ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোশাক কারখানার শ্রমমান উন্নীত হওয়ায় আইএলও’র সন্তোষ

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২১ অক্টোবর ২০১৫

পোশাক কারখানার শ্রমমান উন্নীত হওয়ায় আইএলও’র সন্তোষ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমমান উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধি দল। তবে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আইএলওর চার সদস্যের প্রতিনিধি ঢাকা সফর করছে। প্রতিনিধি দল শনিবার ঢাকায় আসে। আইএলওর প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, শ্রম সচিব মিকাইল শিপার ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় আইএলওর প্রতিনিধির দলের নেতা জজ ক্যারন মোনাঘেন জানান, বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমমান পরিস্থিতি তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। পোশাক কারখানার নিরাপত্তার জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে কারখানার পরিবেশ উন্নয়নে এখনও আরও অনেক কিছু করার রয়েছে বলেও তারা জানান। পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আইএলওর সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ক্যারন মোনাঘেন। এছাড়া বাংলাদেশের পোশাকশিল্প খাতের মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মতামতও তুলে ধরেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠকে আইএলও প্রতিনিধি দলকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, গত দুই বছরে শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়ন, কারখানা পরিদর্শকের কার্যালয়ের জনবল বাড়ানো, কারখানাগুলোর নিরাপত্তা পরিদর্শন, অনিরাপদ কারখানা বন্ধসহ এ বিষয়ে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সেগুলোও তাদের জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের শ্রমমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও দাতাগোষ্ঠী। তারই অংশ হিসেবে আইএলও প্রতিনিধি দলটি ঢাকা সফরে এসেছে। রানা প্লাজা ধসের পর এখানে শ্রমমান উন্নীত হয়েছে কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করছে আইএলও। বাংলাদেশে রানা প্লাজার মতো আর কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেটাই চাইছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে আইএলওর বিভিন্ন সনদ বাংলাদেশ কতটুকু বাস্তবায়ন করছে সেটাও যাচাই করেছে প্রতিনিধি দলটি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে আইএলওর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেছিল। সে সময় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএলওর উপ-মহাপরিচালক গিলবার্ট হোং বোর। তখন ভবিষ্যতে সাভার ট্র্যাজেডির মতো দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ, পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিল আইএলও প্রতিনিধি দল। এবারের বাংলাদেশ সফরে সেসব পরামর্শের অগ্রগতিও পর্যবেক্ষণ করেছেন আইএলওর প্রতিনিধিরা। সূত্র জানায়, গত বছরের মে মাসে আইএলও সম্মেলনে শ্রমমান বিষয়ক সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অবস্থান দেখতে ডাইরেক্ট কন্টাক্টস মিশন (ডিসিএম) পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিল জেনেভার আইএলওর সদর দফতর। সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার শ্রমমান ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ডিসিএমের ঢাকা সফরের সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিনিধি দলটি তাদের সফর শেষে আইএলও সনদ অনুসরণ করে শ্রমমান ও কারখানার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেমন করছে সেটি উল্লেখ করে জেনেভায় একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। ঢাকা সফরকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কারখানা পরিদর্শক পরিদফতর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পোশাকশিল্প মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আইএলও মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে সংস্থার সনদ বাস্তবায়ন ও সুপারিশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ও আইনজীবী জজ ক্যারন মোনাঘেন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। চার দিনের সফর শেষে আজ বুধবার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকা ত্যাগ করবেন।
×