ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এএসআই ইব্রাহিমের বৃদ্ধ মা-বাবা পাগলপ্রায়

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

এএসআই ইব্রাহিমের বৃদ্ধ মা-বাবা পাগলপ্রায়

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার বাড়িতে এখন শুধুই কান্নার রোল। জেলার কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। ঐ গ্রামের আব্দুস সত্তার মোল্লার ৫ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে নিহত ইব্রাহিম মোল্লা ছিলেন পঞ্চম। বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরে দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হন। গভীর রাতে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর পান তার বৃদ্ধ পিতা আব্দুস সত্তার। বাড়িতে কান্নাকাটি শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। নিহত ইব্রাহিমের সেজো বোন মনোয়ারা বেগম জানান, ঢাকায় দারুস সালাম থানার কাছেই ৪৮/৩ বর্ধবাড়ি এলাকার পাঁচতলার ভাড়া বাড়িতে দেড় বছর ধরে বাস করছিল ইব্রাহিম। বড় মেয়ে জান্নাতিকে এবার স্কুলে দিয়েছে। কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদানের পর বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকালে সাহসিকতা ও সততার জন্য ইব্রাহিম পরবর্তীতে এলিট ফোর্স র‌্যাবে প্রেষণে ছিলেন। দক্ষতা ও সততার কারণেই তিনি পরবর্তীতে এএসআই পদে উন্নীত হন। পুলিশে চাকরির পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে অসহায় মানুষের পাশে থেকে সামাজিক কর্মকা-েও অংশগ্রহণ করতেন। উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সত্তার মোল্লা হতবিহ্বল, নির্বাক হয়ে গেছেন। আর ইব্রাহিমের মা আছিয়া বেগম শুধু প্রলাপ বকছেন, আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁর প্রলাপ যেন শেষ হওয়ার নয়...। এদিকে, ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর সংবাদ শুনে শুক্রবার ভোর হতে না হতেই বাবার বাড়িতে ছুটে আসেন বড় ৪ বোন জাহানারা, আনোয়ারা, মনোয়ারা ও হোসনেয়ারা। তারা ভাইয়ের এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। বিধবা বড় বোন জাহানারা মায়ের সঙ্গে আহাজারি করে বলছেন, “ইব্রাহিম ছিল আমাদের পরিবারের আলো। সে বৃদ্ধা মা-বাবা আর অসহায় বোনদের দেখাশোনা করত। এখন কি হবে, ওর শিশু ছেলে-মেয়েরই বা কি হবে, ওরা কিভাবে বাঁচবে, ওগো কেডা মানুষ করবে... ওরে আল্লারে...।” সেই সঙ্গে অন্য স্বজনরাও সমানে কেঁদে চলেছেন। তাদের গগনবিদারী আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সেখানে ছুটে আসা এলাকাবাসীও কাঁদছেন। তাঁরা যেন সান্ত¡নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ২০০৩ সালে ইব্রাহীম মোল্লা চাকরিতে যোগদানের পর মা-বাবা ও অসচ্ছল বোনদের পরিবার দেখাশোনা করতেন। শুক্রবার সকালে ঐ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে আসংখ্য মানুষ। কে কি বলবেন যেন কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। আর টিনের ছাউনি দেয়া মাটির ঘরের বারান্দায় বয়োবৃদ্ধ কৃষক আব্দুস সত্তার ছেলে ইব্রাহীমের ছবি কোলে নিয়ে পরম ¯েœহে হাত বুলাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে বাঁধানো সেই ছবির ওপর চোখ গড়িয়ে দু’চার ফোঁটা পানি ঝরছে। কঠোর পরিশ্রম করে একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শেখান। গোটা পরিবারে সেই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন তার সব শেষ! সর্বশেষ গেল কোরবানির ঈদে স্ত্রী খায়রুন্নেছা আর ৬ বছরের মেয়ে জান্নাতি ও ২০ মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদকে নিয়ে ইব্রাহিম গ্রামের বাড়ি পালপাড়ায় এসেছিলেন। বাবা-মা, বোন ও স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে তার ঈদ আনন্দে কেটেছে। প্রতিবেশীরাও তাকে খুব ভালবাসতেন। প্রতিবেশী ইসহাক আলী বলেন, ‘ভাইজান (ইব্রাহিম) আমাগো সবাইকে ভালবাসতো, আমাগো উপকার করত।’ বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে গ্রামের কল্যাণে কাজ করতেন। সেই ইব্রাহিম এখন নেই, এমন কথা ভাবতেও পারছেন না ইব্রাহিমের বন্ধু, প্রতিবেশী বড় ভাই এবং মাহফুজা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম কুমার শীল।
×