ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ শুরু শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২০ অক্টোবর ২০১৫

আজ শুরু শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবল

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ এক সময় ফুটবল ছিল বাংলাদেশের এক নম্বর খেলা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নব্বই দশকের মাঝামাঝির পর থেকেই ফুটবলের চর্চার অভাব, এই খেলায় স্পন্সরের অভাব খেলাটাকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্কুল ও জেলা পর্যায়ে ফুটবল খেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা যায় হারিয়ে। অনেক নামকরা টুর্নামেন্ট বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক সময় ফুটবল হয়ে পড়ে শুধুই ঢাকা কেন্দ্রিক। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলার, জীবন্তু কিংবদন্তি কাজী মোঃ সালাহউদ্দিন। তিনি হাল ধরেই সচেষ্ট হন ফুটবলকে সারাবছর মাঠে রাখার এবং ফুটবলের প্রতি পৃষ্ঠপোষকদের আগ্রহী করে তোলার। দুটি কাজেই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এবার তার লক্ষ্য দেশব্যাপী ফুটবলকে সেই আগের মতোই ছড়িয়ে দেয়ার। স্কুল ফুটবল, জেলা ফুটবল লীগ হয়েছে। তবে এগুলো তো সবই স্থানীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট। এবার ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর প্রথম আসর। এতে দুটি গ্রুপে অংশ নিচ্ছে দেশ-বিদেশের আট ক্লাব। ‘বি’ গ্রুপের দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে প্রথমদিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড মুখোমুখি হবে ভারতের কলকাতার কিংফিশার ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের। উল্লেখ্য, একসময় চট্টগ্রামে জমজমাট ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। ১৯৮২ সালে এখানে ‘মেয়র কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আর কোন উল্লেখযোগ্য মানের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়া এবং আরও জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্য নিয়েই শেখ কামাল গোল্ডকাপ ফুটবলের আয়োজিত হচ্ছে। কে জিতবে আজকের আবাহনী-ইস্টবেঙ্গল দ্বৈরথে? চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমাদের এই দলটি গড়তে হয়েছে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে। ফলে প্রস্তুতিতে কিঞ্চিত ঘাটতি আছে। সেটা ফিটনেসে। তবে আন্তরিকতা নিয়ে এবং পরিশ্রম করে খেললে এই ঘাটতি দূর করা সম্ভব।’ নিজেদের ডেথ গ্রুপের দল হিসেবে মনে করে মানিক, ‘আমরা আছে ডেথ গ্রুপে। আমাদের লক্ষ্য এই গ্রুপের শীর্ষ দুটি দলের একটি হওয়া এবং সেমিফাইনাল খেলা। দর্শক সমর্থন আমাদের বাড়তি পাওনা। মাঠে যদি ইউনিটি হিসেবে পারফর্ম করতে পারি, আশা করি কাক্সিক্ষত গন্তব্যে উপনীত হতে পারব।’ প্রত্যাশার চাপটা কেমন অনুভূত হচ্ছে? ‘স্বাগতিক দল হিসেবে প্রত্যাশার চাপে নুব্জ্য বা ভীত নই। আমরা পেশাদার ও অভিজ্ঞ। শুরুটা করতে চাই জয় দিয়েই।’ মানিকের সাবলীল জবাব। আবাহনীর অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও ক্লাব পর্যায়ে এ ধরনের কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলিনি। এ আসরে ভাল রেজাল্টের জন্য আমরা সিরিয়াস।’ ইস্টবেঙ্গলের কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য। আদি নিবাস বাংলাদেশের ফরিদপুর। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছি। তবে এটা নির্ভর করবে আমরা কেমন খেলব, তার ওপর। আইএসএলে আমাদের ১৪-১৫ ফুটবলার খেলছে। তবে এ জন্য আমাদের শক্তি কমে যায়নি মোটেও। যারা আছে, তারা সবাই মানসম্পন্ন।’ এখানে আসার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে সেগুলোর একটিতেও হারেনি ইস্টবেঙ্গল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি এই আসরে না খেলায় বিশ্বজিৎ বিস্মিত ও হতাশা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্না একসময় ইস্টবেঙ্গলে খেলতে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের স্মৃতিচারণ, ‘ওই সময় আমি ইস্টবেঙ্গলে খেলতাম। আমি আহত থাকায় মুন্না আমারই পরিবর্তে দলে আসে তার অসাধারণ খেলা আজও চোখে ভাসে। তাছাড়া মুন্নার পরে আসলাম, কায়সার, বাবুল, আশিষরাও আমাদের এখানে এসে দারুণ খেলেছিল।’ ইস্টবেঙ্গলে দুজন বিদেশী ফুটবলার আছেন। একজন ডিফেন্ডার বেল্লো রাজেক। আরেকজন মিডফিল্ডার, দক্ষিণ কোরিয়ার ডো ডং হিউন। অধিনায়ক-ডিফেন্ডার দীপক কুমার ম-ল সম্প্রতি ভারতের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া পুরস্কার ‘খেলরতœ অর্জুন এ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ইস্টবেঙ্গল এই টুর্নামেন্টে অনেকদূর যাবে এবং সাফল্য নিয়ে ঘরে ফিরবে।’ এএফসির ক্লাব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৪ নম্বরে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থান। ভারতে এবং ভারতের বাইরে এ পর্যন্ত ১৩৬ শিরোপা অর্জন করেছে তারা। সে তুলনায় দেশে-বিদেশে সাফল্যের খাতায় কোন প্রাপ্তিই নেই চট্টগ্রাম আবাহনীর। এবার প্রিমিয়ার লীগে কোন মতে রেলিগেশন ঠেকিয়েছে তারা। শেখ রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ আরও কিছু দল থেকে ১২ জন যার মধ্যে জাতীয় দলেরই ৮ জন, সঙ্গে ৪ বিদেশীকে নিয়ে দারুণ এক দল গড়ে এখন মাঠের লড়াইয়ে নামার অপেক্ষায় আছেন মানিক। এই টুর্নামেন্টে টিকেটের মূল্য হচ্ছে গ্যালারি ৫০ এবং প্যাভিলিয়ন ১০০ টাকা করে। টিকেট বিক্রি শুরু হবে আজ খেলার দিন থেকেই। এই স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটে আবার ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ বছর পর। ২০১০ সালে এসএ গেমস ফুটবলে এই স্টেডিয়ামে সর্বশেষ কোন ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
×