বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, অসভ্যতা, পাশবিকতা, নাশকতা সমাজকে ক্রমশ গ্রাস করছে। দেশবাসী চায় আর না চায়, এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। একের পর এক শিশুকে নির্যাতন করে হত্যা, নারী নির্যাতনের জঘন্য সব ঘটনা; ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যাÑ কী ঘটছে না এ দেশে? সংক্রামক ব্যাধির মতো ঘটনাগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। আর নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার মাত্রা কোন পর্যায়ে গেলে, এসব বর্বর আচরণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা আবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মনে হবে হয়ত, দেশ যেন আজ পাষ- ঘাতকদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। মনে হবে হত্যা প্রতিযোগিতার নিকৃষ্ট খেলায় মত্ত বাংলাদেশ, এমনকি মায়ের গর্ভও নিরাপদ নয় শিশুদের জন্য। নারী ও শিশুর জীবনের কানাকড়ি দাম থাকবে না, তা হতে পারে না। কিন্তু হচ্ছে তাই। দেশব্যাপী বর্বর হত্যাকা-ের এমন ধারাবাহিকতা মানুষ নামের শব্দটিকে করছে কলঙ্কিত। সৃষ্টির অন্যান্য আত্মা থেকে আলাদা বিবেক বুদ্ধিওয়ালা ও বিশালতার অধিকারী ওই মনুষ্য প্রাণীটি যেন নিজের পরিচয় ভুলে অমানুষের খোলস দেহে চাপিয়ে ভুলতে বসেছে যে তারা মানুষ। মানুষ নামের সুষ্ঠু বিবেক বুদ্ধিওয়ালা এই প্রাণীটি কিভাবে নিজ গোত্রের অন্য মানুষের নির্দয়ভাবে প্রাণ বধ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মানবের বিপরীতে যে চরিত্রটি রয়েছে, তা হলো দানব। মানুষ নামের অমানুষদের মাঝে যে ভয়াবহ বর্বরতা বাসা বেঁধেছে, তা দানব গোষ্ঠীর সমতুল্য বলে ধরে নেয়া যায়। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় পাষ- নরপিশাচদের পৈশাচিকতা দেখলে রীতিমতো গা শিউরে ওঠে। এই কলুষিত সমাজে দাঁড়িয়েই দেখতে হচ্ছে মানুষরূপী অসুরদের বীভৎস বর্বরতার ধরন, যা মানবতাবাদী মানুষদের বক্ষে অসহ্য যন্ত্রণার জন্ম দিচ্ছে আর সুস্থ সমাজকে পতিত করছে প্রতিবন্ধকতার পথে। শিশু, নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাগুলো প্রশ্ন তুলতেই পারেÑ আমরা কোন্ সমাজে বাস করছি।
নৃশংসতার সীমা এমন পর্যায়ে গেছে যে, সামান্য ঘটনায় মানুষ মানুষকে হত্যা করতে ইতস্তত করছে না। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও। সর্বশেষ দেখা যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে ঘুমন্ত মা ও দেড় বছর বয়সী মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকের জন্য মেয়ের স্বামী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। একই সময়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে এক দলিত দম্পতি ও তাদের দুই সন্তানকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিক মূল্যবোধ বিবর্জিত কর্মকা- সমাজ, সভ্যতা ও সুস্থ সংস্কৃতিকে শুধু অবমাননা করছে তা নয়, জন্ম দিচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের। এদেশে-ওদেশে যৌতুকের জন্য হত্যা, নির্যাতনের ঘটনা কম নয়। যৌতুকবিরোধী আইন থাকলেও তার কার্যকরী ভূমিকা মেলে না। এভাবে মানব হত্যার ঘটনা দেশের মানুষ মুখ বুঁজে মেনে নিচ্ছে, সমাজের মানুষ হিসেবে কখনও ভয়ে, কখনও দায়বদ্ধতার অভাবে প্রতিবাদ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে না। অপরাধীর সংখ্যা সীমিত হলেও প্রতিরোধ বা প্রতিবাদীদের সংখ্যা আরও কম হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটে চলেছে। বিচারহীনতার কারণে খুনের ঘটনা বাড়ছে। কারণ অপরাধীরা জানে, অপরাধের কোন বিচার হবে না। যেমন তারা দেখেছে গত জানুয়ারি-মার্চ মাসে পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত মানুষ হত্যা করা হয়েছে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে হরতাল অবরোধ ডেকে। সেসবের বিচার ঝুলে আছে। তাই পেট্রোল ঢেলে শিশু ও নারী হত্যা করতে উদ্যত হয় ঘাতক। রাজনীতির স্খলন আজ জনজীবনে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই আইনের শাসন, বিচারের সংস্কৃতি। সংশ্লিষ্টরা আর কত নির্বাক ও নীরব থাকবে। উচিত জনসচেতনা বাড়ানো ও বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ।
শীর্ষ সংবাদ: