামসুদ্দিন খোকনের গ্যারেজে দুপুরে অভিযান চালান। অভিযোগ সত্য প্রমাণ হওয়ায় গ্যারেজ থেকে ঢাকা মেট্রো-থ-১২-২১১৫, ঢাকা মেট্রো-থ-১২-৭৪৮৭, ঢাকা মেট্রো-থ-১২-৮৪০৯, ঢাকা মেট্রো-থ-১৪-৩২৪৯, ঢাকা মেট্রো-থ-১২-৬৪৫৭, ঢাকা মেট্রো-থ-১৪-৩১২৩ ও ঢাকা মেট্রো-থ-১৪-০৫৪২ নম্বরের সাতটি গাড়ি জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠায়। অভিযোগকারী চালক আব্দুল মাজেদ জানান, বেশি জমা নেয়ার কারণে আমাদের যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ রাখতে হয়। কিন্তু বাড়তি টাকা দাবি করলে রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। পুলিশ প্রশাসনের কড়া নজরদারি। তাই আদালতের কাছে অভিযোগ করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। অপর চালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, মালিকরা ইচ্ছামতো গাড়ি পরিচালনা করায় আমরা তাদের কাছে জিম্মি। এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরী। অপর চালক আব্দুল জব্বার জানান, মালিকদের বিরুদ্ধে সকল অটোরিক্সা চালকের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হলে পরিবহন সেক্টরে স্থিতিশীলতা ফিরবে। থামবে নৈরাজ্য। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ১ নবেম্বর থেকে রাজধানীতে অটোরিক্সা ভাড়া বেড়েছে। নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি চলা ও মালিকদের জমার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য হানিফ খোকন জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের কাছে অনেক মালিকের বিরুদ্ধে ৯০০ টাকার বেশি জমা রাখার অভিযোগ আসছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরছি। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ॥ নিম্ন আয়ের মানুষের বাহন হিসেবে পরিচিত সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ভাড়া গত ১ নবেম্বর ২০১৫ হতে মালিক-চালকদের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণের পরও এই বাহনে মালিক-চালকদের কাছে যাত্রীসাধারণ অসহায় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে পরিচালিত নামমাত্র খরচে অপারেশন সুবিধার এই বাহনটির মালিক ছাড়া চালক-যাত্রী কেউ লাভবান হচ্ছে না বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। যাত্রী তথা সাধারণ মানুষের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মালিক-চালকদের নিয়ে তাদের মনপূত ভাড়া ও দৈনিক জমা নির্ধারণের পর কেমন চলছে অটোরিক্সা? তা পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগরীতে গত ২ দিন ধরে পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা পর্যবেক্ষণ করে। এসব এলাকায় প্রায় ২২৫টি অটোরিক্সা চালক ও ২৪৭ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে। এতে ১৯৮টি সিএনজি অটোরিক্সা মিটারে চলাচল করছে বলে চালক-যাত্রী প্রতিনিধিদল জানিয়েছে। বাকি ২৭টি অটোরিক্সার ১০টিতে কোন মিটার পাওয়া যায়নি। ১৭টি অটোরিক্সা চালক বা যাত্রীর ইচ্ছায় চুক্তিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার দিন নতুন বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করায় ঐ দিন মিটার জটিলতাসহ নানা কারণে অর্ধেকেরও বেশি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ থাকায় পরীক্ষার্থীসহ নগরীর যাত্রীসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়ে যা যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। এছাড়াও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মিটার চালু করে চলাচল করলেও অধিকাংশ অটোরিক্সা গোপনে চুক্তিতে চলাচল করছে। সরকার নির্ধারিত বর্ধিত দৈনিক জমা ৯০০ টাকা হলেও সিংহভাগ অটোরিক্সার মালিকরা ইচ্ছমতো জমা আদায় করছে বলে চালকরা জানিয়েছে। ৯২ শতাংশ যাত্রীর অভিযোগ অটোরিক্সা চালকরা এখনও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না।
×