ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেখভালের দায় কার?

রাজধানী ঢাকায় যত্রতত্র কার পার্কিং, নেই নিয়মনীতির বালাই

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ নভেম্বর ২০১৫

রাজধানী ঢাকায় যত্রতত্র কার পার্কিং, নেই নিয়মনীতির বালাই

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীতে যত্রতত্র ইচ্ছেমতো পার্কিং করছেন গাড়িচালক ও মালিকরা। সরকার বা সিটি কর্পোরেশন ঘোষিত প্রধান কিংবা ভিআইপি সড়ক থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার অলিগলি কিংবা অতি ব্যস্ততম ফুটপাথ কোনটাই এসব অবৈধ পার্কিংয়ের স্থান থেকে বাদ পড়ছে না। খেয়াল খুশিমতো যখন তখন যে কেউ যে কোন স্থানে গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নিতেও দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে অফিস করেন বা ব্যবসায়িক কাজ সেরে আবার গাড়িতে চড়ে বসেন গাড়ির মালিকরা। যেন পার্কিংয়ের স্থানটিকে তারা নিজের কেনা জমি মনে করেই গাড়ি রাখছেন। পার্কিংয়ের নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। অবস্থা দেখে মনে হয়, পুরো রাজধানীই যেন তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে না জানা ও মানতে আগ্রহ না থাকা, সচেতনতার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া ও রাজনৈতিক প্রভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবৈধ কারপার্কিং করেও যে কেউ পার পেয়ে যায়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার ফাঁকা ও পরিত্যক্ত স্থানে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এ অবৈধ কার পার্কিং। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, প্রায় দেড় কোটি নাগরিক বসবাসকারী এ রাজধানী ঢাকার অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান মহানগর ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি কিংবা রাজউক কাররই হাতে নেই। তবে কি রাজধানীর নাগরিকদের সুবিধা প্রদানের দায়িত্ব পালনকারী এসব সংস্থা যানজট নিরসনে অবৈধ গাড়ি পার্কিং প্রতিহত করা অসম্ভব মনে করে নাকি তাদের ব্যর্থতা? যদিও তারা তা মানতে নারাজ। শুধুমাত্র পরিকল্পিত উদ্যোগ আর সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে আইনের বাস্তবায়ন করে অতি সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী প্রতিষ্ঠান শুধু গাড়ি পার্কিং করেই বছরে রাজস্ব আয় করতে পারে শত কোটি টাকা। কেন অবৈধ কার পার্কিং ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির হিসেব মতে, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন ৫০টির মতো নতুন প্রাইভেটকার নামছে। যা মাসে গড়ে দেড় হাজার এবং বছরে তা কমপক্ষে ১৮ হাজারে দাঁড়ায়। রাজধানীর আয়তনের তুলনায় রাস্তা না বাড়লেও প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি সংখ্যানুযায়ী এসব গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ ও রাস্তায় বেরোলেই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব অবৈধ কারপার্কিংয়ের স্থান রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও রয়েছে। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত বিশ্বের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তার দুই পাশে ও কম ব্যবহার করা হয় বা পরিত্যক্ত স্থানে পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে যানজট নিরসন অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। যা বছরে শত কোটিতে পৌঁছাবে। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রাইভেটকারের পাশাপাশি মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ সব বাসস্ট্যান্ডের আশপাশের এলাকা এবং অনেক দূর পর্যন্ত বাস পার্কিং করে রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত রাস্তা দখল করে বাস রাখতে দেখা যায়। এতে অফিসমুখী যাত্রীদের যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিআরটিএ ২০১৫ সালের আগস্টের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে মোট নিবন্ধিত যান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা ৯ লাখ ১৩ হাজার ৬২২। যার মধ্যে বাস ২৩ হাজার ১১৯ ও ১০ হাজার ৭ মিনিবাস সরাসরি গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী তথ্যমতে, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রাইভেটকারের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭২২, মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬১ হাজার ২৬৩, সরকারী ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার ব্যবহৃত জীপের সংখ্যা ২৭ হাজার ৯১। তবে এ সব যানবাহন সরাসরি গণপরিবহন হিসেবে বিবেচিত হয় না। বিআরটিএর তথ্য মতে, ২০০৪ সালে প্রাইভেটকার নিবন্ধন দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৪, ২০০৫ সালে ৫ হাজার ৬৩৩, ২০০৬ সালে ৭ হাজার ৪০৩, ২০০৭ সালে ১০ হাজার ২৪৪, ২০০৮ সালে ১৩ হাজার ৭৪৯, ২০০৯ সালে ১৭ হাজার ৬৫৪, ২০১০ সালে ১৯ হাজার ৫৫৭, ২০১১ সালে ১১ হাজার ৪২৩, ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ২৩১, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৯৭২ ও ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৯০৫। প্রাইভেট পরিবহন হিসেবে বিবেচিত যানবাহনের নিবন্ধনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাজধানীতে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার করে ব্যক্তিগত যানবাহন নতুন করে যোগ হচ্ছে। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ করলেও পার্কিং সুবিধা বাড়ছে না। রাজধানীর জনবহুল কয়েকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনেই গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়নি। তাছাড়া রাজধানীর রাস্তার সর্বোচ্চ কত পরিমাণ গাড়ি চলাচলের উপযোগী তা বিবেচনা না করেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর অতি পুরনো আবাসিক এলাকা ধানম-ি। এলাকার প্রতিটি রাস্তার দুইপাশে বর্তমানে আবাসিক প্লটে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব ভবনের মধ্যে অধিকাংশ ভবনেই নিজস্ব কার পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এ এলাকার সাত মসজিদ রোডে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ভবন তৈরির সময় রাজউক থেকে নক্সা অনুমোদন করা হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে তা ব্যবহার করায় নিয়ম ভঙ্গ করে রাস্তার ওপর পার্কিং হচ্ছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মতো কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থাকলেও তাদের নিজস্ব কোন প্রয়োজনীয় পার্কিং ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এর বাইরে রয়েছে বেসরকারী অসংখ্য হাসপাতাল যাদের মধ্যে অধিকাংশের নিজস্ব কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী ও রোগীদের ব্যবহৃত যানবাহন রাস্তার ওপর রাখা হয়। ফলে প্রতিনিয়তই ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হয়। এসব রাস্তায় দৈনিক গড়ে কয়েক ঘণ্টা জ্যামে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এছাড়া যত্রতত্র কারপার্কিং করে রাখায় রাস্তায় প্রতিদিনই ছোট বড় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ব্যাংক ও বীমাপাড়া বলে খ্যাত রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা দিলকুশা-মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় রয়েছে একাধিক ব্যবসায়িক চেম্বার ও ফেডারেশনের কার্যালয়। তবে অধিকাংশ ভবনেরই নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এমনকি সরকারী ব্যাংকগুলো প্রধান কার্যালয়ের মধ্যে অগ্রণী, পূবালী, সোনালী, রূপালী ব্যাংকের নিজস্ব ভবনের বেজমেন্টে কোন পার্কিং সুবিধা রাখা হয়নি। এছাড়া ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ (এমসিসিআই) অন্যান্য বেসরকারী ভবনেরও নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এসব ভবনে প্রতিদিন যাতায়াতকারী লোকদের কয়েক হাজার গাড়ি রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। যা বর্তমানে অনেকটা বৈধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব নৈরাজ্য দেখার কেউ নেই। তবে মাঝে মাঝে ট্রাফিক পুলিশের এসব স্থানে নামকাওয়াস্তে অভিযান চালাতে দেখা গেলেও কয়েকটি গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েই অতি প্রভাবশালী গাড়ি মালিকদের পক্ষ থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ফোন পাওয়ার পর অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। রাজউক দেয়া তথ্যানুয়ায়ী ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা- ২০০৮ প্রণয়নের পূর্বে যে সব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর বেজমেন্টে পার্কিং ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ ভবনেরই পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে এ সব ভবনের অবস্থিত সরকারী- বেসরকারী অফিসে যাতায়াতকারীদের প্রাইভেটকার রাস্তার দু’পাশে নিয়মিতই অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে মতিঝিলের সিটি সেন্টার ও ৩৭ দিলকুশার সানমুন স্টার টাওয়ার ও গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে কর্পোরেশনের নিজস্ব কারপার্কিং সুবিধা রয়েছে কিন্তু বিশেষ উদ্যোগের কারণে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। রাজধানীর কোন কোন স্থানে কারপার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে তা নাগরিকদের জানাতে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয় না। আর এ সুযোগে রাজনৈতিক প্রভাবে অসাধু চক্র রাস্তা ফাঁকা স্থান কিংবা অব্যবহৃত সরকারী-বেসরকারী জায়গাকে কারপার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করে নিত্য যানজটের সৃষ্টি করছে। আর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিমাসে অবৈধভাবে কামিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়নের পর সব আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণের সময় বেজমেন্টে পার্কিং ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। রাজধানীতে যে সব ভবন ১৯৮৪ সালের আগে নির্মিত হয়েছে সেগুলোর কোনটিতে বেজমেন্টে পার্কিং সুবিধা নেই। পরবর্তীকালে কিছু ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু মতিঝিল-দিলকুশা বা ধানম-ি, কারওয়ান বাজারের মতো এলাকায় যত ভবন হয়েছে তার অধিকাংশই বিধিমালা তৈরির আগে নির্মিত হওয়ায় নতুন করে এ সব ভবনে পার্কিং সুবিধা চালু করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর বিভিন্ন ফাঁকা ও পরিত্যক্ত স্থানকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে যত্রতত্র কারপাকিং সমস্যা দূর করা হবে বলে মেয়র ও প্রশাসকরা আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া রাজধানীর সড়কগুলোতে অপরিকল্পিত ও অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ চেষ্টা করলেও তারা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। রাস্তার ওপর, আবাসিক এলাকা, অলিগলিতে গাড়ি পার্কিং করে নিত্য যানজট তৈরি করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে সর্বত্র কারপার্কিং করে রাখা হয়। রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি বা বাড়ির সামনের রাস্তায় পার্কিং অনেকটা বৈধ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন স্থানে সিটি কর্পোরেশনের পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত ফাঁকা জায়গা কারপার্কিংয়ের উপযোগী করে গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত ফির বিনিময়ে সেবা প্রদান করা হবে। এতে অবৈধ কারপার্কিং অনেকাংশে কমবে ও কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া নাগরিকদের কারপার্কিংয়ের স্থান সঠিকভাবে ব্যবহারের বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান জিএম জয়নাল আবেদিন ভূইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে অবৈধ কারপার্কিং বর্তমানে যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মানুযায়ী রাজউক প্রতিটি ভবন তৈরির আগে নক্সা অনুমোদনের সময় কমপক্ষে কতটি গাড়ি বেজমেন্টে পার্কিং করা যাবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। বাণিজ্যিক ও আবাসিক কিছু ভবনের বেজমেন্টের স্থানে নিয়ম না মেনে দোকান ও প্ল্যাট বানিয়ে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে। এতে এসব ভবনে আসা নাগরিক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকেই রাস্তার ওপর পার্কিং করতে দেখা যায়। আমরা কিছুদিন ধরে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং বন্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। আইন না মানায় রাজধানীর উত্তরা, ধানম-ি, গুলসান, মতিঝিলের বেশকিছু বেজমেন্টসহ ভবন সিলগালা করে দিয়েছি। এ অভিযান বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। তবে ফুটপাথে ও রাস্তার ওপর পার্কিং পুরোপুরি বন্ধে ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে যত্রতত্র কারপার্কিং সমস্যা নতুন নয়। বিভিন্ন সময় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো রাস্তায় গাড়ি চলাচল নির্বিঘœ করতে ও নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করতে উদ্যোগ নিলেও তেমন একটা সফলতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় কারপার্কিংয়ের স্থান অতি নগণ্য। বিআরটিএর পক্ষ থেকেও অবৈধ পার্কিং বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পার্কিং করা গাড়িগুলোকে নির্দিষ্ট হারে জরিমানাও আদায় করা হয়। তবে এসব অবৈধ পার্কিং বন্ধে সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কমস্থানে অধিক গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য উন্নত বিশ্বের মতো যুগোপযোগী পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। রাজধানীর কোথায় কোথায় কারপার্কিং করা যাবে আর কোথায় নিষেধ তা নির্ধারণ করতে হবে। স্থান নির্দিষ্ট করে দিলে মানুষ অবৈধভাবে কারপার্কিংয়ে উৎসাহিত হবেন না। ফলে এ কারণে সৃষ্ট যানজটসহ নানা সমস্যা কমে আসবে। তাছাড়া পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত ফি ধার্য করতে হবে। এতে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজউকের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সিটি কর্পোরেশনের দৃঢ়তা প্রয়োজন। সংস্থাগুলো এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মনোযোগী হলে রাজধানীতে অবৈধ কারপার্কিং বন্ধ করা সম্ভব হবে।
×