ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিশেষ করে আয়হীন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যেই তিলতিল করে জমা হয় কিছু সঞ্চয়। কখনও সম্পদ বিক্রির টাকা, কখনও বা পেনশন, এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া তো সহজ নয়। পদে পদে তার ঝক্কি-ঝামেলা। থাকে লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি। অনেকেই চায় না এই ঝুঁকি নিতে। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খোঁজেন। তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র হচ্ছে আদর্শ বিকল্প। মানুষ তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে আসছে। সুদের হার ভাল থাকায় এবং তা ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি হওয়ায় মানুষ এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে আসছিল। কিন্তু সরকার বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুদের হার কমিয়ে দেয়। তবে তা কমলেও ব্যাংকের আমানতের সুদহারের তুলনায় বেশি থাকায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মুনাফা কমায় সামনের দিনগুলোতেও বিক্রি কমে আসার সম্ভাবনা বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মতে, তাদের সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদের হার খুবই বেশি। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। তাই তা কমানো হয়েছে। এর আগে সুদের হার যে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল তা আর ধরে রাখা সম্ভব নয়। এটা ঠিক যে, বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য সঞ্চয়পত্র উপকরণগুলোর চেয়ে তুলনামূলক আকর্ষণীয় সুদের হারে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে। যা সরকারের সুদ ব্যয় ভবিষ্যতে বাড়াতে পারে। দেখা গেছে, ব্যাংক আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ বিনিয়োগে’ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে। এবং এই বৃদ্ধির কারণে ঋণের ভার কমাতে গত মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ করে কমানো হয়। নিত্যপণ্যের দরদাম বাড়লেও অনেকে একমাত্র আয়ের উৎস সঞ্চয়পত্রের সুদ কমায় সংসার চালনা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অনেকের বাজেট কাটছাঁট করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও মধ্যবিত্তের ভরসা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছে। আবার অনেকে সুদের হার কমায় নন-ব্যাংকিং ও ঝুঁকিপূর্ণ খাতে টাকা বিনিয়োগে ঝুঁকে পড়ছেন যা আরও বিপজ্জনক। গত তিন মাসের হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কিছুটা কমে এলেও এখন আবার তা বাড়ছে। মানুষের অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে আসার পর মধ্যবিত্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র হয়ে ওঠে বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র। ধারণা করা হয়েছিল, সুদ হ্রাস পাওয়ায় মানুষের মাঝে সঞ্চয় প্রবণতা কমার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বিঘিœত হবার আশঙ্কা থেকে যায়। সঞ্চয় অভ্যাসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত হয়নি। অনেকে অবশ্য পুঁজিবাজার কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ সমবায় খাতে অর্থ সঞ্চয় করছেন। এতে ‘আম ও ছালা’ একই সঙ্গে হাওয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সঞ্চয়নির্ভর জীবন যাদের, তাদের কাছে সঞ্চয়পত্র এখনও লাভজনক। এখানে আর্থিক লোকসানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আর না কমিয়ে মানুষকে সঞ্চয়ের দিকে ধাবিত করার পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত।
×