ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখি

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২০ অক্টোবর ২০১৫

নিজের দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখি

বেশ কিছুদিন ধরেই মায়ের ওপর রাগ ঝাড়ছে রাতুল। কারণ একটাই বন্ধুদের সঙ্গে নৌভ্রমণে বাবার সম্মতি মেলাতে পারেনি। তাই মায়ের সঙ্গে রাগ করে ভাত না খাওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের বাহানায় মত্ত। কিন্তু তাতেও যেন বাবার মন গলছে না। কোনভাবেই রাতুল কে যেতে দিতে ইচ্ছুক নয় নৌভ্রমণে। দু’জনের মিডিয়াম্যান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে মা। তবে ফলাফল শূন্য। আর এমন দৃশ্য আমাদের পারিবারিক জীবনে প্রায়ই দেখা যায়। বাবা ছেলে কিংবা মা-মেয়ের দ্বন্দ্ব অনেক সময় বড় আকারও ধারণ করে। পারিবারিক ও সামাজিক আবহের কারণে আমাদের মানসিকতার তারতম্য ঘটে। প্রতিটি মানুষ নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার পাশাপাশি তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার ফলে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করে। একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দ-অপছন্দ তাই অন্যজন হতে ভিন্ন হয়। কিন্তু প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব জগত থাকে, মন্তব্য থাকে যা তার দৃষ্টিভঙ্গির আদলে তৈরি হয়। আমাদের নিজস্ব জগত সৃষ্টি হয় মূলত অভিজ্ঞতা এবং সে আলোকে কিছুটা অনুমানের মাধ্যমে। এ অনুমানের অনেকটা অন্যর মতামত প্রভাবিত হয়। আমরা যখনই কোন বিষয়ে অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করি, তখন সে আলোকে বিষয়টি কল্পনা করি। এ কল্পনা আমাদের মনোজগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ প্রভাবের ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণও মাঝে মাঝে ব্যাহত হয়। পরামর্শক সম্পর্কে অতি উৎসাহী হওয়া বোকামির শামিল। প্রত্যেক বিষয়ে একজন অন্যজন অপেক্ষা ভিন্নভাবে মুখোমুখি হয়। নিজের জন্য সিদ্ধান্ত অনেকেই নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে। একেক জনের ভাবনা চিন্তা একে রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি ব্যাপার একেকজনের কাছে একেক রকম। প্রাসঙ্গিকভাবে বলি, ইমরান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে। স্বাভাবিকভাবেই সে এ বিষয়ে তার একজন বড় ভাইয়ের কাছে পরামর্শ চায়। কিন্তু বড় ভাই সে বিষয়ে তাকে উৎসাহ না দিয়ে বরং ভর্তির ব্যাপারে মনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটান। এটি হয়ত একটি উদাহরণ, তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এমন দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। যার যার দৃষ্টিভঙ্গি সে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। নিজের ব্যর্থতা, অপূর্ণতার মাধ্যমে অন্যকে প্রভাবিত করতে চায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রমটিও লক্ষ্য করা যায়। যেমন- ঠিক একই বিষয় হয়ত অন্যজনকেও জিজ্ঞাসা করল ইমরান। ব্যাপারটিকে তিনি তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আদৌ বিষয়টি ইমরানের কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে তিনি ওয়াকিফহাল নন। তাই যে কোন বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রথমে যা দরকার তা হলো- বিষয়টির প্রতি নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ থেকে তবেই অগ্রসর হওয়া। পজেটিভ রেসপন্স দিয়ে যে কোন সমস্যা সমাধান করা উচিত। পথিকই পথ সৃষ্টি করে জীবনের এ মোড়ে এসে আমরা প্রত্যেকে দ্বিধাগ্রস্ত থাকি কোন্ পথে এগোব। বাবা-মা বলবেন এক পথ, বন্ধুরা চলবে অন্যদিকে, শিক্ষকরা চাইবেন ভিন্ন পথ। আসলে নিজের কী পথ বা ইচ্ছা তাই হলো মুখ্য। সে অনুযায়ী এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য প্রতিটি পথের ভবিষ্যত কি অনিশ্চিত হবে নাকি সুনিশ্চিত থাকবে- এ ব্যাপারে আমরা কেউ নিশ্চিত নই। প্রতিটি পথই বন্ধুর, কোন পথ মসৃণ নয়। জীবনের চলার পথে বাধা পেরুলে তবেই সাফল্য। তাই যে পথে এগোনোর পরিকল্পনা বা ইচ্ছা সে পথেই অগ্রসর হওয়া উচিত। প্রচ- ইচ্ছা শক্তিই সব বাধা দূর করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তবে নিজের পছন্দ করা পথে হাঁটার আগে সে বিষয়ে কোন এক্সপার্টের সহযোগিতা নেয়া ভাল। প্রয়োজনে পরামর্শদাতা এবং পরিবারের কর্তাব্যক্তির সমন্বয় ঘটানো যেতে পারে। এতে ফলাফল আশানুরূপ হবে। নিজের পথে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে। চলার পথের নায়ক পরিবার এবং সমাজে আমাদের এমন অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আছে যাদের আমরা আইডল হিসেবে গণ্য করি। দেখা যায় প্রতিটি বিষয়ে আমরা সেসব আইডলের মতাদর্শ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হই। কিন্তু একটিবারের জন্য ভেবে দেখি না আমি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, আমারও কিছু মতামত বা চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই যদি তাদের চিন্তা-ভাবনা আমাদের প্রভাবিত করে তবে নিজস্ব বলে আর কিছুই থাকবে না। সব কিছুতেই অন্যের মতামত এবং দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্ব পাবে। যদি সর্বক্ষেত্রে এ পরনির্ভরশীলতা থাকে তবে ভবিষ্যতে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তার চেয়ে ভাল সব বিষয়ে নিজের মতামত এবং দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। হয়ত প্রাথমিক সময়ে তা পূর্ণতা পাবে না, তবে নিকট ভবিষ্যতে তার ব্যাপ্তি ঘটবে সন্দেহ নেই। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির মানে হলো নিজস্ব চিন্তা বা বক্তব্য- যা অবশ্য স্বতন্ত্র এবং পৃথক। আমরা প্রত্যেকেই অন্যের চেয়ে ভিন্ন এবং এই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি তিনিই করতে পারেন, যিনি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেন।
×