ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ- উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ অক্টোবর ২০১৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ- উৎসবের আমেজ

হাসান ইমাম সাগর ॥ আজ ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঢল নেমেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। চারদিকে বাদ্যবাজনা আর খুশির আমেজ বইছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে পুরো ক্যাম্পাস যেন উৎসবের নগরী। বিভিন্ন রঙের বেলুন, ফেস্টুন আর বাতিতে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এ যেন এক অন্যরকম মিলনমেলা। এই দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন। উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি র‌্যালি শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে রায়সাহেব বাজার এবং ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ হবে। এতে ঘোড়ার গাড়িসহ ব্যান্ডদল অংশগ্রহণ করবে। এরপর বিজ্ঞান ভবন চত্বরে বেলা ১১টায় আলোচনা সভা এবং একই স্থানে দুপুর ১২টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজকের এইদিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তিত হয় বলে এই দিনটিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল একটি পাঠশালা। মাত্র ৪৮ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে দেড় শ’ বছরের পুরনো এ বিদ্যাপীঠে। বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে এটি ছিল উপমহাদেশের প্রাচীনতম কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা একটি কলেজ। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় বলে পরিগণিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা দিবস তো একটু জাঁকজমকভাবেই পালিত হবে! বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রার পর হাঁটিহাঁটি পা পা করে আজ ১১ বছরে পদার্পণ করল। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে আইএ, আইএসসি, বিএ (পাস) শ্রেণী ছাড়াও ইংরেজী, দর্শন ও সংস্কৃতিতে অনার্স এবং ইংরেজীতে মাস্টার্স চালু করা হলেও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় এই কলেজটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মত্যাগ করেন। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারীকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারী মর্যাদা লাভ করে। ২০০৫ সালে এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কখনও অস্বীকার করার মতো নয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ রফিকউদ্দিন (ভাষা শহীদ রফিক) আত্মত্যাগ করেন। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৬টির ৬ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে মিছিল-মিটিংয়ে প্রকম্পিত ছিল এই জগন্নাথের ক্যাম্পাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হলে এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা হরতাল পালন করে পুরান ঢাকায় গড়ে তোলে প্রতিবাদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ প্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষক ও ছাত্র অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর ও বর্তমান মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। যুদ্ধের পর ক্যাম্পাসে কয়েকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেলে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে সবচেয়ে বড় গণকবরটির ওপর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ’৭১-এর গণহত্যা নামে বাংলাদেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সকল বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। চলতি বছরে ছয়টি অনুষদে ২ হাজার ৭৬০ আসনের বিপরীতে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় আবেদন করেছেন। এই বিদ্যাপীঠটির শুরুতে ১২টি আবাসিক হল থাকলেও বর্তমানে দুইটি হল ছাড়া বাকি হলগুলো বেদখলে রয়েছে।
×