ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেয়া নন্দী

টুকুর দুর্গাপুজো

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৫

টুকুর দুর্গাপুজো

বেশ কিছুদিন ধরেই ভোরবেলায় শিশির পড়ছে। টুকুদের বাড়িতে অনেক বড় একটা শিউলি গাছ। সকালে অজস্র ফুল পড়ে থাকে মাটিতে। টুকু ঘুম থেকে উঠেই এই ফুল কুড়াতে থাকে। খুব মিষ্টি গন্ধ। টুকুর খুব ভাল লাগে। চোখ মেলে আকাশ দেখে। দেখে সাদা মেঘের ভেলা। সামনেই পুজো। দুর্গাপুজা। সারাদিন কত জল্পনা-কল্পনা। নতুন জামা, বেড়াতে যাওয়া, কতগুলো পুজো দেখা হলো সেগুলো গুনে রাখা আরও কত কী। ওদের গ্রামে বেশ কয়েকটা পুজো হয়। টুকু সারাদিনই ওর ভাই দিপুকে নিয়ে এক প্যান্ডেল থেকে আরেক প্যান্ডেলে ছোটাছুটি করে। কিভাবে প্রতিমা বানানো হচ্ছে তা দেখে। কাশবনের পাশ দিয়ে ওরা হাঁটে আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে এবার পুজোতে কে কী করবে, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে, কী কী খাবে ইত্যাদি। ওরা প্রতি বছর পুজোর একটা দিন ওদের মামাবাড়িতে কাটায়। সেখানে ওদের মামার বাড়িতে নিজেরা খুব ধুমধাম করে পুজো করে। টুকুর বাবা শহরে চাকরি করে। পুজোর সময় ওরা পথচেয়ে বসে থাকে কবে বাবা আসবে নতুন জামা নিয়ে। রাতে ঘুম হয় না। ঘুমালেই স্বপ্ন দেখে নতুন জামা পরে সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। টুকু ওর বাবাকে ফোন করে বলছেÑ বাবা, এবার কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবে। অনেকগুলো নতুন জামা নিয়ে আসবে। তাড়াতাড়ি আসবে তো বাবা! নইলে কিন্তু আমি খুব রাগ করব তোমার সঙ্গে। কিন্তু আর কথা বলব না। বাবার খুব আদরের মেয়ে টুকু। বাবা মোটেই ওকে কষ্ট দিতে চায় না। কিন্তু ছুটি নেই। কিভাবে আসবে বাবা? এত বড় কথাটা তো এই ছোট্ট মেয়েটা বুঝবে না। বাবা ভাবছেÑ এবার না হয় ওদের শহরে নিয়ে আসা যাক। শহরের পুজো তো কোনদিন ওরা দেখেনি। টুকুর বাবা একদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামে গেল। যেতে যেতে রাত হয়ে গেছে। টুকু আর দিপু ঘুমাচ্ছে। পরদিন সকালে বাবাকে দেখে টুকুকে একলাফেই বাবার কোলে উঠে গেল। বাবা টুকু বলছেÑ টুকু এবার আমরা শহরে পুজো দেখব। যাবে তো আমার সঙ্গে! টুকু রাজি। মনে মনে কত কী ভাবছে ওরা। ওই দিন বিকেলে ওদের বাবা ওদের সবাইকে নিয়ে চলে এলো। টুকুর খুব আনন্দ হচ্ছে। ওরা বাসায় এসেছে। রাতে খেতে খেতে টুকু বাবাকে বলছেÑ বাবা, আমরা নতুন জামা কিনব না? বাবা মুচকি হাসল। কিনব বাবা, কালই যাব কিনতে। ঠিক আছে? বাবা বলল। দিপু আর টুকু খুব খুশি। অধিক উত্তেজনায় রাতে ঘুম হলো না। পরদিন বাবা অফিস থকে ফিরেছে বিকেলে। ওরা যাবার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে। ওদের সবাইকে নিয়ে বাবা শপিংমলে গেলেন। দুই ভাই-বোন চারটে করে জামা কিনল। আরও অনেক কিছু কিনল। বাড়ি ফিরেই ওরা জামাগুলো পরে দেখতে লাগল। আর মাত্র ক’টা দিন। তারপরই পুজো। টুকুর এক মামা থাকে ওখানে। তিনি টুকু আর দিপুকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেন। কত সুন্দর করে প্রতিমা বানানো হচ্ছে! কতকিছু দিয়ে সাজানো হচ্ছে। এত আয়োজন টুকু আগে কখনও দেখেনি। বাসায় ফিরে মায়ের কাছে কত গল্প করছে দু’ভাইবোন মিলে। ওদের মামাও ওদের জামা কিনে দিয়েছে। দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ঘুম থেকে উঠেই স্নান করে নতুন জামা পরে বসে আছে টুকু আর দিপু। ওদের বাড়ির সামনেই পুজো হচ্ছে। জানালার কাছে দাঁড়ালেই দেখা যায়। ওরা অঞ্জলি দিতে গেছে। এত আলোকসজ্জা, এত আয়োজন দেখে টুকু অবাক হয়ে গেল। অঞ্জলি দিয়ে বাসায় এলো। খুব খিদে পেয়েছে সবার। খেয়েদেয়ে আবার পুজো দেখতে বের হলো ওরা। এভাবে সারাদিন ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সারাদিন যা যা করেছে রাতে ওই সব নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখল। পরের দিন অষ্টমী। অষ্টমীর দিনটা আরও আনন্দে কাটল। এভাবে অষ্টমী, নবমী কেটে এবার দশমী। টুকুর মন খারাপ। পুজো শেষ। টুকুর মা বললেন, এ বছরের পুজো শেষ না হলে পরের বছর আবার কী করে পুজো আসবে? তুমি তো আর নতুন জামা পরে এত মজা করতে পারবে না। নতুন জামার কথা শুনে টুকুর মনটা আবার ভাল হয়ে গেল। ওরা ভাইবোন মিলে গুনে দেখল ওরা ৩০টি পুজো দেখেছে। খুব খুশি ওরা। এবার টুকু সবচেয়ে মজার পুজো কাটাবে। গুরুদয়াল সরকারী কলেজ কিশোরগঞ্জ
×