ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়াকত হোসেন খোকন

অপরূপ বালি দ্বীপে কয়েক দিন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

অপরূপ বালি  দ্বীপে কয়েক দিন

আমারই এক বন্ধু ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে এসে বলল, ‘একবার দেখে আসো ইন্দোনেশিয়া, ওই দেশের রূপের যে নেই তুলনা। ওখানের বালি দ্বীপ আর জাভা দ্বীপে গেলে দু’নয়ন স্বার্থক হয়ে উঠবে।’ কথাগুলো শুনে ঠিক করলাম, ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণে বের হতে হবে, যত টাকা খরচ হোক না কেন যেতেই হবে। বিমানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হয়ে এলাম ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা হলেও বালি দ্বীপের প্রশংসা শুনে সেখানেই ছুটলাম সবার আগে। ওখানে গিয়ে উঠলাম টিউন হোটেল লেজিয়ানে। পৌঁছাতে রাত হয়ে যাওয়ায় বাইরে বের হলাম না আর। সকালে নাশতা করে গেস্ট রুমে বসে আছি। ওখানেই পরিচয় হলো একজন ইন্দোনেশিয়ান ভদ্রলোকের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ইন্দোনেশিয়ার সব দ্বীপের মধ্যে এই বালি দ্বীপটি পর্যটক মানচিত্রে বেশি উজ্জ্বল। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম সমুদ্রসৈকতের দিকে। এ জীবনে কত সমুদ্রই না দেখেছি, এমনটি বুঝি এই প্রথম দেখলাম। কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে সমুদ্রের কাছে এসে বসলাম। কাছে-দূরে, বহুদূরে যা দেখছি সবই যেন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই সমুদ্রসৈকতের নাম কুটা। এই বালি দ্বীপে আরও বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত আছে যেমনÑ লেগিয়ান, সেমি নায়ক, লুসুদুয়া। এই সমুদ্রসৈকতগুলোর ধারে রয়েছে অজস্র হোটেল। এই বালি দ্বীপের পশ্চিম সমুদ্র তটগুলো থেকে অপূর্ব সুন্দর সূর্যাস্তের দেখা মেলে। প্যাকেজ ট্যুরে এই বালি দ্বীপ ভ্রমণে বের হলেই মিলবে আনন্দ। পরদিন বের হলাম ট্যুর কোম্পানির প্যাকেজ ট্যুরে। এর জন্য ব্যয় করতে হলো পঞ্চাশ ডলার। বালি দ্বীপের কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ দেখানো হলো। গাইড বললেন, ইন্দোনেশিয়ায় বহু মুসলিম স্থাপত্য কীর্তির ছড়াছড়ি, তবে বালি দ্বীপে হিন্দু ধর্মের অসংখ্য কীর্তি রয়েছে। এমনটি কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার অন্য কোথাও নেই। চলুন এবার মন্দির দেখব। গাড়ি এসে রাখল একটি মন্দিরের কাছে। এই মন্দিরের নাম ‘উলান দালু’। এখান থেকে এবার এলাম বুয়ান লেকের কাছে। দেখলাম এর চারদিকে অরণ্য। একটু দূরেই পাহাড় আর পাহাড়। যে দিকে তাকাই দেখি, মনোরম দৃশ্য। কত না ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। বিকেলে নিয়ে এলো সমুদ্রসৈকতে। এখানে এসে যে দিকে তাকাই দেখি, সমুদ্রের কত না রূপ। মনে মনে ভাবলাম, ‘সমুদ্র হয়ে জš§ালে কত না ভাল হতো। কত লক্ষ-কোটি জনতার প্রিয় হতাম।’ গাইড সবার উদ্দেশে এবার বললেনÑ রামায়ণ ও মহাভারত বালির সংস্কৃতিতে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে, বিশেষ করে রামায়ণ। এখানকার বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী নৃত্যনাট্যে ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত গানেলান অর্কেস্ট্রার সুরের তালে তালে দেখা যায় বিচিত্র রঙের মুখোশ পরে শুভ আর অশুভের লড়াই। সন্ধ্যায় এমন এক জায়গায় নিয়ে যাব, দেখবেনÑ ওখানে গিয়ে বেশ আনন্দ-ফুর্তি করতে পারবেন। গাইডের মুখে এ কথাগুলো শুনে বেশ উৎফুল হলাম। একঘণ্টা সময় নিয়ে নৃত্যনাট্য কেমাক দেখলাম। ওখান থেকে আমাদের নিয়ে আসা হলো বালিনিজ নৃত্য দেখাতে। রেস্তরাঁয় ঢুকেই দেখি শুরু হয়ে গেছে বালিনিজ নৃত্য। অসাধারণ সেই নৃত্য। এরপর ফিরে গেলাম হোটেলে। সকালে গাইড এসে নিয়ে গেল বালির জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখাতে। এটি এখান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। ২০ জন ট্যুরিস্টের সঙ্গে আমিও চললাম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখতে। জায়গাটার নাম বাটুর। এর পর বাটুর সৌন্দর্য দেখে দু’নয়ন ভরে গেল। ফেরার পথে দেখলাম, বালির বিখ্যাত ধাপে ধাপে ধান চাষের খেত। বালি দ্বীপ দেখা শেষ করে এলাম যোগ জাকার্তা শহরে। দেখলাম, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট মেরাপি। আকাশ পরিষ্কার ছিল বলেই যোগ জাকার্তা শহরে বসে দেখলাম মাউন্ট মেরাপির অপরূপ সৌন্দর্য। শহর থেকে এই মাউন্ট মেরাপির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আরও দেখলাম সুলতান প্যালেস, মিউজিয়াম, পাখির বাজার। সবকিছু ছাড়িয়ে বালি দ্বীপের সৌন্দর্য আমাকে তখন অভিভূত করে রেখেছিল। এখনও মনে পড়ে বালি দ্বীপের অপরুপ স্মৃতি।
×