ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা

আজ থেকে নতুন ভাড়ায় রাজধানীতে চলবে সিএনজি অটোরিক্সা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১ নভেম্বর ২০১৫

আজ থেকে নতুন ভাড়ায় রাজধানীতে চলবে সিএনজি অটোরিক্সা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে নতুন ভাড়ায় রাজধানীতে চলাচল করবে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। তবুও প্রশ্ন হলো আদৌ কি মিটারে যেতে পারবেন নগরবাসী? নাকি অরাজকতা চলবেই। এ বিষয়ে যাত্রীদের মধ্যে যেমন সংশয় আছে, তেমনি খোদ পরিবহন মালিক শ্রমিকরাও নিশ্চিত নন। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, মালিকরা সরকার নির্ধারিত জমা নিলে চালকরা মিটারে যেতে বাধ্য। তবে মালিকরা সরকারী নির্দেশ অমান্য করলে রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। মালিকরা বলছেন, নির্ধারিত জমা আদায় করলেও চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি অর্থ আদায় করেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। মালিক ও চালকরা বাড়তি জমা ও ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা। সিলগালা করে দেয়া হবে মালিকদের গ্যারেজও। এ ছাড়াও আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলা জরিমানা করা হবে। এদিকে অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, অটোরিক্সার সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করে মালিকদের জমা নির্ধারণ করা হয়নি। কারণ নগরীতে নিবন্ধিত ১৩ হাজার অটোরিক্সা মাসে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বিশ্লেষণ করে জমা নির্ধারণ করা হয়েছিল নয় বছর আগে। গাড়ির মেয়ার উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখন তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ফের ব্যয় নির্ধারণ করে প্রতিদিনের জমা ৯০০ টাকা করা হয়েছে যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। প্রকৃত অর্থে ব্যয় নির্ধারণ হলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি হবে না। নেতৃবৃন্দ বলছেন, সরকার কঠোর না হলে অটোরিক্সা মালিকদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু গ্যারেজ মালিক দুই শিফটে এক হাজার ৮০০ টাকায় গাড়ি ভাড়া দেয়া শুরু করেছেন। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের জন্য অটোরিক্সার কিলোমিটার প্রতি যে ভাড়া এবং মালিকদের দৈনিক জমার পরিমাণ ঠিক করে দিয়েছিল, তা কখনই কার্যকর করা যায়নি। মালিক বেশি জমা আদায় করে এবং যানজটের মধ্যে মিটারে গেলে পোষায় নাÑ এই যুক্তিতে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে আসছেন চালকরা। উপায়হীন যাত্রীরাও মিটারে ওঠা ভাড়ার দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা খরচ করে অটোরিক্সায় চড়তে বাধ্য হচ্ছেন। গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য নিয়ে খোদ মন্ত্রীও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু সরকারের কোন নির্দেশ কাজে আসেনি। এক যুগেও এই গণপরিবহনটিকে আইন মেনে চলাচল করতে বাধ্য করা যায়নি। নতুন ভাড়ায় অটোরিক্সায় প্রথম দুই কিলোমিটারে দিতে হবে ৪০ টাকা। মালিকদের জমা বাড়িয়ে ৬০০ টাকার স্থলে করা হয়েছে ৯০০ টাকা। ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ক্ষেত্রে দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়াও তাই। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া সাত টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে। যানজট বা অন্য কোন কারণে আটকে থাকলে প্রতি মিনিট বিরতির জন্য গুণতে হবে ২ টাকা করে, আগে যা ১ টাকা ৪ পয়সা ছিল। চালকদের জন্য দৈনিক জমার পরিমাণও বেড়েছে। তবে ভাড়া বাড়ানোর পরও চালকরা মিটারে যেতে রাজি হবেন কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু আদৌ এটি কেউ মানবে কি না তা নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ এই সেক্টরে কারও কথা কেউ শোনে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত জমা হওয়ার কারণে চালকদের সরকার নির্ধারিত ভাড়া মেনে চলার বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া, অটোরিক্সার অরাজকতা বন্ধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। এতে খুব একটা কাজ হবে না। সরকার নির্ধারিত জমা যদি মালিকরা মেনে চলেন তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য মালিকদের বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়ার পরামর্শ এই শ্রমিক নেতার। তিনি আরও বলেন, অনেক মালিক এখনই দিনে এক হাজার ২০০ টাকা জমা নেন। যদি তারা ৯০০ টাকা করে নেন তাহলে মিটারে চালাতে আপত্তি থাকবে কেন? তাছাড়া একটি অটোরিক্সার ২৪ ঘণ্টার জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু মালিকরা তো দুই শিফটে গাড়ি চালান। তাহলে তাদের প্রতিদিনের আয় এক হাজার ৮০০ টাকা। তিনি বলেন, কোন মালিক সরকারী সিদ্ধান্ত মানতে না চাইলে তার রুট পারমিট বাতিল করার বিধান চালু করতে হবে। অটোরিক্সার মিটারে সফটওয়্যার ডাউনলোডকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টাল এজেন্সির কর্ণধার ওয়াহিদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, সাধারণ যাত্রীদের এই যানটি আরও বাড়ানো উচিত। তাছাড়া অনেক অটোরিক্সায় নতুন সফটওয়্যার ডাউনলোড করা হলেও ওয়ান টাইম লক ব্যবহার করা হয়নি। এতে মিটার টেম্পারিং করার সুযোগ থাকে। ফলে পকেট কাটা যাবে যাত্রীদের। দেখা যাবে গাড়ি মিটারে চললেও ভাড়া দিতে হবে অনেক বেশি। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএইচ ইকবাল মিরাজ বলেন, যদি কোন মালিক অতিরিক্ত জমার টাকা আদায় করে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব। একই সঙ্গে দাবি জানাব ওই মালিকের রুট পারমিট যেন বাতিল করে দেয়া হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিআরটিএ’র সঙ্গে মালিক সমিতিও মাঠে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাও এতটা লোভী হতে চাই না। সরকার যে সুযোগ দিয়েছে তাতে আমরা চাই, এবার অন্তত যেন অটোরিক্সা মিটারে চলে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর উপ-পরিচালক মাহবুবে রাব্বানি জানিয়েছেন, অটোরিক্সা যাতে মিটারে চলে সেজন্য তাদের কড়া নজরদারি থাকবে। তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিক্সা মিটারে চলছে কি না তা দেখতে ইতোমধ্যে চালক, মালিক, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম তৈরি করা হয়েছে। ১ নবেম্বর থেকেই এ টিম কাজ শুরু করবে। এ ছাড়াও রাস্তায় বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট থাকবে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া মাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, কোন মালিক যদি নির্ধারিত হারের বেশি জমার টাকা নেয় এবং আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি বরকতউল্ল্যাহ বুলু জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া ও জমা শতভাগ মেনে চলতে অটোরিক্সা মালিক শ্রমিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা চাই সবকটি গাড়ি মিটারে চলবে। অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও টাস্কফোর্সের সদস্য হানিফ খোকন বলেন, আমাদের লক্ষ্য মালিক ও চালকদের নিয়মের মধ্যে আনা। আর কোন অরাজকতা সহ্য করা হবে না। আমরা অটোরিক্সার ভাড়া নৈরাজ্যের বদনাম মুছে ফেলতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
×