ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুকুমার রায়

বুদ্ধিমানের সাজা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

বুদ্ধিমানের সাজা

আলি শাকালের মতো ওস্তাদ আর ধূর্ত নাপিত সে সময় মেলাই ভার ছিল। বাগদাদের যত বড় লোক তাকে দিয়ে খেউড়ি করাতেন, গরিবকে সে গ্রাহ্যই করত না। একদিন এক গরিব কাঠুরে ঐ নাপিতের কাছে গাধা বোঝাই ক’রে কাঠ বিক্রি করতে এলো। আলি শাকাল কাঠুরেকে বলল, ‘তোমার গাধার পিঠে যত কাঠ আছে সব আমাকে দাও; তোমাকে এক টাকা দেব।’ কাঠুরে তাতেই রাজি হয়ে গাধার পিঠের কাঠ নামিয়ে দিল। তখন নাপিত বলল, ‘সব কাঠ তো দাওনি; গাধার পিঠের ‘গদি’টা কাঠের তৈরি; ওটাও দিতে হবে।’ কাঠুরে তো কিছুতেই রাজি হলো না; কিন্তু নাপিত তার আপত্তি গ্রাহ্য না ক’রে গদিটা জবরদস্তি ক’রে কেড়ে নিয়ে, কাঠুরেকে এক টাকা দিয়ে বিদায় করে দিল। কাঠুরে বেচারা আর কি করে? সে গিয়ে খলিফার কাছে তার নালিশ জানাল। খলিফা বললেন, ‘তুমি তো ‘গাধার পিঠের সমস্ত কাঠ’ দিতে রাজি ছিলে; তবে আর এখন আপত্তি করছ কেন? কথামতই তো কাজ হয়েছে।’ তারপর কাঠুরের কানে ফিস্ফিস্করে কি জানি বললেন; কাঠুরেও মুচ্ হেসে, ‘যো হুকুম’ বলে সেলাম ঠুকে চলে গেল। কিছুদিন বাদে কাঠুরে আবার নাপিতের কাছে এসে বলল, ‘নাপিত সাহেব, আমি আর আমার সঙ্গীকে খেউড়ি করার জন্য তোমাকে ১০ টাকা দেব, তোমার মত ওস্তাতদের হাতে অনেক বেশি টাকা দিয়েও খেউড়ি হতে পারলে জন্ম সার্থক হয়। তুমি কি রাজি আছ?’ নাপিত তো খোসামোদে ভুলে, কাঠুরেকে কামিয়ে চট্্দিল; তারপর তাকে বলল, ‘কৈ হে তোমার সঙ্গী?’ কাঠুরে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে তার গাধাটি এনে হাজির করল। নাপিত তো বেজায় চটে গিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, ঘুষি বাগিয়ে বলল, ‘এত বড় বেয়াদবি আমার সঙ্গে! সুলতান, খালিফ, আগা, বেগ যার হাতে খেউড়ি হবার জন্য সর্বদাই খোসামোদ করে, সে কিনা গাধাকে কামাবে! বেরোও এখনি এখান থেকে!’ কাঠুরে নাপিতের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সটান গিয়ে খালিফের কাছে হাজির। খালিফ তার নালিশ শুনে আলি শাকালকে ডেকে পাঠালেন। নাপিত এসেই হাত জোড় করে বলল, ‘দোহাই ধর্মাবতার! গাধাকে কি কখনও মানুষের সঙ্গী ব’লে ধরা যেতে পারে?’ খালিফ বললেন, ‘তা না হতেও পারে, কিন্তু গাধার পিঠের গদিও কি কখনও কাঠের বোঝার মধ্যে ধরা যেতে পারে? তুমিই একথার জবাব দাও।’ নাপিত তো একেবারে চুপ! কিছুক্ষণ বাদে খালিফ বললেন, ‘আর দেরি কেন? গাধাকে কামিয়ে ফেল; কথা-মতো কাজ না করতে পারলে তার উচিত সাজার ব্যবস্থা হবে জানই তো।’ নাপিত বেচারা আর করে কি? গাধাকে বেশ ক’রে খুর বুলিয়ে কামাতে লাগল। সে তামাসা দেখবার জন্য চারদিকে ভিড় জমে গেল। কামান শেষ হতেই নাপিত অপমানে মাথা হেঁট ক’রে বাড়িতে পালাল। কাঠুরেও নেড়া গাধায় চ’ড়ে নাচ্তে নাচ্তে বাড়ি পালাল।
×