ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেচে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প

লক্ষ্য বাড়তি ৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

লক্ষ্য বাড়তি ৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন

সমুদ্র হক ॥ পরিবেশ রক্ষায় ও ভূগর্ভের প্রাকৃতিক কাঠামো ঠিক রাখতে সেচ ব্যবস্থায় ভূ-উপরিভাগের পানি (সারফেস ওয়াটার) ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় দেশজুড়ে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিকে ভূ-উপরিভাগের সেচের আওতায় আনা হচ্ছে। এই সেচে বাড়তি প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও খাদ্যশস্য রফতানির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে এমনটিই আশা করছে সেচ ও কৃষি বিভাগ। সূত্র জানায়, গত শতকের শেষ দিক থেকে (১৯৯৯) বিচ্ছিন্নভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় এই কর্মসূচী চালু হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ৩২ জেলার ৯৫ উপজেলায় তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিকে ভূ-উপরিস্থ সেচের আওতায় এনে প্রায় ১৭ হজার মে. টনেরও বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। ভূগর্ভের পানির চাপ কমাতে ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা বাড়াতে চলতি বছরে তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডাবল লিফটিংয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ সুবিধা বাড়ানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা ২৬ জেলার ৭৯ উপজেলায় বাস্তবায়িত করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। শীতের শুষ্ক মৌসুমে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ পানির (সেচের) ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে দেশের প্রতিটি গ্রামের কৃষকের ঘরে ৩ থেকে ১০ অশ্ব ক্ষমতার (হর্স পাওয়ার) সেচ যন্ত্র (শ্যালো ইঞ্জিন) ও পাম্প মেশিন আছে। মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গেই তারা ডিজেল চালিত এই যন্ত্র মাঠে নামায়। প্রতিবছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বোরো ধান ও গম উৎপাদনে সেচ যন্ত্র ঠিকমতো চালাতে নিরবচ্ছিন্ন ডিজেল সরবরাহ করে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তাদের পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পবিস) আওতায় বিদ্যুত চালিতে সেচে নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেড ছাড়াই বিদ্যুত সরবরাহ করে। সব কিছুই করা হয় ভূগর্ভের পানি তুলে। ভূ-বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই আভাস দিয়েছেন ভূ-অভ্যন্তরের পানি যন্ত্র শক্তি দিয়ে তোলার পর আনুপাতিক হারে বৃষ্টি দরকার। না হলে যে পরিমাণ পানি উত্তোলিত হয় তা পুনর্ভরণ (রিচার্জ) হয় না। এই অবস্থায় ভূ-অভ্যন্তরের প্রাকৃতিক গঠন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এতে ভূমি ধস ছাড়াও ভূ-কম্পনে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। এদিকে সেচ কাজে শ্যালো ইঞ্জিনের ব্যবহারের পাশাপশি এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত মাটির নিচে এবং নদীর তলদেশ হতে বেশি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করছে। একই শ্যালো ইঞ্জিনের দ্বৈত ব্যবহারে মাটির তলদেশে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। যা সামান্য ভূ-কম্পনেই বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
×