ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসমর্পণের পথে এমএনপির শতাধিক সদস্য

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২০ অক্টোবর ২০১৫

আত্মসমর্পণের পথে এমএনপির শতাধিক সদস্য

এস বাসু দাশ, বান্দরবান থেকে ॥ পাহাড়ের আলোচিত সশস্ত্র সংগঠন ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) শতাধিক সদস্য আগামী ২২ তারিখের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনের পথ বেছে নিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর এটাই হবে সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার আলীকদম জোনে এই সংক্রান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান, আলীকদম জোনের উপ-অধিনায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অং প্রু ম্রো, মাং সাই প্রু, সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো এবং এমএনপির প্রতিনিধি হিসাবে স্থানীয় আরও চার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, শুক্রবার ওই বৈঠকে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) ৭০ সদস্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব সদস্যের কাছ থেকে ৬০টি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া ম্যাগাজিন ও বিপুলসংখ্যক গুলিও রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরও ৩০ জনের তালিকা প্রস্তুত করে শতাধিক সদস্য আলীকদমের কুরুকপাতা ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় ২০১১ সালে ম্রো আদিবাসী যুবকদের নিয়ে এমএনপি হয়। ও আধুনিক অস্ত্রসমৃদ্ধ হয়ে ২০১২ সালের দিকে আলীকদমের পোয়া মুহুরীতে ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত করে। পরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে জানান দেয়। উক্ত বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক এক সদস্য বলেন, বৈঠক হয়েছে, এখন সফল হলে পারলে সন্ত্রাস কমবে। আরও জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এমএনপির সদস্যরা। জেলার আলীকদমের কুরুকপাতার দুংখা এলাকার মাংপা ম্রো, প্রেন ওয়াই ম্রো, নিয়াদুই পাড়ার মেনরাও ম্রো, রেংসক পাড়ার রেংইন, সংএ পাড়ার পংঙি ম্রো, মারান পাড়ার ঙুই ক্রুম ম্রো, মাং অং ম্রো, কদনপাড়ার কদন ম্রো। থানছি উপজেলার চাকুপাড়ার মাং তং ম্রো, লাং পুং ম্রো, ওয়াকপাড়ার কৃতুই ম্রো, চাইয়াং পাড়ার বাশা ম্রো, অম্পুং পাড়ার হ্লা থোয়াই, অমই পাড়ার থংওয়াই ম্রো, বোডিংপাড়ার নংলাই ম্রো, রামুং ম্রো এবং লুহুপ ম্রো। লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নিওয়াকপাড়ার থংয়া ম্র্রো, মংহ্লাপাড়ার মইশা ম্র্রো,কাইওয়াই ম্রো, লুলেং হেডম্যান পাড়ার আম শে প্রে ম্র্রো, সড়ই ইউনিয়নের তাংলাই ম্র্রো এবং জেলার রুমা উপজেলার ফতেসিংপাড়ার কাইওয়াই ম্র্রোসহ অনেকে জড়িত সংগঠনটির সশস্ত্র কর্মকা-ে। এদের অধিকাংশ এবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। বৈঠকের কথা স্বীকার করে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান বলেন, এই ব্যাপারে করা হচ্ছে। আরও জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এমএনপির কর্মকা-, তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী ও ম্র্রো আদিবাসী জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্যোগ নেয়। জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের এমএনপি প্রধান মেনচিং ম্র্রো গ্রেফতার হওয়ার পর পালে ম্র্রো এই বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্র্রো এবং ৭ জুন সংগঠনটির প্রধান পালে ম্র্রো আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরী এলাকার পাহাড় ভাঙ্গা গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়। পালে ম্রো আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিল। এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, এই বিষয়ে আর্মির পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে শুনেছি, তবে তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানায়নি। ২০১২ সালে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের লাগাতার অভিযানে এই বাহিনীর ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়, আত্মসমর্পণ করে ৪২ জন। আলীদমের কুরুকপাতার দুংখা পাড়ার মেনসিং-এর ছেলে মেনরুম ম্র্রো এমএনপি’র সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে নতুন করে সশস্ত্র সংগঠনটিকে চাঙ্গা করছে।
×