ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুজাহিদসহ সাকার রিভিউ আবেদন আজ চেম্বার জজে

শেষ সময়ে ৫ পাকিস্তানী সাক্ষী মানল সাকা চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ অক্টোবর ২০১৫

শেষ সময়ে ৫ পাকিস্তানী সাক্ষী মানল সাকা চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নিজস্ব বাহিনীর স্বঘোষিত ব্রিগেডিয়ার সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের দ্রুত শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আজ মঙ্গলবার চেম্বার জজে উপস্থাপন করা হতে পারে। সাকা ও মুজাহিদের পক্ষে রিভিউ আবেদন করার পর সরকার পক্ষ ১৫ অক্টোবর তা দ্রুত শুনানির জন্য চেম্বার জজে আবেদন করেন। এদিকে সাকার প্েক্ষ রিভিউ শুনানিতে সাক্ষ্য দেয়ার আবেদনে আবার নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাকার পক্ষে রিভিউ শুনানির সময় ৫ পাকিস্তানী নাগরিক ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক বিচারপতিসহ আটজনকে সাক্ষী দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ন্যায় বিচারের স্বার্থে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আটজন সাক্ষীর জবানবন্দী সুপ্রীমকোর্ট গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, এ আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের পরে। অর্থাৎ রিভিউ করতে সময় হচ্ছে ১৫দিন। কিন্তু সে সময় তো শেষ হয়ে গেছে। আবেদন করার সুযোগ নেই। এটা তামাদি হয়ে গেছে। বিচারের এ পর্যায়ে এসে এ ধরনের আবেদন ‘নজিরবিহীন’। রিভিউ আবেদন করার পর এই পর্যায়ে এসে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হলে অরাজকতা তৈরি হতে পারে। এটি আমলে নিলে প্রতিটি আসামি একের পর এক দরখাস্ত নিয়ে আসবে। সাফাই সাক্ষীর তালিকা ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানীসহ আটজনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন করেছেন। আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আবেদন করেছেন। সাকার আইনজীবী মোঃ হুজ্জাতুল ইসলাম আলফেসানী জানান, সোমবার সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের এই আবেদন জমা দেয়া হয়। যে আটজনের নামে সমন চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুননিসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মোহাম্মদ মিয়া সুমরো। বাকি তিনজন হলেন- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক কূটনীতিক এম ওসমান সিদ্দিক, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও তার মা জিনাত আরা বেগম। এর আগে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে যাদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছিল, তাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান ও বিচারপতি শামীম হাসনাইনের নামও ছিল। কিন্তু পরে সালমান এবং বিচারপতি শামীম হাসনাইন আর সাক্ষ্য দেননি। সালমানের বদলে সাবেক কূটনীতিক আব্দুল মোমেন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এছাড়া সাকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ এবং এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও তার খালাত ভাই কাইয়ুম রেজা চৌধুরীও সাক্ষ্য দেন। আর প্রথম সাফাই সাক্ষী ছিলেন সাকা নিজেই। এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে রিভিউর স্কোপটা খুবই কম। সাধারণত আদালতের কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকে। আর তিনি এ আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের পরে। অর্থাৎ রিভিউ করতে সময় হচ্ছে ১৫দিন। কিন্তু সে সময় তো শেষ হয়ে গেছে। এটা তামাদি হয়ে গেছে। এখন এ দরখাস্ত আমলে নিলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। বিচারের এ পর্যায়ে এসে এ ধরনের আবেদন ‘নজিরবিহীন’। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে বিদেশী পাঁচ নাগরিকসহ আট জনের সাক্ষী গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার এ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাটি বিচারিক আদালত (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে মৃত্যুদ- দিয়ে একই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাকার পক্ষ থেকে এর আগেও একই বিষয় নিয়ে সাফাই সাক্ষীতে এবং ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে পর্যালোচনা করে দুটি আদালতে বিষয়টিতে একই সিদ্ধান্ত দেয়ার পরে নতুন কোন এমন একটি দাবি এটা সঠিক না। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার জানা মতে রিভিউ পিটিশন দেখলেই মনে হয় যেআদালত একটি ভুল করেছেন। সাকার পক্ষ থেকে দুটি আদালতই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, একই যুক্তি আবারও তুলে ধরেছেন। তিনি আবারও বলেন, আমার মতে তারা ১৫ দিন পরে আবেদন করেছেন তা তামাদি হয়ে গেছে। এই সমস্ত আবেদন গ্রহণ করলে অরাজকতা হতে পারে। এইআবেদনগুলো ১৫ দিনের মধ্যেই করা উচিত ছিল। ট্রাইব্যুনালের আইন চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্টে সব রিটই খারিজ করে দিয়েছেন। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোঃ মুজাহিদের রিভিই আবেদনের ওপর যাতে শুনানির তারিখ ঠিক করা হয় তা শুনানি হতে পারে। খন্দকার মাহবুব হোসেন ॥ আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ন্যায় বিচারের স্বার্থে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আটজন সাক্ষীর জবানবন্দী সুপ্রীমকোর্ট গ্রহণ করতে পারে। প্রয়োজনে আপীল বিভাগ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এসব ব্যক্তির সমন দিয়ে এ ব্যাপারে (যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন) নিশ্চিত হতে পারে। এতে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে সাকা চৌধুরী বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ মিথ্যা ও বানোয়াট, জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাকা চৌধুরীর সুনির্দিষ্ট ডিফেন্স হচ্ছে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন না। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পূর্ব হতে ঢাকার নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার সুবাদে ধানম-ির পৈত্রিক ভবনে থাকতেন। এবং ২৯ মার্চ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসেন। পাঞ্জাব যাওয়ার সময় কাইউম রেজা চৌধুরী ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিজ গাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশী এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, যদি আদালত অনুমতি প্রদান করে তবে উপরোক্ত ব্যক্তিগণ তাদের এফিডেভিট প্রদত্ত বক্তব্যের ব্যাপারে বাংলাদেশে এসে সত্যতা নিশ্চিতের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
×