ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষমাহীন অপরাধ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

ক্ষমাহীন অপরাধ

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রতিষ্ঠিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ক্রমশ অস্বচ্ছ এবং জবাবদিহিবিহীন হয়ে উঠছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ তথা টিআইবির উদ্দেশ্য যে মহৎ নয় তা ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান সংসদকে হেয় করে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যেন স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসবাদীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা শুধু নয়, দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কিনা সে নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী হত্যাকা-, শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে হামলার সময়ে টিআইবির দেশ, সরকার এবং সংসদবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশকে সন্দেহের চোখে দেখছে সরকারী দল। রাজনৈতিক দলের মতোই তারা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। টিআইবি যে বক্তব্য দিয়েছে তা জাতীয় সংসদ, সংবিধানকে অবজ্ঞার পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবমাননা করেছে। দেশে যে গণতন্ত্র রয়েছে তা তাদের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। গণতন্ত্র না থাকলে তাদের পক্ষে সার্বভৌম সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলার মতো আস্পর্ধা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এটা তো সত্য ও বাস্তব যে বর্তমান সংসদ প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক। এটিও সত্য যে, অতীতেও সংসদে কম-বেশি একই ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে সংসদ সরকারী দলের একক ভাষ্যে পরিণত হয়েছিল। কোরাম সঙ্কটও ছিল সাধারণ ঘটনা। সংসদ নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার সংসদে উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে দিনের পর দিন সংসদ বর্জন করেছে। সংসদে ‘চুপ বেয়াদব’ বলে তিনি খ্যাতিও লাভ করেছেন। সেসব প্রসঙ্গ টিআইবি উল্লেখ না করে বর্তমান সংসদকে হেয় করে বক্তব্য রেখেছে। জাতীয় সংসদ দেশের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। তাই এর সম্পর্কে শব্দ প্রয়োগে সতর্কতা বাঞ্ছনীয় হলেও রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে তারা অশালীন ও অশোভন বাক্য প্রয়োগ করেছে, যা সংসদের পরিপন্থী। কারণ মহান সংসদ সুনির্দিষ্ট আইন ও নিয়ম মেনে চলে, সংবিধানের আলোকে সংসদের কার্যবিধি পরিচালিত হয়। তাদের বক্তব্য তাই সংবিধানকে হেয় করার শামিল। ‘তথাকথিত কিংবা ‘নাট্যশালা’ বা ‘অপচয়’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে টিআইবি নিজেরাও অশালীনতার পরিচয় দিয়েছে এবং তাদের প্রাপ্ত অধিকার বরখেলাপ করেছে। টিআইবিকে সংসদে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ করার অনুমতি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছেন। আর সে সুযোগ পাওয়া মানেই যা কিছু বলা নয় কিংবা সুযোগের অপব্যবহার নয়। সাংসদরা কেমন করে কি আলোচনা করবেন, সে বিষয়ে কার্যবিধিতে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংসদ চলে সুনির্দিষ্ট বাজেটে। সংবিধানের পঞ্চম ভাগে ৬৫ থেকে ৮০ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। টিআইবির উচিত ছিল সে বিষয়ে ভালভাবে অধ্যয়ন করে বক্তব্য রাখা। কিন্তু যেহেতু উদ্দেশ্য সৎ নয়, তাই তারা সংসদকে আক্রমণ করতে উদ্যত। আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাওয়া বা দাবি করার টিআইবি কে? বিএনপি-জামায়াতের অবর্তমানে তাদের মুখপাত্র হিসেবে, তাদের দাবিকে তুলে ধরে টিআইবি প্রমাণ করল তারাও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যে উদ্দেশ্য নিয়ে টিআইবি গড়ে উঠেছিল তা থেকে তারা সরে এসে বিএনপির অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। না হলে তারা কেন গবেষণা ছেড়ে রাজনৈতিক তৎপরতায় নেমেছে। অদ্যাবধি তাদের কোন প্রতিবেদনেই দেশের প্রশংসা ও অগ্রগতিমূলক বিষয় নেই। বরং দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে একটি অকার্যকর দেশ হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। সংসদের উচিত টিআইবিকে সংসদে ডেকে জবাবদিহিতা গ্রহণ। তাদের এই অপতৎপরতা দ্রুত বন্ধ করা উচিত দেশ ও জাতির স্বার্থে।
×