ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমা হল থেকে সিনেপ্লেক্স

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

সিনেমা হল থেকে সিনেপ্লেক্স

বাংলাদেশে সিনেমা হলের পথচলা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হলে গিয়ে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতেন। এলাকা-পাড়া-মহল্লায় দিনব্যাপী মাইকে চলত সেই সমস্ত চলচ্চিত্রের প্রচারণা। আর মানুষের এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি সিনেমা হল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে প্রথম সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে।, যা ‘ছবি হাউস’ নামে পরিচিত ছিল। এর পরেই পুরনো ধাকার আরমানিটোলা এলাকায় ‘সাবিস্তান’ নামে আরও একটি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপরে আরও ছোট-বড় সিনেমা হল তৈরি হয়। সে সময় সরকারী ছুটির দিনগুলোতে সকলেই নিজের পরিবার পরিজনদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। এখন আর সিনেমা হলগুলোর অবস্থা আর আগের মতো নেই। লোকসানে পড়ে অনেক হল মালিক তাদের সিনেমা হল বন্ধ করে দিয়ে গুদাম ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আশি বছর বয়সী সিনেমাপ্রেমী সেকান্দার আলী শোনালেন বাংলাদেশের সিনেমা হলের সোনালী এবং রুগ্ন দিনগুলোর কথা। তিনি বলেন, আমি যখন ২০ কি ২২ বছরের যুবক, তখন আরমানিটোলার ‘সাবিস্তান সিনেমা হলের যাত্রা শুরু হয়। সারাদিন কাজকর্ম সেরে এখানে আসতাম ৯-১২ টার নাইট শো দেখতে। সিনেমার প্রতি এক অন্যরকম ভালবাসা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার, ববিতা, সাবান, নায়ক রাজ্জাক, আজিম, সুচন্দা প্রমুখদের চলচ্চিত্র দেখার জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। ঢাকা-শহরে এখন সিনেমা হলের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাবিস্তান সিনেমা হলটি এখন গাড়ির গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক সিনেমা হল নাকি এখন মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে!!! হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা হলে এখনও সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে। স্টার সিনেপ্লেক্স’, বসুন্ধরা সিটি বাংলাদেশী সিনেমা হলগুলোর যখন বেহাল দশা, ঠিক তখনই বসুন্ধরা সিটির ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ একটি সাহসী পদক্ষেপের বহির্প্রকাশ। আদি সিনেমা হলের আধুনিকতার মিশেলে তৈরি এই সিনেপ্লেক্স। বাংলাদেশ আধুনিক সিনেমা হল প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ব চলচিত্রের সঙ্গে নিজের পরিচয় ঘটাল। ইংরেজী এবং বাংলা ছায়াছবি একইভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারায় মিশে আছে, থ্রিডি থিয়েটার হল প্রবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশেও সিনেমাগুলো হলসমৃদ্ধ হচ্ছে। ২০০২ সাল থেকে শুরু হয় ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ এর পথচলা। যাত্রার আদি লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত চলছে স্বগৌরবে। মর্নিং, ম্যাটিনী ১, ম্যাটিনী ২, ইভিনিং ১, এবং ইভিনিং ২- এই মোট পাঁচ বেলা ছবি প্রদর্শন করা হয়। প্রতি সপ্তাহে মুভি সিডিউল পরিবর্তিত হয়। এখানে বাংলাদেশের মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত সিনেমা এবং হলিউডের আলোচিত সিনেমা দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হয়। স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শক আসনের মোট ২টি শ্রেণী রয়েছে। শ্রেণীগুলো হলো- প্রিমিয়াম ও রেগুলার। শুক্রবার এবং শনিবার রেগুলার টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা (জনপ্রতি) এবং প্রিমিয়াম টিকিটের মূল্য ২৫০ টাকা (জনপ্রতি)। অন্যান্য দিনে বিকেল ৩টার মুভি শো এর রেগুলার টিকিটের মূল্য ১৬০ টাকা এবং প্রিমিয়াম টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা। বিকেল ৩টার পর রেগুলার টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা এবং প্রিমিয়াম টিকিটের মূল্য ২৫০ টাকা। টিকিট কাউন্টারগুলোতে প্রদর্শনীর ১ দিন পূর্বে টিকেটের অগ্রিম বুকিং দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সিনেপ্লেক্সটিতে মোট প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে ৪টি, যেগুলোর প্রত্যেকটির ধারণ ক্ষমতা ২৬২ জন। ভিআইপি সিটিং ও ডলবি এ্যাটমস সাউন্ড সিস্টেম ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আরও দুটি নতুন প্রেক্ষাগৃহ সংযোজন হতে যাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্সে। স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, দর্শকের রুচির পরিবর্তন করতে চাই। আর আমরা সারাদেশে আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহ তৈরির পরিকল্পনা করেছি ‘ব্লকবাস্টার সিনেমা’, যমুনা ফিউচার পার্ক রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কুড়িলে বিশ্বের তৃতীয় অভিজাত শপিং মল ‘যমুনা ফিউচার পার্ক’ অবস্থিত। যমুনা ফিউচার পার্কের লেভেল ফাইভে রয়েছে ‘ব্লকবাস্টার সিনেমা’ হল। এটিই দেশের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল। এটি একই সময়ে সাত ধরনের মুভি দেখাতে সক্ষম। যার ফলে সিনেমাপ্রেমীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে পছন্দের সিনেমাটি দেখে নিতে পারেন। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয় এই মাল্টিপ্লেক্সে উৎসব, ক্লাব রয়েল, ট্রানজিশন, এক্সপোজার, থ্রিল, মনটেজ ও আইরিশ নামের এই সাতটি হলো। এর মধ্যে ‘উৎসব’-এ সারা বছর চলে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র। অন্য হলগুলোতে বিভিন্ন সময় মুক্তি পাওয়া দেশী, বিদেশী, এ্যানিমেশন ও থ্রিডি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। তবে হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত এবং এক্সক্লুসিভ হচ্ছে ক্লাব রয়েল। এই সিনেমা হলে যারা সিনেমা দেখবেন তারা ভিআইপি আতিথেয়তা পাবেন। ক্লাব রয়েলে এক্সিকিউটিভ এবং বিজনেস নামক দুটি শ্রেণীর দর্শক আসন রয়েছে। এর টিকিট মূল্য যথাক্রমে ৬০০ এবং ১০০০ টাকা।অন্য সিনেমা হলগুলোতেও প্রিমিয়াম ও রেগুলার নামে দুটি দর্শক আসন রয়েছে। সপ্তাহের শুক্র-শনি এবং অন্যান্য দিন বিকেল ৩টার পরে রেগুলার টিকিটের মূল্য টুডি হলে ৪০০ টাকা। থ্রিডি হলে ৪৫০টাকা। প্রিমিয়াম টিকিটের ক্ষেত্রে টুডি হলের টিকিট মূল্য ৪৫০ টাকা। থ্রিডি হলে ৫০০ টাকা। অন্যান্য দিনে বিকেল ৩টার আগে মুভি শো এর রেগুলার টিকিটের মূল্য টুডি হলে ৩০০ টাকা। থ্রিডি হলে ৩৫০টাকা। প্রিমিয়াম টিকিটের মূল্য টুডি হলে ৩৫০ টাকা। থ্রিডি হলে ৪০০টাকা। সিনেমা প্রদর্শনীর দুদিন পূর্বেও অগ্রিম টিকিট বুকিং দেয়া যাবে। এছাড়া অনলাইনে টিকিট বুকিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে মর্নিং, ম্যাটিনী ১, ম্যাটিনী ২, ইভিনিং ১ এবং ইভিনিং ২ এই পাঁচটি শিফটে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ। তবে প্রতি সপ্তাহে মুভি সিডিউল পরিবর্তিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম ন্যান্সি প্রায় সময় সিনেপ্লেক্সে আসেন মুভি দেখতে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একই সময় বিভিন্ন সিনেমা প্রদর্শন, দেশী-বিদেশী সিনেমা দেখার সুযোগ, ডলবি সাউন্ড সিস্টেম, থ্রিডি স্ক্রীন, বিলাসবহুল বসার আসন এবং সব শেষে বড় কথা হলো মেয়েদের জন্য সিনেপ্লেক্সগুলো অনেক বেশি নিরাপদ হওয়ার কারণে মূলত আশা হয়। অন্য হলগুলোর তুলনায় সিনেপ্লেক্সগুলো মেয়েদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। সামনেই রয়েছে পুজোর ছুটি। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব অথবা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বিশ্বমানের এমন সিনেপ্লেক্স থেকে ঢুঁ মেরে আসলে খুব একটা মন্দ হয় না। নাসিফ শুভ
×