ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা

অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে পায়রা বন্দরের

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে পায়রা বন্দরের

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ অপারেশনে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সক্ষমতা বাড়বে। এ জন্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে বন্দরটির। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কার্যক্রম। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আমদানি-রফতানি বেড়ে যাওয়ায় তৃতীয় এ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে ১৬ একর জমির ওপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমন পন্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনও পণ্য ওঠানামা বা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর গড়ে না ওঠা পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে বাণ্যিজিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর মাস হতে পণ্য খালাসের কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পূর্ণোদ্যমে চালুকরণ এবং আমদানি-রফতানি পণ্যের অবাধ পরিবহনের লক্ষ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যার হাউস, পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেইনিং ভেসেল, সার্ভে বোট এবং নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী সরবরাহ করা অতি প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ মালামাল ওঠানামা করে। চট্টগ্রাম বন্দরসংলগ্ন এলাকায় আবাসিক ও শিল্প স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ বন্দরের উন্নয়নের জন্য আর কোন জায়গা নেই। অন্যদিকে পশুর নদীতে পলি পড়ার কারণে নদীর নাব্য হারাচ্ছে। ফলে মংলাবন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ দুটি বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। কিন্তু আমদানি-রফতানির আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় পায়রা বন্দর নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায় পায়রা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ১৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ বর্গফুট ওয়্যার হাউস নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার রামনাবাদ ও কালীগঞ্জ নৌপথ ড্রেজিং, পাঁচ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, দুটি হাইস্পিড বোট, ৫টি পিস্তল, ১০০টি শটগান ও ২ হাজার রাউন্ড গুলি সংগ্রহ, দুটি পাইলট বোট, একটি টাগ বোট, একটি বয়া লেইনিং ভেসেল, একটি সার্ভে ভেসেল ও দুটি পন্টুন সংগ্রহ, ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম করা হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পটুয়াখলী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ/রাবনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে প্রস্তাবিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। ২০১৩ সালে ৫ নবেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ্যাক্ট-২০১৩ অনুমোদিত হয় এবং ওই বছরের ১০ নবেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি ১৯ নবেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, পায়রা বন্দর দিয়ে ট্রাক, লরি এবং অন্যান্য যানবাহন দ্বারা রফতানি ও আমদানিকৃত পণ্য পরিবহন করার জন্য পায়রা বন্দর টার্নিমাল হতে বরিশাল, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় সহাসড়ক পর্যন্ত কোন সংযোগ সড়ক নেই। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যমান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সরু রাস্তাটি খেপুপাড়া প্রধান সড়ক হতে বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ রাস্তাটি সরু এবং দুই দিকে বসতবাড়ি, গাছপালা ও কলাপাড়া বাজার রয়েছে। এ অবস্থায় এই সরু রাস্তা দিয়ে আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব নয়। এ কারণে আলাদা এ্যালাইনমেন্টে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার চার লেনবিশিষ্ট আরসিসি রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাস্তাটি বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের চেইনেজ (রাজপাড়া) হতে শুরু হয়ে পায়রা বন্দরে শেষ হবে। এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র পরিসরে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রাজপাড়া-পায়রা সমুদ্রবন্দর সড়ক নির্মাণ (চার লেন) শীর্ষক প্রকল্প দুটির ওপর গত জুন মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এ দুটি প্রকল্পকে একীভূত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাদির উন্নয়ন নামের পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির আগামী সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
×