ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুনভাবে ওয়ার্কশপ নির্মাণে ৮১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প

সৈয়দপুরে তৈরি হবে রেলের নতুন যাত্রীবাহী কোচ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩ নভেম্বর ২০১৫

সৈয়দপুরে তৈরি হবে রেলের নতুন যাত্রীবাহী কোচ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে কোচ তৈরির উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনাকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুরে নতুন একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণের মাধ্যমে যাত্রীবাহী কোচ তৈরি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে বছরে ৪০টি মিটার গেজ ও ২০টি ব্রড গেজ নতুন কোচ তৈরি করা সম্ভব হবে। উদ্যোগটি গ্রহণে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণে (দ্বিতীয় এলওসি) এ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হচ্ছে। নতুন ওয়ার্কশপ নির্মাণ প্রকল্পটির বিষয়ে সৈয়দপুরে সমীক্ষা চালিয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে ভারত। এ জন্য প্রকল্প তৈরি করে ভারতে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানাটি অসম বেঙ্গল রেলওয়ে কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সে সময় ২২২ একর জমির মধ্যে ১শ’ ১০ একর জমির ওপর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এ কারখানার ২৬টি শপে বিহার রাজ্যের শ্রমিকরা কাজ করত। সে সময় ভারতের শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি- হলদিবাড়ি নীলফামারীর চিলাহাটি দিয়ে প্রবেশ করে সৈয়দপুর হয়ে দার্জিলিং মেইল ট্রেনটি দর্শনা সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতা নিয়মিত চলাচল করত। সেই থেকে রেলওয়ে কোচের নাট-বল্টু থেকে শুরু করে রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামত হয়ে আসছে। এই কারখানায় এক সময় নতুন কোচ তৈরি করা হতো। অভিযোগ রয়েছে বিএনাপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৩ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নতুন রেলকোচ নির্মাণের প্রকল্প ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন শপটি (সিসিশপ) বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সময় রেলওয়ে পাওয়ার হাউসটিও বন্ধ করে দেয়। ফলে সৈয়দপুরের রেলওয়ে কারখানার গুরুত্ব কমে যায়। ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন শপটি (সিসিশপ) যন্ত্রপাতি লাপাত্তা হয়ে যায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া এই রেলওয়ে কারখানাটির সকল অবকাঠামো নতুন করে সংস্কার শুরু করে। যা আধুনিকায়নের রূপান্তর করা হয় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে। বর্তমানে এখানে যাত্রীবাহী কোচ মেরামত বা সংস্কার ও রং করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ রেল কারখানা। সৈয়দপুর রেল কারখানার গোটা সীমানায় বর্তমানে ১১২ একর জমি পতিত পড়ে রয়েছে। এ জমির ব্যবহার ও রেলওয়ের রোলিং স্টকের সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে নতুন ওয়ার্কশপ তৈরি করা যেতে পারে। সেখানেই নতুন একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবে এখানে ভারতীয় রেলওয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রাইটস লিমিটেড সম্প্রতি সৈয়দপুর রেল কারখানা পরিদর্শন ও একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এখানে নতুনভাবে ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে আর বিদেশ থেকে কোচ আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন। সূত্রমতে, মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই নতুন ওয়ার্কশপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলো। রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলওয়ের বেশকিছু কোচ পুরনো হয়ে গেছে। গত ছয় বছরে রেলওয়ের বহরে নতুন কোচও যুক্ত হয়নি। এতে যাত্রীসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটির মিটারগেজের ৪২ ও ব্রডগেজের ২১ শতাংশ কোচ বিকল পড়ে আছে। এর বড় অংশেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। ফলে মেরামত করেও কোচগুলো চালু করা যাচ্ছে না। আর আগামী বছর নতুন ২৭০টি কোচ রেলের বহরে যুক্ত হলেও চাহিদার তুলনায় তা নগণ্য। তাই নিজস্ব ওয়ার্কশপ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, নতুন ওয়ার্কশপ নির্মাণ প্রকল্পটির বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে ভারত। এ জন্য বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিআর) অনুমোদনের জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে।
×