ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বস্তিবাসী দুঃখে যাদের জীবন গড়া

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

বস্তিবাসী দুঃখে যাদের জীবন গড়া

দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে- পত্রিকার সংবাদ তা-ই বলে। আসলে মধ্যম আয়ের দেশ বলতে কি বোঝায়? ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলার পর্যন্ত মাথাপিছু আয়ের দেশগুলোকে মধ্যম আয়ের দেশের শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ৪ হাজার ১২৫ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশগুলোকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। আর ৪ হাজার ১২৬ ডলার থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলার আয়ের দেশগুলোকে বলা হচ্ছে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ। এর ওপরে মাথাপিছু আয়ের দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ আয়ের দেশ। ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি। এর প্রায় ৪০ লাখ বসবাস করে ৪৭২০টি বস্তিতে। এদের বেশিরভাগই আবার নিরুপায় হয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসেছে। স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে হয় বলে ভাল আবাসন জোটেনি তাদের। জন্ম থেকেই অবহেলিত বস্তিবাসীরা। বস্তিতে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ ন্যূনতম জীবনমানও নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। এরও আগে আমরা শুনেছিলাম তলাবিহীন ঝুড়ির কথা। মাঝখানে আমাদের বলা হতো উন্নয়নশীল দেশ। আশার কথা, এখন আমাদের দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নত হয়েছে। গোটা বাংলাদেশের জন্য এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। সবই অবশ্য পত্রিকার খবর। বাস্তবের সঙ্গে এর কতটুকু মিল রয়েছে তাই এখন দেখার বিষয়। যে দেশে এখনও লাখ লাখ যুবক বেকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অসহায়, অন্য দেশের নিকট সাহায্যের জন্য কড়া শর্তে ঋণগ্রহণ করতে হয়, বিশেষ করে এখনও রাজনীতির কলকাঠি নাড়েন দাতা সংস্থা, বিদেশী রাষ্ট্রগুলো। এখনও নদীভাঙ্গনে কাঁদছে মানুষ। বাড়িঘর হারা মানুষগুলো যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। নদী তীরবর্তী মানুষগুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বস্তিগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। দিন দিন বস্তির সংখ্যা কেবল বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (বিবিএস) একটি শুমারি জরিপ করেছে বস্তির ওপর। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যায়, সারাদেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা সাড়ে ২২ লাখ। আর বস্তির সংখ্যা ছিল সর্বমোট ১৩ হাজার ৯৪৩টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেই ছিল ৩ হাজার ৩৯৯টি। ওই শুমারিতে এটাও দেখা যায়, গোটা বাংলাদেশে ভাসমান লোকের সংখ্যা ছিল ১৬,৬২১ জন। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকায় বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও কখনই স্থায়ী কোন সমাধানের ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। সব সরকারের আমলে খাসজমিতে সন্ত্রাসী-মাস্তানরা বস্তি বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দ্রুত বস্তিবাসীদের এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। সরকারও এ সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে রাজধানীর বুকে বস্তিবাসীকে ২৬০ টাকা দৈনিক জমায় একটি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিস্তির টাকা পরিশোধ করে ২০ বছর পর ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার সুযোগ পাবে তারা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউপিপিআরের (আরবান পার্টনারশিপস ফর প্রোভার্টি রিডাকশন প্রজেক্ট) জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ২১ ভাগ। এর মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। এসব হতদরিদ্র মানুষই দেশের বস্তিগুলোতে বসবাস করছেন। আবুল খায়ের ভূঁইয়া ঢাকা
×