ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘরে ভাস্কর নভেরা স্মরণে সেমিনার, স্মৃতি তর্পণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

জাদুঘরে ভাস্কর নভেরা স্মরণে সেমিনার, স্মৃতি তর্পণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্য শিল্পের পথিকৃৎ নভেরা আহমেদ। পূর্ববঙ্গে শিল্পকলার ইতিহাসে আধুনিক ভাস্কর্য শিল্পের যাত্রা তার হাত ধরেই। বাংলাদেশে (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত) জন্ম নেয়া এই নারী ভারতীয় উপমহাদেশের ভাস্কর্যে আধুনিকতম নারী। বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারের নক্সা প্রণয়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুণী এই শিল্পীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে সেমিনার হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। জাদুঘর আয়োজিত এ সেমিনারে ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ : সত্তা ও স্বাতন্ত্র্যের অন্বেষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের খ-কালীন শিক্ষক রেজাউল করিম সুমন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ : সত্তা ও স্বাতন্ত্র্যের অন্বেষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধে রেজাউল করিম সুমন ভাস্কর নভেরার শিল্পীজীবনের তথ্যমূলক কিছু নিদর্শন প্রজেকশনের মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরেন এবং বর্ণনাও করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নভেরা স্ব-উদ্যোগে ১৯৫১ সালে লন্ডনে ভাস্কর্য বিষয়ে চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করার পর ইতালিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। দেশ বিভাগোত্তর কালে এ ভূখ-ের প্রথম আধুনিক নারীশিল্পী হিসেবে নভেরার আত্মপ্রকাশ যখন হয়, তখন এদেশে নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সবেমাত্র তৈরি হয়েছে। ১৯৫৭-৫৮ সালে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মারক সৌধ হিসেবে সরকারী উদ্যোগে পরিকল্পিত শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন নভেরা এবং ১৯৬০ সালের আগস্টে একটি একক ভাস্কর্য প্রদশনী করেছেন, যা ছিল তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোন ভাস্করের প্রথম একক প্রদর্শনী। দ-ায়মান নারী ও পুরুষ, মা ও শিশু, উপবিষ্ট নারী, পরিবার, গৃহপালিত প্রাণী ও কৃষকের সমন্বয়ে পরিবার ইত্যাদি বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে নভেরা নির্মাণ করেছেন বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য। ১৯৬০ সালের ৭ আগস্ট, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে। ‘ইনার গেজ’ শিরোনামের ওই প্রদর্শনীটি কেবল নভেরারই নয়, গোটা পাকিস্তানেই ছিল কোন ভাস্করের প্রথম একক প্রদর্শনী। তাতে ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল ৭৫টি। প্রদর্শনীতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, লাহোরের পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিলের সম্পাদক ও প্রখ্যাত উর্দু কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, লাহোর আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ শিল্পী শাকির আলীসহ বহু বিদগ্ধজন উপস্থিত ছিলেন। আধুনিক শিল্পধারায় রচিত নভেরার ওই শিল্পকর্মগুলো বিপুল সমাদর পায়। নভেরা আহমেদ এ দেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন। সেই প্রদর্শনীর ৩০টি ভাস্কর্য পরে জাতীয় জাদুঘর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। সেই শিল্পগুলো নিয়ে ১৯৯৮ সালে তারা একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করে। নভেরার সেসব ভাস্কর্যের কয়েকটি এখনও জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে স্থাপিত রয়েছে। নভেরার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী হয় ১৯৭০ সালে ব্যাঙ্ককে। এতে তিনি ধাতব মাধ্যমে কিছু ভাস্কর্য করেন। তার তৃতীয় একক প্রদর্শনী হয় প্যারিসে, ১৯৭৩ সালে রিভগেস গ্যালারিতে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্যারিসে তার পূর্বাপর কাজের এক শ’ দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনী হয়। সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের আধুনিক ভাস্কর্যের অগ্রদূত নভেরা আহমেদ প্রায় ৪৫ বছর ধরে পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে নিভৃতে প্যারিসে বসবাস করছিলেন। চলেও গেলেন নীরবেই। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করলেও তিনি সেই সম্মান নিতে আসেননি। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিয়েও দেশে আনা যায়নি তাকে। খানিকটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই কাটিয়েছেন জীবন। আশ্চর্যজনক আড়াল তৈরি করেছিলেন নিজের চারপাশে। দেশের শিল্পীদের সঙ্গেও যোগ ছিল না তার। গত ৬ মে, ৭৬ বছর বয়সে প্যারিসের শঁন পামেল গ্রামে চূড়ান্ত অন্তরালেই চলে গেলেন এই শিল্পী। নিজের সময়ের চেয়ে অগ্রবর্তী শিল্পসাধনা ও অজ্ঞাতবাসের জীবন তাকে পরিণত করে রেখেছিল জীবন্ত কিংবদন্তিতে। তার শিল্পের গভীরে ডুবেও তার জীবনের রহস্য ভেদ করতে চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। দেশের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখুক, তার বেঁচে থাকাই আমাদের দেশের শিল্পাঙ্গনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি প্রবাসে যোগাযোগহীন থেকেও এদেশের ভাস্কর্যশিল্পে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। শুধু চিত্রকলা নয়, তার প্রভাব চিত্রকলা ছাপিয়ে অন্যান্য শিল্পেও অনুভূত হয়েছে। তার আকস্মিক প্রয়াণে তাই দেশের শিল্পাঙ্গনে শোকের ছায়া বিস্তার করেছে। বর্তমান শিল্পীদের কাছে বিষয়টা আরও মর্মস্পর্শী। তার শিল্পকর্ম ও জীবন এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমান বিস্ময়ের। খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ প্রাঙ্গণে বইমেলা উদ্বোধন ॥ রাজধানীর খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ প্রাঙ্গণে ৬ দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন হয় বুধবার বিকেলে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সহযোগিতায় শহীদ বাকী স্মৃতি পাঠাগার ও শহীদ বাবুল একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। শুদ্ধ সঙ্গীত প্রসার গোষ্ঠীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত ॥ শুদ্ধ সঙ্গীত প্রসার গোষ্ঠীর আয়োজনে এক সম্মেলন হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বুধবার সন্ধ্যায়। গোষ্ঠীর প্রতিভা বিকাশ কর্যক্রমে অংশগ্রহণকারী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এ সম্মেলনে।
×