ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পানি সঙ্কট, পাহাড়ী ঢল, বন্যা, কর্ম বিমুখতা ও দখলের ভয়ে বর্গা না দেয়া অন্যতম কারণ

সিলেটে ২৫ শতাংশ জমি অনাবাদী

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

সিলেটে ২৫ শতাংশ জমি অনাবাদী

স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস ॥ সেচ সঙ্কট, পাহাড়ি ঢল, অকাল ও কৃত্রিম বন্যাসহ নানা কারণে সিলেট অঞ্চলের আবাদযোগ্য জমির প্রায় ২৫ শতাংশই চাষাবাদের আওতায় আসছে না। বিভিন্ন উপজেলায় চাষাবাদের উপযোগী বিশাল হাওর এলাকা সেচ সঙ্কটের কারণে বছরের পর বছর অনাবাদী পড়ে আছে। অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা ও সেচ সুবিধার লক্ষ্যে সরকারীভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা অনিয়মের কারণে এতে সফলতা আসেনি। জকিগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে মইলা ও বালাই হাওর। এই হাওর এলাকার জমি চাষাবাদের আওতাও নিয়ে আসার জন্য ২০০২ সালে সুরমা কুশিয়ারা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্প কৃষকের কোন উপকারে আসেনি। জমি অধিগ্রহণে প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা ব্যয় ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেচ সঙ্কট ও অকাল বন্যার কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিশাল হাওর এলাকা অনাবাদী পড়ে আছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলায় মাটির নীচে গ্যাস ও পাথরের কারণে নলকূপ স্থাপনে সমস্যা পোহাতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারীভাবে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সিলেটে প্রায় দুই লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জমি আবাদের আওতায় আনা হলে বছরে কমপক্ষে আরও ৬ লাখ টন ফসল উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও নানা সচেতনতামূলক প্রচারণার ফলে সিলেটে আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ৫/৬ বছর আগেও সিলেটে মোট আবাদযোগ্য জমির ৩৫ শতাংশই অনাবাদী অবস্থায় ছিল। এ বছর তা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। সিলেটে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৮ হেক্টর। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের মাটির নিচে পানি পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস ও পাথর উঠে আসে। এছাড়া জমিগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় এতে সেচ প্রদান প্রায়শই সম্ভব হয় না। ফলে জমিগুলোর বেশিরভাগই থেকে যায় অনাবাদী। কেবল সেচের ব্যবস্থা করতে পারলেই সিলেট অঞ্চলে বোরোর আবাদ অনেক বেড়ে যেত। সেচ সঙ্কট ছাড়াও শ্রমিক সঙ্কটের কারণেও সিলেটে অনাবাদী থেকে যায় অনেক জমি। এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় জমির বড় একটা অংশের মালিক হচ্ছেন প্রবাসীরা। বেহাত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জমি বর্গা দেয়া থেকে বিরত থাকেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, সিলেটে জমি দখলের প্রবণতা বেশি। সিলেটের আদালত ও থানায় যত মামলা আছে তার বেশিরভাগই জমি সংক্রান্ত। প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি দখল-পুনর্দখল নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে সবসময় জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগেন প্রবাসীরা। ফলে তারা জমি বর্গা দিতে চান না। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনরা প্রবাসে থাকায় সিলেটে বসবাসকারীরা অনেকটাই কর্মবিমূখ। এসব কারণে বছরের পর বছর ধরে জমি পতিত পড়ে থাকে। এখানকার অনেক জমি উৎপাদনের আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। এছাড়া গরীব কৃষকের অনেকেই পাহাড়ি ঢলে ফসলহানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে উৎপাদনে যেতে চান না । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, মূলত সেচের অভাবের কারণেই সিলেটে বিশাল অংশের জমি পতিত থেকে যাচ্ছে। এখানকার বেশিরভাগ এলাকার মাটির নিচে গ্যাস ও পাথর। তাই পানি পাওয়া যায় না। সরকারী উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করলে অনেক জমিই চাষের আওতায় চলে আসতো। এছাড়া নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে আউশ মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদী থাকে। কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, আমরা কৃষকদের বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করতে সচেতন করে তুলছি। প্রচারণা চালাচ্ছি। এতে অনেক সুফল পাওয়া গেছে। অনাবাদী জমির পরিমাণও কমেছে।
×