ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার গোপালগঞ্জের শিশু গৃহকর্মীকে ঢাকায় নির্মম নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

এবার গোপালগঞ্জের শিশু গৃহকর্মীকে ঢাকায় নির্মম নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ, ১৮ অক্টোবর ॥ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের লিয়া নামে ১০ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সারাদিন গাধার খাটুনি আর সামান্য ভুলক্রটিতেই বেধড়ক মারধরসহ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা খেয়ে খেয়ে জর্জরিত তার শরীর। কথা বলার শক্তিও যেন তার নেই। লিয়ার বেহালদশায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে তার মাতা-পিতা। বিভিন্ন চাপের মুখে এখন তারা কঠিন সময় পার করছেন। অসুস্থ লিয়াকে হাসপাতাল থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে পরিবারের অভিযোগ। গত তিন দিন ধরে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডের বি-১৬ নম্বর বেডে ভর্তি লিয়ার সঙ্গে আলাপকালে সে সাংবাদিকদের জানায়, গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পর সেখানে কিছুদিন ভালই কাটে। এরপর তাকে একে একে বাসার সব কাজ করতে দেয়া হয়, যা সামলাতে সে হিমশিম খাচ্ছিল। একটু এদিক-সেদিক হলেই গৃহকর্ত্রী তিম্মী বেগম তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাত। ঘরের গুঁড়াদুধ খেয়ে ফেলত গৃহকর্তার বড় মেয়ে আর দোষ চাপাত তার ওপর। ভালমন্দ কিছু না জেনেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে মারধর শুরু করত তিম্মী বেগম। গুঁড়াদুধ চুরি করে খাওয়ার মিথ্যা অপবাদে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে তার সারা শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়িয়ে দিয়েছে ওই গৃহকর্ত্রী। মুখে গামছা বেঁধে তাকে মারধর করা হয়েছে। রুটি বানানো ব্যালন দিয়ে মুখের ওপর আঘাত করে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে ৪টি দাঁত। দিনের পর দিন এভাবে তার ওপর নির্যাতন দেখে পাশের বাসার এক মহিলা পুলিশে খবর দিলে ঢাকার খিলগাঁও থানা পুলিশ বাসায় গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে গৃহকর্তা নজরুল ইসলাম বুধবার গভীর রাতে তার শ্বশুর মোঃ সাহাবুদ্দিন মিনার বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ির লোকজন তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে আসে। লিয়ার বাবা মোঃ রহমান মিনা, মা মর্জিনা বেগম ও খালা কুলসুম বেগম বলেছেন, ছয় মাস আগে আমাদেরই প্রতিবেশী মোঃ সাহাবুদ্দিন মিনা ও তার স্ত্রী ঢাকার খিলগাঁওয়ে তাদের মেয়ের জামাইয়ের বাসার কাজের জন্য লিয়াকে নিয়ে যায়। ভেবেছিলাম সেখানে গিয়ে আমাদের মেয়ে ভাল থাকবে। কিন্তু যখন ফেরত পেলাম তখন লিয়ার শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে শুক্রবার সকালে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। মেয়ের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তারা আরও বলেন, মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই আমাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ আসছে। দায়সারাগোছের সালিশ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিষয়টি নিয়ে মোঃ সাহাবুদ্দিন মিনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিয়াকে তার মেয়ের জামাই নজরুল ইসলামের বাসায় কাজের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যে এসব ঘটনা ঘটেছে তা জানা ছিল না। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, তার মেয়ে তিম্মী যদি এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে সে অন্যায় করেছে। এ বিষয়ে গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইদ্রিস আলী ও সদর থানার ওসি মোঃ সেলিম রেজা জানিয়েছেন, বিষয়টি যেহেতু ঢাকায় বসে হয়েছে সেজন্য সঠিক বিচার পেতে হলে সেখানেই তাদের অভিযোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
×