ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কালো বালির চালান ও ভারতীয় রুপী আটকের ঘটনার সুরাহা হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

কালো বালির চালান ও ভারতীয় রুপী আটকের ঘটনার সুরাহা হয়নি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে দু’দফায় প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ভারতীয় রুপী আটকের ঘটনার তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। শুধু তাই নয়, আটককৃত এসব ভারতীয় রুপী নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকেও জমা দেয়া হয়নি। অপরদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজীকরণকালে ১৭ কন্টেনার বোঝাই কালো বালির একটি চালান আটক হওয়ার ঘটনারও নিষ্পত্তি হয়নি। উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে দুবাই থেকে আসা একটি কন্টেনারে পাওয়া যায় ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ভারতীয় রুপী। এরপরে গত ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ৬৮ লাখ ভারতীয় রুপী। সমুদ্র বন্দরে আটক ভারতীয় রুপীর ঘটনার তদন্তভার দেয়া হয়েছে সিআইডিকে। পক্ষান্তরে, বিমানবন্দরে আটক রুপীর ঘটনা তদন্তভার দেয়া হয়েছে পতেঙ্গা পুলিশকে। সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি বিধান অনুযায়ী আটককৃত এসব বিদেশী অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু কি কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা এখনও পালন করেনি তা অজ্ঞাত। শুধু তাই নয়, এই রুপী আসল না নকল তার ফল এখনও পাওয়া যায়নি। রুপী পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে কিনা তাও এখনও অজ্ঞাত। কি কারণে ভারতীয় রুপী আটকের ঘটনা নিয়ে তদন্ত সংস্থাগুলো গো-স্লো পদ্ধতি অবলম্বন করছে তা নিয়ে কারও কোন বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একটি সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী তদন্ত কাজ চলছে। একই বক্তব্য দিয়েছে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথে হরহামেশাই জাল নোটের পাচার ঘটনা ঘটে আসছে বহু আগে থেকেই। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশী জাল টাকাও ভারত হয়ে বাংলাদেশের বাজারে চলে আসে। স্থল সীমান্ত পথে চোরাকারবারিরা এ ধরনের জাল নোট ব্যবহার করে থাকে বলে এর চাহিদা রয়েছে। তবে সমুদ্র পথে ভারতীয় রুপীর যে বিরাট চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়েছে তা পাকিস্তানের করাচি থেকে দুবাই হয়ে এসেছে বলে তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য পৌঁছেছে। কিন্তু এর সত্যতা নিরুপণ করা যায়নি। এ অবস্থায় তদন্তের পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের পক্ষে এ ঘটনাটি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে তদন্তে ফলাফল কি বেরিয়ে আসছে তা দেখার অপেক্ষায় তারা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় রুপীর এ দুটি ঘটনা ধরা পড়লেও বিভিন্ন চোরাইপথে রুপী এবং টাকা দেদারছে সীমান্ত অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশী এক হাজার ও ৫শ’ টাকার নোট দেশের অভ্যন্তর ছাড়াও বাইরের দেশগুলোতে জাল ছাপা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনুরূপভাবে ভারতীয় রুপীও বাইরে যে ছাপা হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। এবার ভারতীয় যে রুপীগুলো ধরা পড়েছে তা জাল বলা বেশ কঠিন। কারণ, রুপীর প্রকৃত অবয়ব যেরকম এসব নোটে এর কোন ব্যত্যয় নেই। ফলে খোলাচোখে এগুলোকে জাল বলা দুঃসাধ্য। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন এ দু’টি ঘটনার মামলার তদন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার আশাবাদী। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে ১৭ কন্টেনার বোঝাই কালো বালি চীনে অবৈধভাবে রফতানিকালে আটক হওয়ার ঘটনাটিরও কোন অগ্রগতি নেই। কাস্টম সূত্র জানিয়েছে, আটক বালির নমুনা পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঢাকার একটি রফতানিকারক সংস্থা এই বালির রফতানিকারক। চীনের একটি প্রতিষ্ঠান এর আমদানিকারক। জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা এবং ইনানী, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার এমনকি কুতুবদিয়ার চরে জোয়ারের টানে এক ধরনের কালো বালি চলে আসে। এসব বালিতে নাকি এক ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে। যা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এ বিষয়টি জেনেই ঢাকার ওই রফতানিকারক ১৭ কন্টেনারযোগে ২৪০ টন কালো বালি রফতানির জন্য বন্দরে নিয়ে আসে। অথচ, এ ধরনের বালি রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বহু আগে। অতীতে এ বালি সংগ্রহ করে খনিজ পদার্থ আহরণের একটি প্রক্রিয়া প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এতে পরিবেশের ক্ষতি ডেকে আনবে বিধায় শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, ইনানী ও সেন্টমার্টিনের কালো বালিতে ৫ প্রকারের খনিজ সম্পদ রয়েছে। এ বালি আহরণের পর তা থেকে প্রক্রিয়াজাত করে খনিজ সম্পদ বের করে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের নিশ্চিত সম্ভাবনার কথা বহু আগে থেকে বলা হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে এতে পরিবেশের ক্ষতি যে ডেকে আনবে তা নিশ্চিত হওয়ার পর এ প্রকল্প বাতিল করে দেয়।
×