ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কট্টরপন্থীদের ইন্ধনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছে ধর্মীয় বিবাদে

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রদায়িকতার আগুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রদায়িকতার আগুন

হজের সময় মক্কার কাছে দুর্ঘটনায় ইরানের কয়েক শ’ হাজীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ইরানের শিয়া নেতৃত্ব এবং সৌদি আরবের সুন্নি শাসকের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ চলে। বাহরাইনে অস্ত্র পাঠানো এবং দেশটিতে সাম্প্রদায়িক বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে দেশটির সরকার। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠদের নির্যাতনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত বাহরাইন সরকার। এছাড়া সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ সৌদি আরবের কট্টরপন্থ’ী সুন্নি ধর্মীয় নেতাদের একটি গ্রুপ জিহাদের ডাক দিয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের প্রভাব বিস্তারের লড়াই, পারস্য উপসাগরীয় এলাকার শিয়া মসজিদগুলোতে চরমপন্থী হামলা এবং ধর্মীয় বিরোধ নিয়ে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলা সশস্ত্র সংঘাতসহ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘটা কিছু ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যকার মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে সহিংসতা বেড়ে তা সীমা অতিক্রম করা সত্ত্বেও জাতীয় ও ধর্মীয় নেতারা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। তারা অনুসারীদের আভাস-ইঙ্গিতে অথবা প্রকাশ্যেই সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে, যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ধর্মীয় বিবাদে রূপান্তরিত করছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে যে রক্তক্ষয় শুরু হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে প-িত ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের ইসাম ফারেস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র কর্মী রামি খৌরি বলেছেন, একটি নজিরবিহীন এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই। যখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ ধর্মের দিকে ঝোঁকে। আমরা এখন পরিবর্তনের এই ভয়ানক মুহূর্তে আছি, যেখানে মানুষের মনে বিরোধ অনেক বেশি। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র উগ্রপন্থীরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই সহিংসতা সৃষ্টি করছে এবং দায়িত্বহীন সরকারগুলো এটা ঘটতে দিচ্ছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীণ আগ্রাসন ও দখলের পর ইরাকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিপদ এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতীয়মান হচ্ছে। সিরিয়া যুদ্ধের ফলে গত কয়েক বছর ধরে এই উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। এদিকে, সুন্নি রাজতন্ত্রও যুদ্ধের জন্য তার জনগণকে উজ্জীবিত করলেও তারা সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত নয় বলেই মনে হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে সুন্নি চরমপন্থীরা পারস্য উপসাগরীয় এলাকার শিয়া মসজিদগুলোতে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। তারমধ্যে সর্বশেষ হলো, শুক্রবার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সাইহাতে শিয়া মুসলিমদের একটি বৈঠকে এক বন্দুকধারী গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করে। আরেকটি ভেদরেখা হলো, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থক রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, ইরান ও হিজবুল্লাহ, লেবাননের শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি গ্রুপ সালাফীদের প্রতিশোধের ডাক দেয়া। ৫৫ জন সালাফী নেতার স্বাক্ষর করা এক অনলাইন বিবৃতিতে তারা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যদি জিহাদীরা সিরিয়ায় হেরে যায় তাহলে একের পর এক সুন্নি দেশগুলোর পতন ঘটবে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের মিডিল ইস্ট সেন্টারের ভিজিটিং প্রফেসর মাদাবি আল রাশিদ বলেছেন, ওই বিবৃতির কঠোর সাম্প্রদায়িক সুর এই ঘোষণা তুলে ধরেছে যে, এই অঞ্চলের লড়াই এত কঠিন হবে যে তা নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। ব্রিটেনের চ্যাথাম হাউসের এ্যাসোসিয়েট ফেলো ও ‘আইএসআইএস : ইনসাইড দ্য আর্মি অব টেরর’-এর সহ-লেখক হাসান হাসান বলেন, রাশিয়ার সিরিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়া শুধু চরমপন্থীদের নয়, সুন্নিদের জন্যও যুদ্ধে জড়ো করার উপাদান হতে পারে। সাম্প্রতিক যন্ত্রণাদায়ক যুদ্ধ হচ্ছে ইয়েমেনে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সুন্নি দেশগুলোর জোট শিয়া নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গ্রুপ হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন এই জোট গঠিত হয়েছে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিহত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইয়েমেনকে যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান অশুভ পরিণতির মুখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অভাবে ইয়েমেনও সিরিয়া ও ইরাকের মতো দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বৈরুতের কার্নেগি মিডিল ইস্ট সেন্টারের ইয়েমেনী স্কলার ফারেয়া আল মুসলিমি বলেছেন, সেখানে কোন নেতৃত্ব, সরকার এবং রাষ্ট্র নেই। নেই কোন জাতীয় এজেন্ডা। আছে শুধু প্রচুর অস্ত্র। Ñনিউইয়র্ক টাইমস
×