ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের ভালবাসায় সিক্ত বনের পশু পদ্মা মেঘনা যমুনা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৪ নভেম্বর ২০১৫

মানুষের ভালবাসায় সিক্ত বনের পশু পদ্মা মেঘনা যমুনা

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ পরম স্নেহ-মমতা আর আদর-ভালবাসায় সিক্ত ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’। সকাল হলেই ছোটাছুটি আর বিরামহীন দুরন্তপনায় কাটে ওদের সারাদিন। কাঁধে মেঘনা, তো বুকে যমুনা আর গলায় পদ্মা। এমনই বুকভরা ভালবাসা আর স্নেহমাখা মমত্ববোধের চিত্র সেদিন চোখে পড়ল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। মাস চারেক আগের কথা। সাফারি পার্কেও বেষ্টনী উজ্জ্বল করে সেখানে জন্ম নেয় পাঁচটি সিংহ শাবক। সেই থেকে মায়ের মমতাভরা হাত দিয়ে তিনটি সিংহ শাবককে লালন-পালন করছেন পার্কের এ্যানিম্যাল কিপার নূরুন্নŸী মিন্টু। বনের রাজা সিংহ স্বভাবে হিংস্র হলেও এখন তো ওরা শিশু। তাই ওদের মায়াভরা তুলতুলে শরীরে কোমল হাতের পরশ বুলিয়ে দেন মিন্টু। মিন্টুর ধ্যানজ্ঞান এখন পদ্মা, মেঘনা আর যমুনা। এই তিন সিংহ শাবক নিয়েই চলে মিন্টুর যতসব কর্মযজ্ঞ। ভালবেসে ওদের এই নামগুলো মিন্টুই দিয়েছে। পার্ক সূত্র জানায়, সাড়ে চার বছর আগে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেড় বছর বয়সী ১৮টি সিংহ গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। সেই থেকে সবগুলো সিংহকে একত্রে পার্কের কোড় সাফারি জোনের সিংহ বেষ্টনীতে উন্মুক্ত করে রাখা হয়। বসবাস উপযোগী পরিবেশ পেয়ে বেড়ে উঠছে সিংহ শাবকগুলো। কয়েক মাস আগে গর্ভবতী হওয়া দুই জোড়া সিংহ-দম্পত্তি সম্প্রতি বেষ্টনী আলোকিত করে পাঁচটি সিংহ শাবকের জন্ম দেয়। দুটি শাবক তাদের মায়ের সঙ্গে থাকলেও অন্য তিনটিকে কেন যেন সহ্য করতে পাছিল না মা সিংহ। তাই জন্মের পর থেকে ওই তিনটি শাবকের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় পার্কের এ্যানিম্যাল কিপার নূরুন্নŸী মিন্টুকে। মিন্টু জানান, সাড়ে তিন বছর আগে এই পাকে কাজে যোগদান করেছি। সম্প্রতি পার্কে জন্ম নেয়া ওই তিন সিংহের বাচ্চাকে লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। অন্য দুটি বাচ্চা শাবক মায়ের সঙ্গেই আছে। আমি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাকে পরম আদরে লালন-পালন করার কারণে আমার সঙ্গে ওদের মিতালী হয়েছে। আমি শাবকদের গুঁড়া দুধ ফিডার দিয়ে খেতে দেই। এখন কিছু কিছু নরম মাংস খেতে পারে ওরা। এখনও সারাক্ষণ ওরা আমার কোলে-পিঠে চড়ে থাকে। টাইগার পর্যবেক্ষণ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, পার্কের সুনাম এখন দর্শনার্থীদের মুখে মুখে। অব্যবস্থাপনার অনেক অভিযোগ থাকলেও এখানে আলোচ্য ৫ সিংহ শাবক জন্ম নেয়াকে পার্ক কর্তৃপক্ষের সফলতা বলেই অনেকে মনে করছেন। তাই বিষয়টি এখন আলোচনার সামনে নিয়ে আসছে দর্শনার্থীরা। এতে পার্কের আকর্ষণ আরও বাড়ছে। পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার মোঃ সরোয়ার হোসেন খান বলেন, পার্কের সুন্দর পরিবেশের কারণেই এখানে সিংহ শাবকগুলোর জন্ম হয়। এক শ’ পাঁচ দিন থেকে এক শ’ বার দিনের মধ্যে সিংহ দম্পতিরা বাচ্চা প্রসব করে। মে থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সিংহের বাচ্চা প্রসবের উপযুক্ত সময়। শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল জলিল জানান, সবগুলো সিংহ শাবকই সুস্থ সবল রয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই প্রাণী পরিচর্যার কাজ করছে। পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা শিবু প্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, পাঁচটি সিংহ শাবকই ভাল আছে। কিছু দিনের মধ্যে আরও কিছু প্রাণীর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিংহের বাচ্চা হওয়ার পর থেকে পার্কে কর্মরত সবাই বেশ খুশি।
×