ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সবুজ মিয়ার জবানবন্দী

মহিবুরসহ রাজাকাররা আমার ভাইকে হত্যার পর লাশ গুম করে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩ নভেম্বর ২০১৫

মহিবুরসহ রাজাকাররা আমার ভাইকে হত্যার পর লাশ গুম করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী সবুজ মিয়া জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার বড় ভাই আকল আলীকে রাজাকার মহিবুর রহমান বড় মিয়াসহ অন্যান্য রাজাকাররা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে দেয়। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১০ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। জবানবন্দী ও জেরার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুনতাম মাহমুদ সিমন, রিজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরও বলেন, আমার নাম সবুজ মিয়া আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- পশ্চিম খাগাউড়া, থানা-বানিয়াচং, জেলা-হবিগঞ্জ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১১ বছর। তখন আমি এরালিয়া খাড়াউড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। বর্তমানে আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালের ১১ নবেম্বর খুব ভোর বেলায় আমার ভাই আকর আলী ও রজব আলী আমাদের বাড়িতে আসে। তখন আমার বড় ভাই আকল আলীর প্রথম স্ত্রী ভিংরাজ বিবি, দ্বিতীয় স্ত্রী পুলিশ বিবি তার মেয়ে কামরুন্নেছা, উক্ত রজব আলী ও তার স্ত্রী আমার বড় ভাই আকল আলীর ঘরে যায। ওইদিন সারা বেলা তারা গোপনে আমার বড় ভাই আকল আলীর ঘরেই অবস্থান করছিল। ওইদিন বিকেল আনুমানিক ৪টার সময় রাজাকাররা আমার বড় ভাইয়ের ঘর ঘেরাও করে। ওই রাজাকারদের মধ্যে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া আসামি আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হামিদ, মলুসহ আরও অনেক রাজাকার ছিল। সাক্ষী বলেন, ওই সময় রজব আলী আকল আলীর ঘরের পশ্চিম পাশের দরজা দিয়ে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় আসামি বড় মিয়া তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। রজব আলীর হত্যার পর বড় মিয়া, আসামি আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হামিদ ও মলু আকল আলীর ঘরে প্রবেশ করে। তারা আকল আলীর চোখ ও হাত বেঁধে টানা হেঁচড়া করে তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠানে নিয়ে আসে। পরে আকল আলীকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে গুলি করে লাশ গুম করে ফেলা হয়। সাক্ষী আরও বলেন, উপরোক্ত ঘটনার আনুমানিক ১৫ দিন পূর্বে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়াসহ অন্য রাজাকাররা বানিয়াচং যায়। সেখান থেকে তিনটি নৌকা করে পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে কর্নেল এমএ রব সাহেবের বাড়িতে যায়। রব সাহেবের বাড়িতে তারা লুটপাট করে। তারপর ৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে হিন্দুপাড়ায় ২০ বাড়িতে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
×