ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজান ৩-১ গোলে পরাজিত

ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আহ্, কি আনন্দ, কি সৌরভ, কি জয়ের গৌরব! ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এ প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে নাম লিখিয়েছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। মঙ্গলবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে তারা উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ৩-১ গোলে হারিয়েছে আফগানিস্তানের ডি স্পিন ঘার বাজান ফুটবল ক্লাবকে। বিজয়ী দলের এলিটা কিংসলে জোড়া গোল করেন। অপর গোলটি করেন ইয়োকো সামনিক। ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ ছিল চট্টগ্রাম আবাহনী, আর ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বাজান। ‘এ’ গ্রুপে শ্রীলঙ্কার সলিড এসসিকে ৩-১ গোলে, ঢাকা মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারায় বাজান। এছাড়া ৩-৩ গোলে কলকাতা মোহামেডানের সঙ্গে ড্র করে। পক্ষান্তরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কিংফিশার ইস্ট বেঙ্গলের কাছে ১-২ গোলে হেরে যায় স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখে চট্টগ্রামের দলটি। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের করাচী ইলেকট্রিক ফুটবল ক্লাবকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে তারা। গত ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর যে একাদশ মাঠে নেমেছিল, সেটা এই ম্যাচেও একই রকম ছিল। প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম আবাহনীরই বলের নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল। মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগের মধ্যে দারুণ সমন্বয় ছিল। উল্লেখযোগ্য আক্রমণের সূচনাটা করে আবাহনীই। ম্যাচের তখন ৮ মিনিট। নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এলেটা কিংসলে ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে যে শট নেন, তা বাজান গোলরক্ষক হামিউল্লাহ ইউসুফজানিনের হাতে লেগে ফিরে আসে। বল পান আরেক ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি। তিনি ফিরতি বলে শট নেন। সেই শট বাজানের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে আবার ফিরে আসে। এবার শট নেন উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। বল চলে যায় পোস্টের পাশ দিয়ে। আফসোসে পোড়েন জাহিদ এবং বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীরা। ১০ মিনিটে আনোয়ার আকবারির দূরপাল্লার শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেলে গোলবঞ্চিত হয় বাজান। আবাহনীর ৮ মিনিটের ব্যর্থ প্রচেষ্টার আক্ষেপ ঘোচে ২৪ মিনিটে। কাক্সিক্ষত গোলের সন্ধান পায় স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। ডানপ্রান্ত থেকে জাহিদ হোসেনের কর্নারে এমিলি হেড করে বল নিচে নামান। সেই বল মাটিতে পড়ার আগেই সতীর্থ ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড ইয়োকো সামনিক প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের মাঝখান দিয়ে হেডে বল জালে পাঠান (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ! ৩৩ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জাহিদ দূরপাল্লার শট নেন। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোলরক্ষক কোনমতে সেটা রক্ষা করেন। ৪৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জাহিদ বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে মাইনাস করেন। সেই বল হেমন্ত পায়ে ছোঁয়ানোর আগেই এক ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য বিস্তার অব্যাহত থাকে চট্টগ্রাম আবাহনীর। ৫৯ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ইয়োকো যে থ্রু পাস দেন, সেটা ধরে বক্সে ঢুকে মাঝামাঝি অবস্থান থেকে দুই প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে নিজের দুই পাশে রেখেই বাঁ পায়ের উঁচু শটে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এলিটা কিংসলে (২-০)। আবারও গগণবিদারী উল্লাস গ্যালারিতে উপস্থিত বিশ হাজার দর্শকের! ৭৮ মিনিটে এক গোল শোধ করে বাজান। ফ্রি কিক নেন অধিনায়ক গোলাম হযরত। তা থেকে ডিফেন্ডার সাঈদ মোহাম্মদ হাশেমি যে হেড নেন, সেটা ধরতে পারেননি কিছুটা সামনে এগিয়ে থাকা আবাহনী গোলরক্ষক লিটন (১-২)। যেখানে আরেকটি গোল দিয়ে বাজান ম্যাচটাকে টেনে-টুনে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাবে, তখন ৮৯ মিনিটে উল্টো গোল করে বসে আবাহনী! মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়ে জয়ী জাহিদের লম্বা থ্রু পাস পান কিংসলে। সেই বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে প্রতিপক্ষ ডি বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন কিংসলে। বাঁ পায়ের কোনাকুনি গড়ানো শটে পরাস্ত করেন গোলরক্ষককে (৩-১)। গো-ও-ল! শেষদিকে আরও কটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে উভয় দলই। আর কোন গোল না হওয়াতে রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজালে ফাইনালে ওঠার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। চট্টগ্রাম আবাহনী ॥ রাসেল মাহমুদ লিটন, রেজাউল করিম, বাইবেক, আতিকুর রহমান মিশু, সোহেল রানা, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, জাহিদ হোসেন, ইয়োকো সামনিক, এলিটা কিংসলে, জাহিদ হাসান এমিলি মো. বিপ্লব), মিঠুন চৌধুরী (শরীফুল ইসলাম)।
×