ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মরা কার্তিকে মঙ্গা উধাও

নানামুখী কর্মযজ্ঞে গ্রামীণ অর্থনীতি এখন মজবুত

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

নানামুখী কর্মযজ্ঞে গ্রামীণ অর্থনীতি এখন মজবুত

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট ॥ কার্তিক মাসে আগাম জাতের উফশী বিআর-২৮ ধান কৃষক কাটতে শুরু করেছে। আগাম সবজিও বাজারে উঠেছে। কৃষকের ঘরে ঘরে এখন আনন্দ। মরা কার্তিকের মঙ্গা এখন অতীত। গ্রামে গ্রামে মরা কার্তিকে ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। নতুন ধানের বাজার দর কম। তবুও কৃষক ও কৃষি মজুররা খুশি। কার্তিক মাসে আর অর্থকষ্ট নেই। লালমনিরহাটে যেসব জমি এক সময় পতিত ছিল। এখন সেই জমি সোনায় পরিণত হয়েছে। সেচ দিয়ে সেসব জমিতে হাইব্রিড লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, বেগুন, আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, পাটশাক, ধনেপাতা, মরিচসহ নানা জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর বালু চরে নানা জাতের সবজি ও কলা চাষ করেছে কৃষক। এক সময় রিলিফনির্ভরতা চরের মানুষকে ভিক্ষুকে পরিণত করেছিল। এখন চরের মানুষ কাজ করে সামাজিক মর্যাদা নিয়ে জীবনযাপন করছে। চর ও গ্রামের প্রত্যন্ত মানুষের আর্থিক সক্ষমতা গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা। কার্তিক মাসে এই এলাকায় আগে কাজ ছিল না। দল বেঁধে নারী-পুরুষ-শিশু সকাল হলেই ছুটে গেছে শহরে। তারা কাজের আশায় শহরের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নারীরা বাসাবাড়িতে কাজ করেছে পেটে-ভাতের বিনিময়। শিশুরা হয়েছে কাজের মেয়ে। এখন আর সে অবস্থা নেই। তারা এখন আর কাজের সন্ধানে শহরে যায় না। এলাকায় কাজের ছড়াছড়ি। কার্তিকের মঙ্গা উধাও হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার হার বাড়ছে। শিক্ষা বাড়ছে গাণিতিক হারে। আজ আর দরিদ্র পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। তিস্তার চরে এখন সারা বছর চলছে নানামুখী কর্মযজ্ঞ। গ্রামের নারী, তরুণী-কিশোরীদের পাটের কার্পেট, শতরঞ্চি, ঘর সাজানোর শিকাসহ নানা হস্তশিল্প তৈরি করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। তিস্তার চরে চাষীরা এখন নীল চাষও করছে। হাতীবান্ধায় চরে চা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসব কর্মযজ্ঞে মরা কার্তিকে মঙ্গা এখন উধাও।
×