ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৭শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৭শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে আবারও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৭০০ কোটি) মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা, বিদেশ থেকে কর্পোরেট ঋণ গ্রহণ এবং কাক্সিক্ষত হারে আমদানি ব্যয় না হওয়া রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশের আমদানির বর্তমান গতিধারা বলছে, এই রিজার্ভ দিয়ে অন্তত সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। কাজী সাইদুর রহমান জানান, প্রবসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি আইএমএফের ছাড়কৃত ইসিএফ ঋণের দুটি কিস্তি যোগ হওয়ায় নতুন এই রেকর্ড হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৭ মে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর একের পর এক রেকর্ড অর্জন করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একইভাবে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এরপর একই বছরের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন, ১৬ এপ্রিল রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন এবং ৭ আগস্ট ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। কয়েক দফা ওঠানামার পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালে গবর্নর আতিউর রহমান বলেছিলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির সব খাতই যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকা একটি স্বস্তির খবর। সম্প্রতি আরও একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় খাদ্য আমদানিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড অর্জন করছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১০১ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এলেও ৩০ মার্চ তা ফের ২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর ২৯ এপ্রিল ২৪ মিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মাঝখানে কিছুটা কমলেও সব রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার তা ২৫ বিলিয়ন ডলারের কোঠা ছাড়িয়ে যায়। আকুর মে-জুন মেয়াদের বিল শোধ করতে হবে আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। এরপর গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ প্রথমবার ২৬ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করেছিল। ওইদিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশেষণে দেখা যায়, গেল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আর চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম মাস তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৩৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এছাড়া চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৮২ কোটি ডলার।
×