ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পাহাড় চূড়ায় সাদা মেঘের মিতালী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২২ অক্টোবর ২০১৫

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পাহাড় চূড়ায় সাদা মেঘের মিতালী

মীর আব্দুল আলীম ॥ প্রকৃতির অনন্য দান নীলগিরি। যেখানে চলে যুগপৎ পাহাড় আর মেঘের মিতালী। যারা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন, নীলগিরি তাদের সে স্বপ্ন কিঞ্চিত হলেও পূরণ করতে পারে। বান্দরবানের নীলগিরিতে বেড়াতে এলে আপনার মনে হবে আপনি একেবারে আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। দ্রুত ধাবমান সাদা মেঘ যেন আপনা-আপনি আপনাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এমন অনুভূতি আপনাকে নীলগিরির চূঁড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রকৃতির অন্যতম আশ্চর্য বলে বগা লেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারি দেখতে পাওয়া যায়। একবার ঘুরে এলে যেখানে আবারও যেতে মন চাইবে। আকাশ-মেঘ যেখানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। যেন মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতির এমন বন্ধুত্ব যে কারও মন ভাল করে দেবে মুহূর্তে। মেঘ-পাহাড়ের বন্ধুত্বের পাশাপাশি আপনিও হতে পারেন মেঘের বন্ধু। এখানে বেড়াতে এলে মেঘ আপনাকে বন্ধু না বানিয়ে ছাড়বে না। বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট এই নীলগিরি। জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় এর অবস্থান। অল্প সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত পর্যটন স্পট নীলগিরি সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা পথে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা জীপ-মাইক্রোবাসে নীলগিরিতে যাওয়া যায়। দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে আকাশ নীলা, মেঘদূত ও নীলাতানা নামে তিনটি পর্যটকদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত তিনটি কটেজ। কটেজগুলো রাত যাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এখানে এক কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্ট। পাহাড়ী পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে আপনি পেটপুরে খেতে পারবেন। নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতি গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রুপাড়া। এলাকাটি পরিদর্শন করে মো: আদিবাসী সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন অনেক কিছু। নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। আপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখান থেকে সহজে উপভোগ করা যায় সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। এখান থেকে চোখে পড়ে বান্দরবানের ওপর দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল সাঙ্গু। তাকালেই মনে হবে সাঙ্গু আপনার খুব কাছাকাছি। আর সাঙ্গু নদীতে বয়ে চলা ছোট নৌকাগুলো দেখলে দূর থেকে মনে হবে স্বপ্নের ডিঙি নৌকা আপনি নিজেই বাইছেন সাঙ্গুর বুকে। নীলগিরির রাতের সৌন্দর্য আপনাকে হতবাক করবে। চারদিকের হরিণ ও শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ডাক শুনে আর পাহাড়গুলোয় আলো-আঁধারির খেলা দেখে জীবনটাকে আপনার কাছে রহস্যময় বলে মনে হবে। যারা এ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান। নীলগিরি যাওয়ার পথে দু’নয়নভরে আপনি দেখে যেতে পারবেন ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা বান্দরবানের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্য। এর পরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়া। স্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবান অঞ্চলের অবাক করা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। স্বপ্নচূড়ার পরই বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকে পৌঁছে যাবেন আপনি। চিম্বুকের সুনাম দেশব্যাপী। এখানে রয়েছে টিএ্যান্ডটির বিশাল টাওয়ার, উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে সকল সুবিধা সম্বলিত রেস্ট হাউস। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পুরনো একটি রেস্ট হাউসও রয়েছে এখানে। চিম্বুকে পৌঁছেই স্থানীয় আদিবাসীদের হাতের তৈরি এক কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে রওয়ানা দিতে পারেন নীলগিরির দিকে। অথবা এর একটু দূরেই রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন। এখানে আপনি সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার অথবা হালকা নাস্তা। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র অপার সম্ভাবনাময়। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সম্ভব সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। দ্রুততম সময়ে এটি পরিচিতিও লাভ করেছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছে এখানে। স্থানীয়দের ধারণা অদূর ভবিষ্যতে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এছাড়া, এ স্পট ঘিরে সরকারেরও রয়েছে নানা পরিকল্পনা। সরাসরি গাড়ি নিয়ে নীলগিরি চূড়ায় আরোহণ করা যায়। ফলে পাহাড়ী পথে কোন দুর্ঘটনার ভয় এখানে থাকে না...।
×