ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে একঘরে পরিবার

স্বামী প্রবাসে ॥ স্ত্রী সন্তানের নিরাপত্তা কে দেবে?

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২১ অক্টোবর ২০১৫

স্বামী প্রবাসে ॥ স্ত্রী সন্তানের নিরাপত্তা কে দেবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৯ অক্টোবর ॥ এক প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের বাইশকাইল আটাপাড়া গ্রামে। স্বামী বাবুল হোসেন সৌদি প্রবাসী। দুই শিশুপুত্র রকিবুল আর গোলাম রাব্বিকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকেন। সকালে ছেলেরা স্কুলে গেলে খোঁজখবর নেয়ার অছিলায় নির্জন বাড়িতে হাজির হয় পড়শি আব্দুস সাত্তারের বখাটে ছেলে শাহীন। নানা ছুতায় বেশ ক’বার কুপ্রস্তাবও দেয়। এতে প্রত্যাখ্যান করলে বখাটে শাহীন ক্ষুব্ধ হয়। গত ১২ মে শাহীন অনাহূতভাবে ঘরে ঢুকে বিছানায় অগোছালোভাবে বিশ্রামরত প্রবাসীর স্ত্রীর অশোভন ছবি নেয় মোবাইলে। শাহীন তাকে শিক্ষা দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরদিন ওই ছবি কম্পিউটারে সুপার ইম্পোজ করে তা পর্ণোতে রূপ দেয় শাহীন। এরপর গ্রামের ছেলেবুড়ো সবার মোবাইলে ব্লু-টুথের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় ওই ছবি। প্রবাসীর স্ত্রীর অভিযোগ, এর দু’দিন পর বখাটে শাহীন বাড়িতে এসে ভয় দেখায় লালসা পূরণের সুযোগ না দিলে ওই কথিত পর্ণো ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে। প্রবাসী স্বামীর কাছে ওই ছবি পাঠিয়ে তার ঘর ভেঙ্গে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক হলে শাহীন ও তার দলবল গত ১৪ মে প্রবাসীর স্ত্রীকে মারপিট করে। আহত প্রবাসীর স্ত্রী প্রতিকার পাওয়ার আশায় গোপালপুর থানায় অভিযোগ দিতে যান। থানার দারোগা উত্তম কুমার ভাট মামলা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। দু’দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে থানায় গিয়ে মামলা দিতে চাইলে থানার দুই দালাল দারোগা উত্তম কুমার ভাটের যোগসাজেশে আপোস রফার নামে মামলা করা থেকে কৌশলে প্রবাসীর স্ত্রীকে বিরত রাখে। এর দু’দিন পর ওই চক্র সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে বখাটে শাহীনকে সামান্য ভর্ৎসনা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়। ২৩ মে গভীর রাতে শাহীন তার দুই সঙ্গী একই গ্রামের মান্নানের ছেলে মমিনুর এবং হাসু মিয়ার পুত্র ময়নালের সহযোগিতায় ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে। দুই শিশু সন্তানের বুদ্ধিমত্তায় স্ত্রী প্রাণে রক্ষা পায়। থানার দারোগা উত্তম কুমার ভাটের কথা মনে রেখে প্রবাসীর স্ত্রী এবার প্রতিকারের আশায় ২৭ মে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা দেন। আদালতের হাকিম শরীফ উদ্দীন আহমেদ গত ১৪ জুন অভিযোগের সত্যতা নিরুপণে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য গোপালপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম খোসনবীশ তদন্ত শেষে ২৫ জুন আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ঘটনার রাতে শাহীন গংদের হাতে অসহায় প্রবাসী স্ত্রীর শ্লীলতাহানির নির্মম বর্ণনা দেয়া হয়। সম্প্রতি এ মামলায় জামিন পায় শাহীন গং। ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদ-উল-আযহার সময় গ্রামের ক’জন মাতব্বর ও ফতোয়াবাজের সহযোগিতায় চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে সামাজিকভাবে বয়কট বা আটক দেয়ার ঘোষণা দেয় শাহীন গং। ফলে ঈদ-উল-আযহার সময় কোরবানি দিতে দেয়া হয়নি। এরপরও শাহীনরা ক্ষান্ত হয়নি। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রবাসীর বাড়িতে দলবল নিয়ে তারা চড়াও হয়। মামলা তুলে না নিলে স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলেকে অপহরণ এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রবাসীর স্ত্রী জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে ৬ অক্টোবর গোপালপুর থানায় জিডি করেন। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। প্রবাসীর স্ত্রী ১২ অক্টোবর গোপালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুই সন্তান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি কামনা করেন। এ ব্যাপারে মামলার আসামি শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানায়, প্রবাসীর স্ত্রীর স্বভাবচরিত্র ভাল নয়। তাকে ভালভাবে চলার জন্য হেদায়েত করায় উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে। তার স্বভাবচরিত্র বিচার এবং হেদায়েত করার ক্ষমতা তাকে কে দিয়েছে? এমন প্রশ্ন করলে সে জানায়, গ্রামের ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব থেকেই সে এ কাজ করেছে। এ বিষয়ে গোপালপুর থানার ওসি (তদন্ত) জানান, ঘটনার খোঁজখবর নেয়ার জন্য ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য থানা পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
×