ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘শেখ হাসিনা মা জননী, হামরা সবাই তার মুক্তিসেনার দল’

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

‘শেখ হাসিনা মা জননী, হামরা সবাই তার মুক্তিসেনার দল’

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’- এই ভাওয়াইয়া গান সকলেরই কমবেশি শোনা। বন্দরকে কেউ না চিনলেও এই গানের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের কুড়িগ্রাম কে না চেনে? আব্বাসউদ্দিনের গানটি যেমন কিংবদন্তি তেমনি ৬৮ বছরের বন্দীদশার জীবন থেকে বেরিয়ে আসা বিলুপ্ত সকল ছিটের মানুষজনও আজ কিংবদন্তি হয়ে উঠেছে। শুধু কুড়িগ্রামের দাসিয়াছড়া নয়, ১১১টি বিলুপ্ত ছিটের নব্য বাংলাদেশী নাগরিকরা বললেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলুপ্ত ছিটমহল সফরে এসে ছিটবাসীকে প্রস্ফুটিত ফুল আখ্যা দিয়ে কিংবদন্তি হয়ে ফুটে উঠলেন। তাই বিলুপ্ত ছিটের মানুষজন কিংবদন্তির- মা জননী আখ্যায়িত করলেন ঠিক এভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। খুব স্পষ্ট করেই বিলুপ্ত ছিটমহলো মানুষজন বললেন- ৬৮ বছর ছিলাম বন্দী জীবনে। মুজিব-ইন্দিরার সেই চুক্তি ধরেই শেখের বেটি আমাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। আমাদের কাছে শেখের বেটি শেখ হাসিনা কিংবদন্তি মা-জননী। হামরা সবাই তার মুক্তিসেনার দল। সদ্যবিলুপ্ত ছিটমহল নগর জিগাবাড়ির ৭০ বছরের আখতারুজ্জামান বললেন আটষট্টি বছর পর যখন বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি পেলাম তখন এটিকেই বড় পাওয়া মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি না, যা কোনদিন চিন্তা বা কল্পনা করতে পারিনি, সেটি না চাইতেই বেশি বেশি পেয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুত আসবে, স্কুল হবে, ছেলেমেয়েরা পড়তে পারবে, চিকিৎসা পাবে। এসব উন্নয়নে সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলে দ্রুতই সব হয়ে চলছে। শুধু কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া নয়, দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সদ্য বিলুপ্ত সকল ছিটমহলের মানুষের ভাগ্য, জীবন-মান। চিকন রাস্তা প্রশস্ত পাকা রাস্তায় পরিণত হচ্ছে। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুতের আলো। বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের নানা উন্নয়ন উদ্যোগের ফলে নতুন স্বপ্ন দেখছেন বিলুপ্ত ছিটের মানুষ। নতুন উদ্যমে পথ চলতে শুরু করেছেন তারা। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়নের আড়াই মাসের মধ্যে ছিটমহলবাসীরা নানা নাগরিক সেবা পেতে শুরু করেছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল বিলুপ্ত ছিটমহলের প্রতিটি ঘরকে বিদ্যুতায়ন করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। চালু হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। এ ছাড়া প্রতিটি ছিটে একটি করে ডিজিটাল সাব সেন্টার চালু করা হয়েছে। মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকা-ের মধ্যে রয়েছে- ইউনিয়ন পরিষদ নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, গভীর নলকূপ স্থাপন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন। এছাড়া ছিটমহলবাসীদের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নিরাপত্তার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। আনসার ও ভিডিপি বিভাগ ছিটমহলে মৌলিক ভিডিপি প্রশিক্ষণ দিয়েছে ও দিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে ক¤িপউটার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন যুবক ও যুব মহিলারা। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে বেকার যুবক ও যুব মহিলাকে ক¤িপউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটের কামাল আহমেদ বলেন, ৩১ জুলাই মধ্য রাতে চুক্তি কার্যকরের পর থেকে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে প্রতিদিনই যেন বদলে যাচ্ছে ছিটমহলের চেহারা। শুধু সরকারী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ছাত্র আশরাফুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় এতদিন আমাকে ভুয়া পরিচয় দিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এখন আর তা করতে হবে না। এখন আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক। ৬৮ বছরের ছিটমহলের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের মা-জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা বলছিলেন, আমাদের মা-জননী শেখ হাসিনার আগমনের কথা প্রচারের পর থেকে আনন্দে আমাদের রাতের ঘুম পর্যন্ত হারিয়ে গিয়েছিল। গত কয়েক দিনের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। সেই ১৯৪৯ সাল থেকে ৬৮ বছরের অপেক্ষার চেয়েও যেন দীর্ঘ সময় মনে হচ্ছিল। তাই কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের প্রধানমন্ত্রীর সফরে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় জেলায় থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলের অনেকেই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য। নীলফামারীর নগরজিগাবাড়ি গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি দাসিয়ারছড়া ছুটে গেছেন। তিনি বললেন, আমরা নাগরিক স্বীকৃতি পাব এটা কল্পনা করতে পারিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলেন এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে অতীত কষ্ট ভুলিয়ে দিলেন। আমরাও পেলাম উন্নত জীবন। প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ উন্নয়ন কাজের মানুষের উচ্ছ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুর সেই নৌকার জোয়ার আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছে জানিয়ে জয়নাল আবেদীন বললেন। শেখ হাসিনা আমাদের মা জননী বিলুপ্ত ছিটবাসীরা তার মুক্তিসেনার দল।
×