ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী কামরুন্নেছার জবানবন্দী

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও রাজ্জাক আমার বাবাকে নির্যাতনে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও রাজ্জাক আমার বাবাকে নির্যাতনে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে দ্বিতীয় সাক্ষী কামরুন্নেছা বলেছেন, আমার বাবা আকল আলীকে রাজাকার মহিবুর রহমান বড় মিয়াসহ অন্যান্য রাজাকাররা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে দেয়। তারা আমার চাচা রজব আলীকেও হত্যা করে। আমি আমার বাবা ও চাচার হত্যাকারীদের বিচার চাই। তৃতীয় সাক্ষী তরাজ উল্লাহ তার জবানবন্দীতে বলেছেন, মহিবুর ও মুজিবুর রহমানের সঙ্গে থাকা রাজাকাররা হিন্দুপাড়ায় গিয়ে লুটপাট করে ও ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুনেছি ওই সময় আসামিরা উত্তর হাটিতে দুইজন মহিলাকে ধর্ষণ করে। দুই সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। তৃতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে জেরা অসমাপ্ত করে আজ বৃহস্পতিবার আবার জেরার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। জবানবন্দী ও জেরার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুনতাম মাহমুদ সিমন, রিজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, আমার নাম কামরুন্নেছা। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫২ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-এরালিয়া পূর্বপাড়া, থানা-বানিয়াচং, জেলা- হবিগঞ্জ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স আনুমানিক ৯ বছর ছিল। আমি একজন গৃহিণী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আনুমানিক দেড় মাস পরে আমার বাবা আকল আলী পাশের বাড়ির চাচা রজব আলীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চলে যান। এরপর আমাদের খোঁজ নেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ১১ নবেম্বর খুব ভোরে আমার বাবা আকল আলী চাচা রজব আলীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। ওই সময় রজব আলী চাচার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসেন। বিকেল আনুমানিক চারটা সাড়ে চারটার দিকে আমাদের বাড়ির পূর্ব উত্তরে কামরুল হাসানের বাড়িতে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প থেকে ৮-১০ জন রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে ঘেরাও করে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, ওই সময় চাচা রজব আলী ঘর থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে তার পেটের নিচে গুলি করলে রজব আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তখন আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া তার সঙ্গে থাকা রাজাকার আসামি মহিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হামিদ এবং আরও ২-৩ জন রাজাকারকে বলেন যে, আমার বাবা আকল আলী যেন ঘর থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। এরপর ওই রাজাকাররা আমার বাবাকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে। আমার বাবাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে কামরুল হাসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে। এরপর বাবার লাশ গুম করে ফেলা হয়। এ সময় সাক্ষী অঝোরে কাঁদতে থাকেন। সাক্ষী আরও বলেন, পরের দিন সকালে রজব আলীর লাশ তার ভাই ও ভাতিজারা, আমার দুই চাচা এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন এবং মক্তবের কারী সাহেবকে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করেন। আমি আমার বাবা ও চাচার হত্যাকারীদের বিচার চাই। তৃতীয় সাক্ষী তরাজ উল্লাহ তার জবানবন্দীতে বলেছেন, মহিবুর ও মুজিবুর রহমানের সঙ্গে থাকা রাজাকাররা হিন্দুপাড়ায় গিয়ে লুটপাট করে ও ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুনেছি ওই সময় আসামিরা উত্তর হাটিতে দুইজন মহিলাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতা দুই জনের মধ্যে একজন ছিলেন আল্লাদ মিয়া বোন অবিবাহিত আগর চাঁন বিবি এবং অপর জন মঞ্জব আলীর স্ত্রী। পরে শুনেছি কয়েক মাস পরে আগর চাঁন বিবি বিষ খেয়ে মারা গেছে।
×