ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মূল : ক্রিসটিন ভ্যান ওনাট্রম;###;অনুবাদ : এনামুল হক

মেয়েদের উচ্চাভিলাষ কেন তেমন কাজ দিচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

মেয়েদের উচ্চাভিলাষ কেন তেমন কাজ দিচ্ছে না

মেয়েরা যে ছেলেদের চেয়ে কম উদ্যমী এমন নয়। তথাপি তারা যা অর্জন করতে চায় অনেক সময় তাতে সফল হয় না। অন্তত ছেলেদের তুলনায় কমই হয়। কেন এমন হয়? এর কারণ কি এই ছেলে ও মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বা উচ্চাভিলাষের অর্থ ও সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন রকম? সম্প্রতি আমেরিকায় এ বিষয়ের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় যে চিত্রটি বেরিয়ে এসেছে তা কতকটা নিরানন্দই বটে। তাতে দেখা যায় যে, আমেরিকায় নারী ও পুরুষের উচ্চাভিলাষের মাত্রা একই রকম। তথাপি পুরুষের তুলনায় মহিলারা তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পুরুষের মতো অতটা সফলতা পায় না। এই না পাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো কাজ করে তা বেশ জটিল। জরিপে আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা পর্যালোচনার দাবি রাখে। যেমন বিশেষ কোটায় বয়সী ৩৫ শতাংশ মহিলা বলেছে যে, উচ্চাভিলাষী হিসাবে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি পেলে তাদের ক্ষমতায়নের একটা ভাব চলে আসে। আবার ১৬ শতাংশ মহিলা বলেছে যে, এ নিয়ে প্রকাশ্যে বলাবলি হওয়া তাদের জন্য বিব্রতকর। জরিপে ৫৯ শতাংশ মহিলা আপসোস করেছে এই ভেবে যে, জীবনের একপর্যায়ে তারা আরও বেশি উচ্চাভিলাষী কেন হয়নি। প্রতি দশজন মহিলার সাতজনই মনে করে, মানুষ উচ্চাকাক্সক্ষা বা উচ্চাভিলাষ নিয়ে জন্মায় না। এটা অন্তর্নিহিত বা সহজাত কোন ব্যাপার নয় বরং এ হলো চরিত্রের এমন এক বৈশিষ্ট্য যা গড়ে তোলা বা বিকশিত করা হয়। অতএব বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ না পেলে যা হওয়ার তাই হয়। জরিপে অবসর ও স্বপ্নের চাকরি এই দু’য়ের যে কোনটিকে বেছে নিতে বলা হলে ৫৬ শতাংশ মা অবসরকে বেছে নিয়েছেন। আবার বাচ্চাকাচ্চা না থাকা ৫৫ শতাংশ মহিলা বেছে নিয়েছেন স্বপ্নের চাকরি। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উচ্চাভিলাষী হতে বাধা কোনটি? জরিপে ২৯ শতাংশ মহিলা এক্ষেত্রে পারিবারিক দায়বদ্ধতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। অন্যরা আস্থার অভাবকে দায়ী করেছেন। জরিপের ফলাফল যাই হোক, বাস্তব অবস্থা হলো এক প্রজন্ম ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে ভাল করা সত্ত্বেও মহিলারা কর্মজগতে শীর্ষভাগে পৌঁছতে পারছে না, সেখানে পৌঁছাচ্ছে পুরুষরা। মেয়েদের এই না পারার বিষয়টি নিয়ে সেই যে কবে থেকে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা আজও শেষ হয়নি। কেন পারছে না মহিলারা? সেটা কি উচ্চাকাক্সক্ষায় ঘাটতি থাকার জন্য? বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। আমেরিকার সেই জরিপেই দেখা যায়, নারী-পুরুষ উভয় গ্রুপের প্রায় ৯০ শতাংশই জবাব দিয়েছে যে, জীবনে উচ্চাভিলাষ থাকা বড়ই প্রয়োজন এমন এক বিশ্বাস নিয়েই তারা বেড়ে উঠেছে। তথাপি উচ্চাকাক্সক্ষা থাকার ব্যাপারটিকে দেখার বেলায় নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করা হয়। উচ্চাভিলাষী পুরুষকে যেভাবে দেখা হয় উচ্চাভিলাষী নারীকে সেভাবে দেখা হয় না। কোন নারী সম্পর্কে যখন মন্তব্য করা হয় ‘এম্বিশাস মহিলা’ সেই কথার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম শ্লেষ থাকে। অথচ পুরুষের বেলায় তা থাকে না। যদি শোনা যায় অমুক মহিলা উচ্চাকাক্সক্ষী, তাকে অনেকেই এড়িয়ে চলতে চায়। সিকানি ক্লিফোর্ড নামে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টার জনৈক পুরুষ এক্সিকিউটিভকে এমনও বলতে শুনেছেন যে, বিজনেস ডিনারে উচ্চাকাক্সক্ষী মহিলাদের পারতপক্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয় না এই জন্য যে, তাদের কারণে আসরটা মাটি হয়ে যেতে পারে। কথাটার মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে তা বিচারসাপেক্ষ। তবে মেয়েদের নগ্ন উচ্চাভিলাষ ব্যবসায় জগতে সমস্যা তৈরি করে বলে মন্তব্য করেছেন এবিসি নিউজের সাবেক ব্যবসায় সাংবাদদাতা বেটসি স্টার্ক। তাঁর মতে, সাফল্যের শর্ত হিসেবে মেয়েদের পর্যাপ্ত উচ্চাভিলাষ থাকতে হবে ঠিকই তবে এতটা উচ্চাভিলাষ নয়, যাতে তাদের মালবাহী ট্রেন বলে মনে হয়। কর্মক্ষেত্রে শীর্ষপদে পৌঁছতে পেরেছে এমন মহিলার পরিসংখ্যানের চিত্রটা এখনও নিরানন্দ। ফরচুন কোম্পানির চোখে ২০১১ সালে ৫শ’ সেরা কোম্পানির সিইসির মধ্যে মহিলা ছিল ১১ জন। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৩। তারপরও সেটা ৫শ’ সিইও’র মাত্র ৪.৬ শতাংশ। কেন এত কম? মেয়েরা উচ্চাকাক্সক্ষী নয়? তাদের যোগ্যতা নেই? উভয় বৈশিষ্ট্যই মেয়েদের আছে। তারপরও নয় কেন? মনে রাখতে হবে, উন্নত হোক আর অনুন্নত হোক সমাজগুলো আসলে পুরুষ শাসিত। পুরুষদেরই দাপট সেখানে। এ অবস্থায় উচ্চাভিলাষ ও যোগ্যতা থাকলেও মেয়েদের শীর্ষপদে পৌঁছানো কঠিন। তবে ‘হেইড্রিক এ্যান্ড স্ট্রাগলস’ নামে এক্সিকিউটিভ রিক্রুটিং ফার্মের ভাইস চেয়ারম্যান রনি জিউইন যিনি ডাইরেক্টর ও সিইও পর্যায়ের লোক সন্ধানের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে থাকেন। তাঁর ধারণা, উচ্চকাক্সক্ষা মেয়েদের উপরে ওঠার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নয়। তিনি মনে করেন মেয়েরা পুরুষের মতোই উচ্চাভিলাষী, তবে মহিলারা তাদের পছন্দের সে রকম ক্ষেত্রে সফল হতে চাইলেও নিজেদের উচ্চাভিলাষ সম্পর্কে অত স্পষ্ট নন। টাইমের জরিপেও দেখা গেছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মহিলা মনে করে তাদের উচ্চাভিলাষ খুবই সামান্য। আবার অর্ধেকসংখ্যক মহিলার মতে উচ্চাভিলাষী না হওয়া সমর্থনযোগ্য নয়। তারপরও জিউইন মনে করেন, কিছু কিছু মহিলা আছে যারা অতিমাত্রায় উচ্চাকাক্সক্ষা দ্বারা চালিত। তারা কর্পোরেট জগতের পথে চলতে চায় এবং লক্ষ্য থাকে শীর্ষপদটি লাভ করা। তবে সেই শীর্ষপদে পৌঁছতে পারার সুযোগ হাতেগোনা কয়েকজন মহিলা ছাড়া বাকিদের ভাগ্যে জোটে না। তাছাড়া অনেক সময় কর্পোরেট জগতটাই এমন থাকে যে, সেখানে মহিলাদের প্রতিভার স্বীকৃতি মেলে না। সেখানে যখন কাজের গুণগতমানের চেয়ে কাজের সময়ের পরিমাণকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় তখন অবশ্য সমস্যাটা মেয়েদের নিয়ে নয়। আমেরিকার কর্পোরেট জীবনটাই এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, সংসার জীবন ও কর্মক্ষেত্র এই উভয় স্থানে মহিলাদের সফল বলে ভাবতে পারা অতীব কঠিন। সেখানকার কর্পোরেট কালচারটা এমন যে, তা পরিবারের গুরুত্বকে কমিয়ে দেয়, আবার সেই সঙ্গে উচ্চাভিলাষকেও নিঃশেষ করে ফেলে। এক জরিপে মার্কিন কোম্পানিগুলোতে কর্মরত এক হাজার পুরুষ ও নারীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ম্যানেজমেন্টের শীর্ষপদে তারা যেতে চায় কি-না। দেখা গেছে, দু’বছর কী তারও কম সময় চাকরিতে আছে এমন কর্মচারীর মধ্যে এই আকাক্সক্ষার দিক দিয়ে মহিলারা পুরুষকে ছাড়িয়ে গেছে। দু’বছর পর দেখা যায়, এই আকাক্সক্ষা পুরুষদের বেলায় অপরিবর্তিত থাকলেও মেয়েদের বেলায় তা ৬০ শতাংশ কমেছে। আবার সিনিয়র ম্যানেজারদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায় যে, পুরুষদের শীর্ষপদে যাওয়ার আকাক্সক্ষা বেড়েছে। কর্পোরেট আমেরিকায় চাকরিতে সাফল্য অর্জন করতে হলে অনেক সময় যোগ্যতার চেয়ে অন্যান্য বিষয় বেশি কদর পায়। এমন অনেক পথে বিচরণ করতে হয় যা পুরুষরাই পারে, মেয়েরা পারে না। এমন পরিবেশে মহিলাদের উচ্চাকাক্সক্ষা বজায় রাখা মুশকিল। এসব কারণেই বলা যায়, কেন উচ্চাকাক্সক্ষা মহিলাদের বেলায় তেমন কাজে দেয় না? কেন উচ্চাভিলাষের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারা শীর্ষপদে পৌঁছতে পারে না? সূত্র : টাইম
×