ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোকসানা বেগম

আইকনদের মর্যাদার লড়াই!

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

আইকনদের মর্যাদার লড়াই!

আইকন ক্রিকেটার বাছাই করা মানেই হচ্ছে, দেশের সেরা ক্রিকেটারদের বাছাই করা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল-টি২০) তৃতীয় আসরের জন্য তা করাও হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ওপেনার তামিম ইকবাল, অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেনকে আইকন ক্রিকেটার বেছে নেয়া হয়েছে। তাদের এখন নামের প্রতি সুবিচার করতে হবে। তাদের সামনে এখন মর্যাদা রক্ষার লড়াই। শুরুতে কথা ছিল, আইকনদের ৬ দলে ভাগ করে দেয়া হবে। বিপিএলে অংশ নিতে যাওয়া (ঢাকা ডায়নামাইটস, চিটাগং ভাই কিংস, বরিশাল বুলস, সিলেট সুপার স্টারস, রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) একেক দলে একেক আইকনকে দেয়া হবে। আইকনদের পছন্দের দল কোনটা, তা জানা হবে প্রথমে। এরপর দলের মালিকদের কাছ থেকে জানা হবে, কোন আইকনকে নিতে চায় তারা। এ দুইয়ের সমন্বয়ে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে। আইকনদের দল বাছাই করে দেবে। কিন্তু বিপত্তি তৈরি হয় একজনকে নিয়েই। তিনি হচ্ছেন, সাকিব। সব দলই চায় সাকিবকে দলে ভেড়াতে। আইকন ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকেই চাওয়া। তাই আর কোন গতি না দেখে আইকন ক্রিকেটারদেরও লটারি হয়। ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজে’ই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। লটারির নিয়ম অনুযায়ী শুরুতে দলগুলোর নাম উঠবে। যে দলের নাম লটারিতে আগে উঠবে, তারা আগে ক্রিকেটার দলে ভেড়ানোর সুযোগ পাবে। আইকনদের বেলাতেও একই নিয়ম। শুরুতেই নাম উঠে যায় রংপুর রাইডার্সের। আর কোন কথা নেই, দ্রুতই সাকিবের নাম উচ্চারণ করে দলটি। পেয়ে যায় দেশের সেরা অলরাউন্ডারকে। এভাবে করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স মাশরাফিকে, বরিশাল বুলস মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে, চিটাগং ভাই কিংস তামিমকে দলে ভেড়ায়। শেষে সিলেট সুপার স্টারস মুশফিককে দলে নেয়। ঢাকা ডায়নামাইটসের আর কোন অপশনই থাকল না। নাসির হোসেনকেই নিতে হলো। এখন ২০ নবেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিপিএলের তৃতীয় আসরের পর্দা উঠবে। আর ২২ নবেম্বর খেলা মাঠে গড়াবে। সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু বিপিএল শুরু হওয়ার অপেক্ষা। আর এ বিপিএলে ৬ আইকন ক্রিকেটারের মর্যাদা রক্ষার লড়াইও হবে। আইকন ক্রিকেটার দলের সেরা ক্রিকেটার। যেহেতু তাদের দেশের সেরা ক্রিকেটারদের থেকে বেছে নেয়া হয়েছে, দলকে বিশেষ পারফর্মেন্স দেয়ার দায়িত্ব তাদের। নিজেদের মর্যাদা রক্ষাও করতে হবে। আইকন ক্রিকেটারদের দিকে সব দলেরই নজর রয়েছে। সঙ্গে দেশী ক্রিকেটার ও বিদেশী ভালমানের ক্রিকেটারদের ভিড় ঘটিয়ে শিরোপাই ঘরে তুলতে চায় দলগুলো। সাকিব-তামিমের দলের মধ্যকার লড়াই দিয়েই বিপিএল শুরু হচ্ছে। গ্র্যান্ড ফাইনাল দিয়ে লীগ শেষ হবে ১৫ ডিসেম্বর। এ লীগে আকর্ষণীয় দল বলতে গেলে রংপুর রাইডার্সই। দলটি যে সাকিবকে পেয়েছে। এর সঙ্গে আছেন সৌম্য সরকার, স্পিনার আরাফাত সানি, মোঃ মিঠুন। বিদেশীদের মধ্যে ড্যারেন সামি, থিসারা পেরেরা, লেন্ডল সিমন্স, মোহাম্মদ নবীরা আছেন। তাই শিরোপা জিততে চান দলের চেয়ারম্যান মুস্তফা রফিকুল ইসলাম, ‘আমরা যে দলটি গড়েছি, তা ভারসাম্যপূর্ণ। আশা করছি, দেশী-বিদেশী মিলিয়ে শক্তিশালী দলই হয়েছে। তা নিয়ে শিরোপাও জিতব। সাকিবকে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে মাশরাফি ছাড়াও লিটন কুমার দাস, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল হাসানরা আছেন। শোয়েব মালিক, সুনীল নারাইন, আহমেদ শেহজাদ, মারলন স্যামুয়েলসরা বিদেশী কোঠায় আছেন। এ দল নিয়ে খুশি দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিসা কামাল, ‘আমাদের দলে সব রকমের খেলোয়াড়ই আছে। ব্যাটসম্যান আছে। বোলার আছে। অলরাউন্ডারও আছে। দল ভাল হয়েছে। আমি খুশি। এ দল নিয়ে এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মাঠে নামব।’ ঢাকা ডায়নামাইটস দলটিতে নাসির হোসেন ছাড়াও মুস্তাফিজুর রহমান, মোশাররফ হোসেন রুবেল, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ফরহাদ রেজা, আবুল হাসান রাজু আছেন। আর বিদেশীদের মধ্যে তারকা কুমার সাঙ্গাকারা, রায়ান টেন ডেসকাট আছেন। ঢাকা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই লড়াই করবে। তা আগেই জানিয়েছিলেন, দলটির সিইও ওবেইদ আর নিজাম। সেই আশা নিয়েই এখনও এগিয়ে যেতে চান। চিটাগং ভাই কিংস ভাইদের দল। দলে আবার স্থানীয় দুই ভাই আছেন। তামিম ইকবাল ও নাফীস ইকবাল। এরসঙ্গে এনামুল হক বিজয়, তাসকিন আহমেদ, জিয়াউর রহমানরা আছেন। আর বিদেশীদের মধ্যে মোহাম্মদ আমির, এলটন চিগুম্বুরা, জীবন মেন্ডিসরা আছেন। এ দল নিয়েই শিরোপা জেতার স্বপ্ন চিটাগং ভাই কিংসের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদের, ‘আমরা যে রকম দল চেয়েছি, তা পেয়েছি। বিশেষ করে তামিম ইকবালকে পেয়েছি। এখন আমরা কিভাবে দল চ্যাম্পিয়ন হবে, সেইভাবে ছক কষছি। আশা করি আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। অন্য যে কোন দলের চেয়ে আমরা সৌভাগ্যবানই। চিটাগংয়ে যে খেলা হবে।’ বরিশাল বুলস খুব ভেবে ভেবে দল গড়েছে। লটারিতে আগে উঠেও তামিম, মুশফিককে নেয়ার সুযোগ থাকার পরও দলটি অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহকে বেছে নিয়েছে। এর সঙ্গে সাব্বির রহমান, আল আমিন, সোহাগ গাজী, শাহরিয়ার নাফিস, নাদিফ চৌধুরী, রনি তালুকদারদের দলে ভিড়িয়েছে। আর বিদেশীদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্রিকেটার ক্রিস গেইলই তাদের দলে আছেন। সঙ্গে ব্রেন্ডন টেইলর, কেভন কুপার, মোহাম্মদ সামিও খেলবেন। এ দলটি নিয়ে দলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ান বিন ফারুক আশাবাদী, ‘আমরা নিজেদের মতো করে দল গড়েছি। কেউই শিরোপা না জেতার জন্য খেলে না। আমরাও খেলছি। আশা করছি স্বপ্ন পূরণ হবে।’ সিলেট সুপার স্টারস দলটি মুশফিকুর রহীমকে পেয়ে খুব খুশি। দলে রুবেল হোসেন, মুমিনুল হক, আব্দুর রাজ্জাকরা আছেন। এরসঙ্গে বিদেশীদের মধ্যে শহীদ আফ্রিদি, রবি বোপারা, অজন্থা মেন্ডিস, সোহেল তানভির আছেন। বিদেশীদের দিয়ে বাজিমাত করতে পারে সিলেট। দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম যেমন বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের দেশী ও বিদেশী ক্রিকেটার দুই দিকই শক্তিশালী। একটা ব্যালেন্স আছে। এ দল নিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব।’ দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্য আইকনদের। ৩৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ আইকনদের কাছ থেকে অন্য যে কোন ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি পারফর্মেন্স আশাও করছে দলগুলো। এখন দেখার বিষয়, তারা সেই আশা পূরণ করতে পারেন কি না।
×