ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় রাস্তা দখল করে ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

খুলনায় রাস্তা দখল করে ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে চলছে হরেক রকম ব্যবসা। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ এ সমস্যাটি নিরসনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। সিটি কর্পোরেশন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। রাজনীতিবিদরা নীরব। উন্নয়ন আন্দোলনের নেতারা দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন। জানা গেছে, খুলনা মহানগরী এলাকায় মোট ১২১৫টি সড়ক আছে। এর দৈর্ঘ্য মোট ৬৪০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ২০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথ আছে। ১০০ কিলোমিটার সড়কে কোন ফুটপাথ নেই। অনেক সড়কের দুই পাশে চার - পাঁচ ফুট চওড়া ফুটপাথ থাকেলেও তা দিয়ে পথচারীদের চলাচলের সুযোগ কম। ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, ওয়েস্ট মেকট রোড, যশোর রোড, স্যার ইকবাল রোড, সিমেট্রি রোডসহ শহরের প্রাণকেন্দ্রের সকল রাস্তা ও ফুটপাথ অবৈধ দখলে। হরেক রকম পণ্যের পসরা নিয়ে সেখানে বসে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এতে চলাচলের ক্ষেত্রে নগরিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নগরীর ঐতিহ্যবাহী বড় বাজারের রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ ওয়েস্ট মেকট রোডের ফুটপাথ সম্পূর্ণ ব্যবসায়ীদের দখলে। লম্বালম্বিভাবে এ রাস্তাটির দুই পাশে মুদিসহ বিভিন্ন পণ্যের অসংখ্য দোকান রয়েছে। জানা যায়, সিটি কর্পোরেশন এসব দোকান থেকে রাজস্ব নিয়ে তাদের বসতে বৈধতা দিয়েছে। এতে রাস্তার পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আড়াল হয়ে যাওয়ায় সেখানকার ব্যবসায়িক কার্যাক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মহেন্দ্র দাশের মোড়সহ বড় বাজার এলাকার গলিপথগুলোও অবৈধ দখলে। পিকচার প্যালেস মোড়, ডাক বাংলা মোড়, ক্লে রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশ ফুটপাত এবং রাস্তা তৈরি পোশাক, ফল, জুতা-স্যান্ডেল, খাদ্যসামগ্রীসহ হরেক রকম পণ্য বিক্রেতাদের দখলে। শেখপাড়া বাজার এলাকায় রাস্তাজুড়ে লৌহ সামগ্রির ব্যবসা, ডাকবাংলোর মোড় থেকে জোড়া গেট পর্যন্ত যশোর রোডের ফুটপাতে স্টিলের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা চলছে। ইসলামপুর রোড শান্তিধামের মোড় থেকে সাত রাস্তার মোড় হয়ে দোলখোলার দিকের রাস্তা-ফুটপাত অবৈধ দখলে। খানজাহান আলী রোডের ফেরিঘাট এলাকায় সেনিটারি পণ্য এবং একই রোডের রূপসা এলাকার ড্রেন-ফুটপাথ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, কাঠের ফার্ণিচার, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দখলে। কেডিএ এ্যাভিনিউর বিরাট একটি অংশজুড়ে প্রায় সারাক্ষণ অসংখ্য রেন্ট-এ কারের গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। পাওয়ার হাউস মোড় থেকে রেল স্টেশনের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি অঘোষিত ট্রাক টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশের ফুটপাথ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে মাসের পর মাস ইট, বালু, খোয়া রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর লোক রাস্তা ও ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইউনিয়নের নামে চাঁদা আদায় করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তৈরি পোশাক বিক্রেতা বলেন, ‘ফুটপাতের খোলা জায়গায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ব্যবসা করছি। প্রায়শই পুলিশের তাড়া খাচ্ছি। আবার ইউনিয়নের চাঁদা দিতে হয় দৈনিক ১০ টাকা করে। কখনও কখনও অন্য কর্মসূচীর নামে চাঁদা দিতে হয়’। আর এক দোকানী বলেন, ‘আমারা এভাবে রাস্তায় ফুটপাথে বসতে চাই না। নির্দিষ্ট স্থান পেলে আমরা সেখানেই চলে যেতে চাই। কিন্তু কেউ আমাদের জন্য ভাবেন না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ কলিমুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি)। কেএমপির আর এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে সিটি কর্পোরেশন সহযোগিতা চাইলে পুলিশ সহযোগিতা করে থাকে। মাঝে মধ্যে ফুটপাথ মুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পর মুহূর্তে আবার হকাররা ফুটপাতে বসে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে এ সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। এজন্য সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। দরকার হকারদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা স্থান।
×