ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শোডাউন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩ নভেম্বর ২০১৫

অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শোডাউন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুই বিদেশীসহ মুক্তমনা লেখক-প্রকাশকদের গুপ্তহত্যার মাধ্যমে সম্প্রতি দেশে সরকারবিরোধী অপশক্তির অপতৎপরতার জবাব দিতে সোমবার রাজধানীতে বড় ধরনের রাজনৈতিক শক্তির মহড়া দেখাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় লাখো মানুষের সমাগমের মাধ্যমে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত করার মাধ্যমে যে কোন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রাজপথে থেকেই মোকাবেলার সামর্থ্যরেও জানান দিয়েছে দলটি। প্রধানমন্ত্রীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠেও ছিল গুপ্তহত্যাকারী, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার। দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির কারণে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের রাজধানীতে সোমবারই ছিল বড় ধরনের শোডাউন। দেশ ও সরকারবিরোধী যে কোন অশুভ তৎপরতা রাজপথে থেকেই আওয়ামী লীগ যে মোকাবেলায় প্রস্তুত, তারই জানান দিতেই এই রাজনৈতিক শোডাউন করে দলটি। আর বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের নেতারাও জনসমুদ্রে শামিল হওয়া নেতাকর্র্মসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে শামিল আহ্বান জানিয়েছেন। অলসতা কাটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে শহীদ জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক সময় ক্ষমতায় থাকলে আমরা অলস হয়ে পড়ি। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, আমরা যাতে সচেষ্ট থাকি। সব সময় যেন চোখ এবং কান খোলা রাখি। অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনার হাতে অনেক কাজ এখনও রয়েছে। শেখ হাসিনাকে আরও বেশি শক্তি প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সেই একই কারণে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। কী দোষ ছিল বঙ্গবন্ধুর? অপরাধ কী ছিল? বঙ্গবন্ধুর যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে নাই, বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় নাই, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ যেন একটি অচল রাষ্ট্র হয় এ বিশ্বসভায়। তারা ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধু না থাকলে জাতীয় চার নেতা না থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। সেটাই ছিল তাদের প্রচেষ্টা। সে জন্যই ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। বেলা ২টায় জনসভা শুরু করার কথা থাকলেও দুপুর ১২টায় থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে থাকেন। বেলা দুইটা বাজার আগেই জনসভাস্থলে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা আসা আওয়ামী লীগের রাজধানীতে সোমবারই ছিল বড় ধরনের শোডাউন। প্রধানমন্ত্রীর আসার আগে তীব্র মানুষের স্রোতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে আশপাশের পুরো এলাকাই যেন রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বেলা আড়াইটার পর মাঠে স্থান সঙ্কুুলান না হওয়ায় হাজার হাজার মানুষকে শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শুনতে দেখা যায়। দুই বিদেশী হত্যা, তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা করে দুই জনকে হত্যা এবং সবশেষে মুক্তমনা লেখক-প্রকাশক দীপন হত্যাসহ ব্লগারদের ওপর হামলার ঘটনার পর কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে থাকা বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী কী ভাষণ দেন, কী দিক-নির্দেশনা দেন তা শুনার জন্য। জনসভাকে ঘিরে ঢাকা মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের শোডাউনও চোখের পড়ার মতো। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতারা জনসভাকে জনসমুদ্র আখ্যা দিয়ে বক্তৃতা করেন। এছাড়া দলীয় এমপি এবং কাউন্সিলরা বড় ধরনের শোডাউন করে এই জনসভাকে সামনে রেখে। এছাড়া নানা রঙ বেরঙ্গের টুপি (ক্যাপ) পরে হাতে জাতীয় পতাকা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে প্রবেশ করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণ ও উত্তর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় যোগদানের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা গাড়ি নিয়ে এসে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, টিএসসি চত্বর এলাকায় জড়ো হলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে অফিস ফেরত ও বিভিন্ন যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজপথে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে হাজার হাজার যানবাহনকে। জনসভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশকে পাাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তারা যখন হরতাল-অবরোধ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়, তখনই দেশে হত্যাকা- শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এ দেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি, তারাই এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। আজকেও দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছে ওই গোষ্ঠী। দেশ যখন পৃথিবীর বুকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই আবার গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এসব ষড়যন্ত্রকারীরা আবার ধর্মের কথা বলে। পবিত্র শব-ই-বরাতের রাতে যারা বাসে পেট্রোলবোমা মেরে ঘুমন্ত যাত্রীদের হত্যা করে, তাদের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। এরা ধর্মের অপব্যবহার করে কোনদিনই সফল হতে পারবে না। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা কচ্ছপের মতো আবারও মাথা বের করেছে। এরাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছিল- বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নয়, সিভিল ওয়ার চলছে! তাদের কথায় বাংলাদেশ আর উঠবেও না, বসবেও না। কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় নেতা এম মনসুর আলীর ছেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া যখনই আত্মগোপনে কিংবা বিদেশে যান, তখনই দেশে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। খালেদা জিয়ার ঘোমটার নিচে খুনীর কুৎসিত চেহারা আজ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মানবতা ও গণতন্ত্রের কথা বলে মানবাধিকার সংগঠন এ্যামেনেস্টি ইন্টারনেশনাল দেশের জনগণের সঙ্গে ভ-ামি করছে, প্রতারণা করছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার সময় তাদের মানবতা কোথায় ছিল? যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে অপমাণিত করেছে আমরা তাদের বিচার চাই। দেশে কোন আইএস নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আইএস ও জঙ্গীদের নাম করে বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটাছে। তিনি বলেন, যত খুন অন্যায় হয়েছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর আগে এসব খুনের নেতৃত্ব দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশ জঙ্গীবাদের অভয় নগরীতে পরিণত হয়। সেলিম বলেন, খালেদা জিয়া জঙ্গী ও সন্ত্রাস দিয়ে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য কখনও আইএস কখনও জঙ্গীর কথা বলে নানা ঘটনা ঘটাছেন। কিন্তু আইএস বাংলাদেশে নাই।
×