ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুকুমার রায়

বাজে গল্প

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

বাজে গল্প

বাজে গল্প-১ দুই বন্ধু ছিল। একজন অন্ধ আরেকজন বদ্ধ কালা। দুইজনে বেজায় ভাব। কালা বিজ্ঞাপনে পড়িল আর অন্ধ লোকমুখে শুনিল কোথায় যেন- যাত্রা হইবে, সেখানে সঙেরা নাচগান করিবে। কালা বলিল, ‘অন্ধ ভাই, চল, যাত্রায় গিয়া নাচ দেখি।’ অন্ধ হাত নাড়িয়া গলা খেলাইয়া কালাকে বুঝাইয়া দিল ‘কালা ভাই, চল, যাত্রায় নাচগান শুনিয়া আসি।’ দুইজনে যাত্রার আসরে গিয়া বসিল। রাত দুপুর পর্যন্ত নাচগান চলিল, তারপর অন্ধ বলিল, ‘বন্ধু গান শুনিলে কেমন? কালা বলিল, ‘আজকে তো নাচ দেখিলাম-গানটা বোধ হয় কাল হইবে।’ অন্ধ ঘন ঘন মাথা নাড়িয়া বলিল, ‘মূর্খ তুমি! আজ হইল গান-নৃত্যটাই বোধ হয় কাল হইবে।’ কালা চটিয়া গেল। সে বলিল, ‘চোখে দেখ না, তুমি নাচের মর্ম জানিবে কি?’ অন্ধ তাহার কানে আঙ্গুল ঢুকাইয়া বলিল, ‘কানে শোন না, গানের তুমি কাঁচকলা বুঝিবে?’ কালা চিৎকার করিয়া বলিল, ‘আজকে নাচ, কালকে গান, ‘অন্ধ গলা ঝাঁকড়াইয়া আর ঠ্যাং নাচাইয়া বলিল, ‘আজকে গান, কালকে নাচ।’ সেই হইতে দুজনের ছাড়াছাড়ি। কালা বলে, ‘অন্ধটা এমন জুয়াচোর- সে দিনকে রাত করিতে পারে।’ অন্ধ বলে, ‘কালাটা যদি নিজের কথা শুনিতে পাইত, তবে বুঝিত সে কতবড় মিথ্যাবাদী। বাজে গল্প-২ কলকেতার সাহেববাড়ি থেকে গোষ্ঠবাবুর ছবি এসেছে। বাড়িতে তাই হুলু¯ূ’ল। চাকর বামুন ধোপা নাপিত দারোগা পেয়াদা সবাই বলে, ‘দৌড়ে চল, দৌড়ে চল।’ যে আসে সেই বলে, ‘কি চমৎকার ছবি। সাহেবের আঁকা।’ বুড়ো যে সরকারমশাই, তিনি বললেন, ‘সব চাইতে সুন্দর হয়েছে বাবুর মুখের হাসিটুকু- ঠিক তাঁরই মতন ঠা-া হাসি।’ শুনে অবাক হয়ে সবাই বলল, ‘যা হোক! সাহেব হাসিটুকু ধরেছে, হাসিটুকু ধরেছে খাসা।’ বাবুর যে বিষ্টুখুড়ো তিনি বললেন, ‘চোখ দুটো যা এঁকেছে, ওরই দাম হাজার টাকা- চোখ দেখলে, গোষ্ঠর ঠাকুরদার কথা মনে পড়ে।’ শুনে একুশজন একবাক্যে হাঁ-হাঁ করে সায় দিয়ে উঠল। রেধো ধোপা তার কাপড়ের পোঁটলা নামিয়ে বলল, ‘তোফা ছবি। কাপড়খানার ইস্ত্রি যেন রেধো ধোপার নিজের হাতে করা।’ নাপিত তার খুরের থলি দুলিয়ে ‘আমি উনিশ বছর বাবুর চুল ছাঁটছি- আমি ঐ চুলের কেতা দেখেই বুঝতে পারি, একখানা ছবির মতন ছবি। আমি যখনই চুল ছাঁটি, বাবু আয়না দেখে ঐরকম খুশি হন।’ বাবুর আহলাদী চাকর কেনারাম বলল, ‘বলব কি ভাই, এমন জলজ্যান্ত ছবি- আমি তো ঘরে ঢুকেই এক পেনাম ঠুকে চেয়ে দেখি, বাবু তো নয়-ছবি।’ সবাই বলল, ‘তা ভুল হবারই কথা-আশ্চর্য ছবি যা হোক।’ তারপর সবাই মিলে ছবির নাকমুখ, গোঁফদাড়ি সমস্ত জিনিসের খুব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আলোচনা করে প্রমাণ করলেন যে সব বিষয়েই বাবুর সঙ্গে আশ্চর্য রকম মিলে যাচ্ছে- সাহেবের বাহাদুরি বটে! এমন সময় বাবু এসে ছবির পাশে দাঁড়ালেন। বাবু বললেন, ‘একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। কলকেতা থেকে ওরা লিখছে যে ভুলে আমার ছবি পাঠাতে কার যেন ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে। ওটা ফেরত নিতে হবে।’ শুনে সরকারমশাই মাথা নেড়ে বললেন, ‘দেখেছ! ওরা ভেবেছে আমায় ঠকাবে! আমি দেখেই ভাবছি অমন ভিরকুটি দেয়া প্যাখনা হাসি-এ আবার কার ছবি।’ খুড়ো বললেন, ‘দেখ না! চোখদুটো যেন উল্টে আসছে- যেন গঙ্গাযাত্রা জ্যান্ত মড়া!’ রেধো ধোপা, সেও বলল, ‘একটা কাপড় পরেছে যেন চাষার মত। ওর সাতজন্মে কেউ যেন পোশাক পরতে শেখেনি।’ নাপিতভায়া মুচকি হেসে মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘চুল কেটেছে দেখ না- যেন মাথার ওপর কাস্তে চালিয়েছে। কেনারাম ভীষণ খেপে চেঁচিয়ে বলল, ‘আমি সকাল বেলায় ঘরে ঢুকেই চোর ভেবে চমকে উঠেছি। আরেকটু হলেই মেরেছিলাম আর কি! আবার এরা বলছিল, ওটা নাকি বাবুর ছবি। আমার সামনে ও কথা বললে মুখ থুড়ে দিতুম না!’ তখন সবাই মিলে একবাক্যে বলল যে, সবাই তারা টের পেয়েছিল, এটা বাবুর ছবি নয়। বাবুর নাক কি অমন চ্যাটালো? বাবুর কি হাঁসের পায়ের মতো কান? ও কি বসেছে না ভালুক নাচছে? বাজে গল্প-৩ কতগুলো ছেলে ছাদের ওপর হুড়োহুড়ি করে খেলা করছে- এমন সময়ে একটা মারামারির শব্দ শোনা গেল। তারপরেই হঠাৎ গোলমাল থেমে গিয়ে সবাই মিলে “হারু পড়ে গেছে” বলে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলল। খানিক বাদেই শুনি একতলা থেকে কান্নাকাটির শব্দ উঠছে। বাইরের ঘরে যদুর বাবা গণেশবাবু ছিলেন-তিনি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে?” শুনতে পেলেন ছেলেরা কাঁদছে “হারু পড়ে গেছে।” বাবু তখন দৌড়ে গেলেন ডাক্তার ডাকতে। পাঁচ মিনিটে ডাক্তার এসে হাজির- কিন্তু হারু কোথায়? বাবু বললেন- “এদিকে তো পড়েনি, ভেতর বাড়িতে পড়েছে বোধহয়।” কিন্তু ভেতর বাড়িতে মেয়েরা বললেন, “এখানে তো পড়েনি- আমরা ভাবছি বার বাড়িতে পড়েছে বুঝি।” বাইরেও নেই, ভেতরেও নেই, তবে কি ছেলে উড়ে গেল? তখন ছেলেদের জিজ্ঞাসা করা হল, “কোথায় রে? কোথায় হারু?” তারা বলল, “ছাদের ওপর।” সেখান গিয়ে তারা দেখে হারুবাবু অভিমান করে বসে বসে কাঁদছেন! হারু বড় আদুরে ছেলে, মারামারিতে সে পড়ে গেছে দেখেই আর সকলে মার খাবার ভয়ে সেখানে থেকে চম্পট দিয়েছে। “হারু পড়ে গেছে” বলে এত যে কান্না, তার অর্থ, সকলকে জানানো হচ্ছে যে “হারুকে আমরা ফেলে দিই নি- সে পড়ে গেছে বলে আমাদের ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে।” হারু তখন সকলের নামে বাবার কাছে নালিশ করবার জন্য মনে মনে অভিমান জমিয়ে তুলছিল- হঠাৎ তার বাবাকে লোকজন আর ডাক্তারসুদ্ধ এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে তার আর নালিশ করাই হল না। যাহোক, হারুকে আস্ত দেখে সবাই এমন খুশি হল যে, শাসনটাসনের কথা কারো মনেই এলো না। সবচেয়ে বেশি জোরে কেঁদেছিলেন হারুর ঠাকুরমা। তিনি আবার কানে শোনেন কিছু কম। তাঁকে সবাই জিজ্ঞাসা করল, “আপনি এত কাঁদছিলেন কেন?” তিনি বললেন, “আমি কি অত জানি? দেখলুম ঝিয়েরা কাঁদছে, বৌমা কাঁদছেন তাই আমিও কাঁদতে লাগলুম- ভাবলুম একটা কিছু হয়ে থাকবে।” কুকুরের মালিক ভজহরি আর রামচরণের মধ্যে ভারি ভাব। অন্তত, দুই সপ্তাহ আগেও তাহাদের মধ্যে খুবই বন্ধুতা দেখা যাইত। সেদিন বাঁশপুকুরের মেলায় গিয়া তাহারা দুইজনে মিলিয়া একটা কুকুরছানা কিনিয়াছে। চমৎকার বিলাতি কুকুর-তাহার আড়াই টাকা দাম। ভজুর পাঁচসিকা আর রামার পাঁচসিকা- দুইজনের পয়সা মিলাইয়া কুকুর কেনা হইল। সুতরাং দুইজনেই কুকুরের মালিক। কুকুরটাকে বাড়িতে আনিয়াই ভজু বলিল, “অর্ধেকটা কুকুর আমার, অর্ধেকটা তোর।” রামা বলিল, “বেশ কথা! মাথার দিকটা আমার লেজের দিকটা তোর।’ ভজু একটু ভাবিয়া দেখিল মন্দ কি! মাথার দিকটা যাহার সেই তো কুকুরকে খাওয়াইবে, যত হাঙ্গাম সব তাহার। তাহা ছাড়া কুকুর যদি কাহাকেও কামড়ায় তবে মাথার দিকের মালিকই দায়ী, ল্যাজের মালিকের কোন দোষ দেওয়া চলিবে না। সুতরাং সে বলিল, “আচ্ছা, ল্যাজের দিকটাই নিলাম।” দুইজনে দুপুরবেলায় বসিয়া কুকুরটার পিঠে হাত বুলাইয়া তোয়াজ করিত। রামা বলিত, “দেখিস, আমার দিকে হাত বোলাস নে।” ভজু বলিত, “খবরদার, এদিকে হাত আনিসনে।” দুইজনে খুব সাবধানে নিজের নিজের ভাগ বাঁচাইয়া চলিত। যখন ভজুর দিকের পা তুলিয়া কুকুরটা রামার দিকে কান চুলকাইত, তখন ভজু খুব উৎসাহ করিয়া বলিত, “খুব দে-আচ্ছা করে খামচে দে।” আবার ভজুর দিকে মাছি বসিলে রামার দিকের মুখটা যখন সেখানে কামড়াইতে যাইত, তখন রামা আহ্লাদে আটখানা হইয়া বলিত, “দে কামড়ে! একেবারে দাঁত বসিয়ে দে।” একদিন একটা মস্ত লাল পিঁপড়া কুকুরের পিঠে কামড়াইয়া ধরিল। কুকুরটা গা ঝাড়া দিল, পিঠে জিভ লাগাইবার চেষ্টা করিল। নানারকম অঙ্গভঙ্গি করিয়া পিঠটাকে দেখিবার চেষ্টা করিল। তাহার পর কিছুতেই কৃতকার্য না হইয়া কেঁউ কেঁউ করিয়া কাঁদিতে লাগিল। তখন দুইজনে বিষম তর্ক উঠিল, কার ভাগে কামড় পড়িয়াছে। এ বলে, “তোর দিকে পিঁপড়ে লেগেছে- তুই ফেলবি,” ও বলে, “আমার বয়ে গেছে পিঁপড়ে ফেলতে- তোর দিকে কাঁদছে, সে তুই বুঝবি।”সেই দিন দুইজনে প্রায় কথাবার্তা বন্ধ হইবার জোগাড়। তাহার পর একদিন কুকুরের কি খেয়াল চাপিল, সে তাহার নিজের ল্যাজটা লইয়া খেলা আরম্ভ করিল। নেহাৎ ‘কুকুরে’ খেলা-তাহার না আছে অর্থ না আছে কিছু। সে ধনুকের মতো একপাশে বাঁকা হইয়া ল্যাজটার দিকে তাকাইয়া দেখে আর একটু একটু লেজ নাড়ে। সেটা যে তাহার নিজের ল্যাজ, সে খেয়াল বোধহয় তাহার থাকে না- তাই হঠাৎ অতর্কিতে ল্যাজ ধরিবার জন্য সে বোঁ করিয়া ঘুরিয়া যায়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শরীরটাও নড়িয়া যায়, কাজেই ল্যাজটা আর ধরা হয় না। ভজু আর রামা এই ব্যাপার দেখিয়া উৎসাহে পাল্লা দিয়া চিৎকার করিতে লাগিল। রামার মহা স্ফুর্তি যে ভজুর ল্যাজকে তাড়া করা হইতেছে, আর ভজুর ভাড়ি উৎসাহ যে তাহার ল্যাজ রামার মুখকে ফাঁকি দিয়া নাকাল করিতেছে। দুইজনের চিৎকারই হউক কি নিজের ঢ্যাঁটামির জন্যই হউক, কুকুরটার জিদ চড়িয়া গেল। সমস্তদিন সে থাকিয়া থাকিয়া চরকিবাজির মতো নিজের ল্যাজকে তাড়া করিয়া ফিরিতে লাগিল। এই রকমে খামাখা পাক দিতে দিতে কুকুরটা যখন হয়রান হইয়া হাঁফাইতে লাগিল, তখন রামা ব্যস্ত হইয়া উঠিল। ভজু বলিল, “আমার দিকটাই জিতেছে।” কিন্তু কুকুরটা এমন বেহায়া, পাঁচমিনিট যাইতে না যাইতেই সে আবার ল্যাজ তাড়ানো শুরু করিল। তখন রামা রাগিয়া বলিল, “এইও তোমার ল্যাজ সামলাও। দেখছ না কুকুরটা হাঁপিয়ে পড়েছে।“ ভজু বলির, “সামলাতে হয় তোমার দিক সামলাও- ল্যাজের দিকে তো আর হাঁপাচ্ছে না!” রামা ততক্ষণে রীতিমত চটিয়াছে। সে কুকুরের পিছন পিছন গিয়া ধাঁই করিয়া এক লাথি লাগাইয়া দিল। ভজু বলিল, “তবে রে! আমার দিকে লাথি মারলি কেন রে?” এই বলিয়াই সে কুকুরে মাথায় ঘাড়ে কানে চটাপট কয়েকটা চাঁটি লাগাইয়া দিল। দুইদিক হইতেই রেষারেষির চোটে কুকুরটা ছুটিয়া পালাইল। তখন দুইজনে বেশ একচোট হাতাহাতি হইয়া গেল। পরের দিন সকালে উঠিয়াই রামা দেখে, কুকুরটা আবার ল্যাজ তাড়া করিতেছে। তকন সে কোথা হইতে একখানা দা আনিয়া এক কোপ ক্যাঁচ করিয়া ল্যাজের খানিকটা এমন পরিপাটি-উড়াইয়া দিল যে কুকুরটার আর্তনাদে ভজু ঘুমের মধ্যে লাফ দিয়া একেবারে বাহিরে আসিয়া উপস্থিত। সে আসিয়াই দেখিল কুকুরের ল্যাজ কাটা, রামার হাতে দা। ব্যাপারটা বুঝিতে তাহার বাকি রহিল না। তখন সে রামাকে মারিতে মারিতে মাটিতে ফেলিয়া তাহার উপর কুকুর লেলাইয়া দিল। কুকুরটা ল্যাজ কাটার দরুন রামার উপর একটুও খুশি হয় নাই- সে নিমকহারাম হইয়া ‘রামার দিক’ দিয়াই রামার ঠ্যাঙে কামড়াইয়া দিল। এখন দুইজনে চায় থানায় নালিশ করতে। রামা বলে, “ল্যাজটা ভারি বেয়াড়া, বারবার মুখের সঙ্গে ঝগড়া বাধাইতে চায়- তাই সে ল্যাজ কাটিয়াছে। ল্যাজ না কাটিলে কুকুর পাগল হইয়া যাইত, না হয় সর্দিগর্মি হইয়া মরিত। মারা গেলে তো সমস্তটা কুকুরই মারা যাইত, সুতরাং ল্যাজ কাটার দরুন গোটা কুকুরটারই উপকার হইয়াছে। মুখও বাঁচিয়াছে, ল্যাজও বাঁচিয়াছে; তাহাতে রামারও ভালো, ভজুরও ভাল্ োকিন্তু ভজুর এতবড় আস্পর্ধা যে সে রামার দিকের কুকুরকে রামার উপর লেলাইয়া দিল। মুখের দিকে ভজুর কোন দাবিদাওয়া নাই, সে দিকটা সম্পূর্ণভাবেই রামার- সুতরাং রামার অনুমতি ছাড়া ভজু কোন সাহসে এবং কোন শাস্ত্র বা আইনমতে তাহা লইয়া পরের ধনে পোদ্দারি করিতে যায়? ইহাতে অনধিকারচর্চা, চুরি, তছরূপ-সবরকম নালিশ চলে। ভজু কিন্তু বলে অন্যরকম। সে বলে, রামার দিকের কুকুর রামাকে কামড়াইয়াছে, তাহাতে ভজুর কি দোষ? ভজু কেবল ‘লে লে লে’ বলিয়াছিল; তাহাতে কুকুর যদি রামাকে কামড়ায়, তবে সেটা তাহার শিক্ষার দোষ- রামা তাহাকে ভালো করিয়া শিক্ষা দেয় নাই কেন? তাহা ছাড়া ভজুর ল্যাজ খেলা করিতে চায়, রামার হিংসুটে মুখটা তাহাতে আপত্তি করে কেন? ভজুর ল্যাজকে কামড়াইতে যাইবার তাহার কি অধিকার আছে? আর রামা তাহার কুকুরের চোখ বাঁধিয়া কিংবা মুখোশ আঁটিয়া দিলেই পারিত- সে ল্যাজ কাটিতে গেল কাহার হুকুমে? একবার নালিশটি করিলে রামচরণ ‘বাপ বাপ’ বলিয়া ছয়টি মাস জেলে খাটিয়া আসিবেন- তাহা না হইলে ভজুর নাম ভজহরিই নয়। এখন এ তর্কের আর মীমাংসাই হয় না। আমাদের হরীশখুড়ো বলিয়াছিলেন, “এক কাজ কর, কুকুরটার নাকের ডগা থেকে ল্যাজের আগা পর্যন্ত দঁড়ি টেনে তার ডান দিকটা তুই নে, বাঁ দিকটা ওকে দে- তা হলেই ঠিকমত ভাগ হবে।” কিন্তু তাহারা ঐরকম “ছিলকা কুকুরের”মালিক হইতে রাজি নয়। কেউ কেউ বলিল, “তা কেন? ভাগাভাগির দরকার কি? গোটা কুকুরটাই রামার, আবার গোটা কুকুরটাই ভজুর।” কিন্তু এ কথায়ও তাহাদের খুব আপত্তি। একটা বই কুকুর নাই তার গোটা কুকুরটাই যদি রামার হয় তবে ভজুর আবার কুকুর আসে কোথা হইতে? আর গোটা কুকুরটাই যদি ভজুর হয়, তবে রামার আর থাকিল কি? কুকুর হইতে কুকুর বাদ দিলে বাকি রইল শূন্যি! এখন তোমরা যদি ইহার মীমাংসা করিয়া দাও।
×