ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিফাত চৌধুরী

হিলারীর বিশ্বস্ত এক সহযোদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ অক্টোবর ২০১৫

হিলারীর বিশ্বস্ত এক সহযোদ্ধা

ডেভিড ব্রক একজন আমেরিকান সাংবাদিক এবং ‘মিডিয়া ম্যাটার্স ফর আমেরিকা’ নামক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। একদা তিনি দক্ষিণপন্থী শিবিরের ‘গুপ্তঘাতক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তখন ক্লিনটন দম্পতিকে ধ্বংস করার বিশাল ও ব্যাপক ষড়যন্ত্রের অংশেও পরিণত হয়েছিলেন। সেই মানুষটিই পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ বদলে গিয়ে এখন হিলারি ক্লিনটনের কট্টর সমর্থকে পরিণত হয়েছেন এবং আজ হিলারি শিবিরের ভিতর থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আঘাত হানার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে ব্রক হয়তবা তার অতীত কর্মের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছেন। মার্কিন কংগ্রেস ভবন থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে ডেভিড ব্রকের মিডিয়া ম্যাটার্স ফর আমেরিকার কার্যালয়। সেখানে প্রায় আড়াই শ’ তরুণ কর্মী নিয়োজিত যাদের কাছ হচ্ছে রিপাবলিকানদের দিকে বিষাক্ত তীর ছুড়ে মারা, সংবাদপত্র তাঁদের নিয়ে নানা ধরনের কাহিনী ফেঁদে বসা এবং বেলাইনে চলে যাওয়া প-িত ব্যক্তিদের শায়েস্তা করা। এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান আরও আছে যেগুলো হয়ত অন্য কোন দলের পক্ষে কাজ করছে। ৫৩ বছর বয়স্ক ব্রক যখন রক্ষণশীল শিবিরে ছিলেন তখন ডেমোক্রেট ও উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে অনেক অপকর্ম করেছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে ‘দি রিয়েন অনিতা হিল’ নামে একটা বই লিখেছিলেন যার পরিণতিতে পলা জোন্স বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা ঠুকে দেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর ইমপিচমেন্টের ক্ষেত্র তৈরি করে। এর তিন বছর পর ব্রক হিলারি ক্লিনটনের উপর কতকটা সহানুভূতিশীল জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করে রক্ষণশীলদের হতবাক করে দেন। এ সময় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় এবং তিনি বাম শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ‘ব্লাইন্ডেড বাই দ্য রাইট।’ সেখানে তিনি উদারপন্থীদের প্রতি যত রকমের অন্যায় অবিচার করেছেন সব স্বীকার করেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করে বসেন ‘মিডিয়া ম্যাটার্স ফর আমেরিকা’ যার কাজ হলো মার্কিন মিডিয়ায় রিপাবলিকানদের পরিবেশিত ভুল তথ্যাবলীর উপর নজরদারি করা এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে সংশোধন করা। ডেভিড ব্রক এখন কোমড়বেঁধে লেগেছেন হিলারির পক্ষে। তিনি অঙ্গীকার করেছেন, তিনি হিলারির পাশে দাঁড়িয়ে লড়বেন। তাঁর এই অঙ্গীকারকে বুঝতে হলে আমেরিকার আধুনিক রাজনৈতিকই তিহাসের অতি অদ্ভুত এক জটিলতাকে বুঝতে হবে যার কারণে ব্রক আজ ডেমোক্রেটিক দলের রাজনীতির অত্যন্ত শক্তিমান এক কুশীলবে পরিণত হয়েছেন। তাঁর বর্তমানের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে হিলারির প্রচারাভিযানের কৌশলসমূহের সমন্বয় করা, অর্থসংগ্রহ করা এবং ফেডারেল ডেমোক্রেটিক দলের ২০১৬ সালের যাবতীয় প্রচারাভিযানের উপর গবেষণা চালানো। গত এক দশকেরও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ব্রক ব্যক্তিগতভাবে ধনী উদারপন্থীদের কাছ থেকে ১৫ কোটি ডলারের বেশি সংগ্রহ করে নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটিয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানটিতে একটি গ্রুপ আছে যার কাজ হলো রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে নৈতিকতা বিষয়ক যাবতীয় অভিযোগ তুলে ধরা। তাছাড়া আরেকটি গ্রুপ আছে যারা ফক্স নিউজ এবং নিউইয়র্ক টাইমসের নির্দয় সমালোচনা চালিয়ে থাকে। ব্রক কখনও কোন রাজনৈতিক পদ ধারণ করেননি। তবে তাঁর মেধা যে অসাধারণ সে ব্যাপারে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে মেধাই যে কেবল আছে ব্রকের তা নয়। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও আছে। অনিতা হিল নিয়ে ব্রক যেসব মিথ্যাচার করেছিলেন তার জন্য ১৯৯৪ সালে বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনি। আত্মহত্যার মতো অবস্থাও হয়েছিল তাঁর। এ সময় হঠাৎ করে তার মাথায় একটা চিন্তা খেলে যায়। তিনি হিলারির জীবনী রচনায় হাত দেন। ওটাই তার মুক্তি এনে দিয়েছিল। সবার প্রত্যাশাকে ধূলিসাত করে দিয়ে তিনি এখানে যা দেখেছেন সেই সত্যই তুলে ধরেন এবং এই সাহসী মহিলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ব্রক বলেন, ‘হিলারির মধ্যেকার মানবতার সন্ধান করতে গিয়ে আমি ধীরে ধীরে নিজের মানবতার সন্ধান পেয়ে যাই।’ মনিকা কেলেঙ্কারি নিয়ে হোয়াইট হাউসে ঝড় ওঠার সময় ব্রক রক্ষণশীল এলিট শ্রেণীর সদস্য ছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি হিলারির চোখ কান হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্বাধীন প্রসিকিউটরের অফিস থেকে ফাঁস হওয়া তথ্যসহ বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যাবলী তাঁকে সবিস্তারে জানিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে হিলারি যখন দক্ষিণপন্থীদের সুবিশাল ষড়যন্ত্রের উপর এনবিসির টকশোতে বক্তব্য রাখছিলেন তখন ব্রকের দেয়া তথ্যই তাঁকে কামানের গোলা যুগিয়েছিল। আরও অনেক ভাবে হিলারির পাশে থেকেছেন ব্রক। তাঁর ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে রিপোর্ট বেরোলে সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে লিখনী ধরেছেন তিনি। একই বিষয়ে জেব বুশ হিলারির সমালোচনা করলে ব্রকের এক সহকারী জেনেশুনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে বুশের ফ্লোরিডা পাবলিক রেকর্ড আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে ফৌজদারী তদন্ত শুরুর দাবি জানান। বেনগাজী বিষয়ক হাউজ সিলেক্ট কমিটির প্রধান ট্রে গাউডি হিলারির ব্যক্তিগত সার্ভার দাবি করলে ব্রক তার জবাবে এক খোলা চিঠিতে গাউডিকে নিজের ব্যক্তিগত ই-মেইল জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহ্বান জানান। এইভাবে হিলারির উপর প্রতিটি আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন তিনি এবং এখনও তা চালিয়ে যাচ্ছেন। চূড়ান্ত নির্বাচনী প্রচারে এই বিশ্বস্ত মানুষটির সান্নিধ্য হিলারিকে নিঃসন্দেহে বাড়তি শক্তি যোগাবে। সূত্র : টাইম
×