ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন;###;মিঠুসহ গ্রেফতারকৃত ২ আসামি তিন দিনের রিমান্ডে

বেশি সওয়াবের আশায় মিঠু একাই খিজির খানকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

বেশি সওয়াবের আশায় মিঠু একাই খিজির খানকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা খিজির খান হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণেই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি দল গলা কেটে হত্যা করে খিজির খানকে। খিজির খানকে গলা কেটে হত্যাকারী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে মিঠু (২৬) ও তার সহযোগী আলেক বেপারীকে (৪৮) গ্রেফতারের পর গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে এমনটাই জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। আসামিদের ৩ দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। বেশি সওয়াবের আশায় মিঠু একাই খিজির খানকে জবাই করে। গ্রেফতারকৃতরা পীর-দরবেশ, মাজারসেবক ও ফকিরদের হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব বলে মনে করে। তাদের হত্যা করে নিহতদের বাসা বাড়ি থেকে গণিমতের মাল হিসেবে দামি মালামাল লুট করে তা দলীয় তহবিলে জমার দেয়ার লক্ষ্যেই খিজির খানকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে খিজির খানের বাসা থেকে লুণ্ঠিত ২টি ল্যাপটপ, দুটি ক্যামেরাসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার হয়েছে। হত্যাকারীদের তালিকায় আরও একজন পীরের নাম রয়েছে। হত্যাকা-ে ৮ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬ জন সরাসরি বাড়িতে ঢুকে হত্যাকা- সংঘটিত করে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গত ৫ অক্টোবর রাত পৌনে ৮টায় রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার জ- ব্লকের ১০/১ নম্বর ৬ তলা নিজবাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত খানকা শরীফে খিজির খানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ব্যক্তি জীবনে খিজির খান নকশেবন্দিয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকতের ‘রহমতীয়া খানকা শরীফ’ এর ইমাম ছিলেন। হত্যার পর লাশ খানকা শরীফের অজুখানায় ফেলে রাখা হয়। মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গভীর রাতে ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, বিপিএম, পিপিএমের (বার) নির্দেশনায় এডিসি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এডিসি মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থেকে তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে মিঠু (২৬) এবং বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে আলেক বেপারী (৪৮) গ্রেফতার হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণেই খিজির খানকে জেএমবির একটি গ্রুপ হত্যা করে। এ গ্রুপটির নেতৃত্ব দেয় গ্রেফতারকৃত মিঠু। মূলত গ্রুপটির এক সময় নেতৃত্বে ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবির ৩ সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনার নেতৃত্বদানকারী জেএমবি সদস্য ফারুক। ফারুকের পর এ গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল জেএমবি সদস্য তাসনীম। সে গ্রেফতার হওয়ার পর মিঠু দায়িত্ব নেয়। জেএমবির তহবীলে অর্থের যোগান দিতে তারা ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- করে থাকে। মিঠু ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্য। মিঠু চট্টগ্রাম থেকে সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নিয়েছিল। ২০০৫ সালে গ্রেফতার হয়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করে। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে আবার জেএমবিতে যোগ দেয়। জেএমবিকে সাংগঠনিক ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করছিল। তারই অংশ হিসেবে খিজির খানকে তারা টার্গেট করে। হত্যাকা-ে ৮ জন অংশ নেয়। গ্রেফতারকৃত আলেক বেপারী মূলত চালক। ৬ হত্যাকারী সরাসরি খিজির খানের বাড়িতে ঢুকে। তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম ভাগে প্রথমে ২ জন যায়। পরে যায় আরও ৪ জন। আর অপর ২ জন বাড়ির বাইরে পাহারায় থাকে। একদল তিনতলায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে দুটি ল্যাপটপ, দুটি ক্যামেরা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। লুটের পর তারা দ্বিতীয় তলায় থাকা অপর দলের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর দু’তলায় খিজির খানের হাত পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা একে অপরকে চিনেন না বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন। তারা সাংকেতিক নামে একে অপরকে চেনেন। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন রামকৃষ্ণ (আর কে) মিশন রোডের বাড়িতে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও বিশ্ব ত্রাণকর্তা দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক (৫৫) ও তার ছেলে সানোয়ারুল ইসলাম মনির (৩০), বাড়িতে থাকা খাদেম মঞ্জুর আলম (২৮), মুজিবুল সরকার (৩২), শাহীন (২৪) ও রাসেল (৩৭) এবং ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের নিজবাড়িতে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের শান্তির পথে ও কাফেলা নামক ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুুরুল ইসলাম ফারুকীকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবির কতিপয় গ্রুপ ২ থেকে ৩ বছর ধরে এ ধরনের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম ও মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাহবুব আলম, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
×