ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবদের প্রত্যক্ষ মদদে বাল্যবিয়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ

উলিপুরে দেড় মাসে ॥ অর্ধশত বাল্যবিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২২ অক্টোবর ২০১৫

উলিপুরে দেড় মাসে ॥ অর্ধশত বাল্যবিয়ে

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ দুবাই প্রবাসীর কন্যা বলে কথা। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীর বাল্যবিয়ের জন্য ১০ দিন আগে দাওয়াত কার্ড এলাকায় বিলি করা হয়। আমন্ত্রিত ছিলেন- ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, ইউপি সচিবসহ আত্মীয়স্বজনরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে পুলিশ বিয়েবাড়িতে যায়। কিন্তু মুহূর্তেই বাল্যবিয়ের আয়োজনকারী ইউপি সচিব পুলিশকে ম্যানেজ করে বিদায় করে দেন। এরপর নির্বিঘেœই জাঁকজমকপূর্ণভাবে ওই বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার খামার তবকপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী নুর ইসলামের শিশুকন্যা তবকপুর আবু বক্কর ফাজিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নুরিমা খাতুনের (১২) সঙ্গে একই ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের পুত্র আমিনুল ইসলামের (২৮) বিয়ে ঠিক হয়। প্রবাসীর আত্মীয় থেতরাই ইউপি সচিব গোলাম মোস্তফা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদার রহমান বকুল, ইউপি সদস্য হারুনর রশিদকে ম্যানেজ করে ভুয়া জন্মসনদ সংগ্রহ করেন। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গত রবিবার দুপুরে প্রবাসীর বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠানে যথারীতি হাজির হন চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ সকলেই। বিষয়টি উলিপুর নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এএইচএম জামেরী হাসানকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিশুকন্যাকে নিয়ে পিতা-মাতা সটকে পড়েন। ওই ইউপি সচিব কৌশলে নুরিমার ফুফাতো বোন জান্নাতিকে (বিবাহিতা) পাত্রী হিসেবে হাজির করে পুলিশের সামনে। তাকে আটক করে পুলিশ নিয়ে আসার চেষ্টা করলে জান্নাতি নিজেই পাত্রী নন বলে পুলিশকে জানালে বাল্যবিয়ের প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হয়। মুহূর্তে ওই ইউপি সচিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসআই সঞ্জয়কে ম্যানেজ করে মিথ্যা পরিচয় দানকারী জান্নাতিকে ছাড়িয়ে নেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহা ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। গত দেড় মাসের ব্যবধানে এ উপজেলায় প্রায় ৫০টিরও বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দলদলিয়া ইউনিয়নের নবম শ্রেণীর ছাত্রী শাপলা, দশম শ্রেণীর সেতু ও তামান্না, হাতিয়া ইউনিয়নের নবম শ্রেণীর সীমা, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শরিফা, ৮ম শ্রেণীর হাজেরা খাতুন ও জেসমিন, পান্ডুল ইউনিয়নের ১০ম শ্রেণীর কাকলি, বুড়বুড়ি ইউনিয়নের ১০ম শ্রেণীর শিউলি, থেতরাই ইউনিয়নের ১০ম শ্রেণীর জান্নাতি, উলিপুর পৌরসভার শেফালী বেগম ও ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী হেনা বেগম বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এসব বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য স্থানীয় একটি এনজিও ও সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে- সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ইউপি সচিবদের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব বাল্যবিয়ে অবাধে সম্পন্ন হচ্ছে। এমনকি প্রশাসন বাল্যবিয়ে বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলেও পরবর্তিতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অগোচরেই সম্পন্ন হচ্ছে এসব বাল্যবিয়ে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আরও অধিক বলে অনেকেই জানান। উলিপুর থানার এসআই সঞ্জয় কুমার আর্থিক সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এএইচএম জামেরী হাসান বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশ ওই বাল্যবিয়েটি ভেঙ্গে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করায় কোন পদক্ষেপ নেইনি।
×